২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সময়-অসময়

মানবচরিত্র বনাম উন্নত জীবন

-

মানবজাতির কল্যাণ বা উপভোগের জন্য শুধু পৃথিবী নয় বরং সৃষ্টি করা হয়েছে বিশ্বজাহান। যুগে যুগে অসংখ্য মহাপুরুষের আগমন ঘটেছে মানবজাতিকে সতর্কবার্তা প্রদান করে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে মানুষকে পরিচালনার জন্য। কিন্তু মানবজাতি বার বারই ভুল পথে পা বাড়িয়ে সীমা লঙ্ঘন করেছে। তবে সীমা লঙ্ঘনের জন্য মানবজাতিকে অনেক মাশুল দিতে হয়েছে। ইতিহাস ও ধর্মগ্রন্থ সাক্ষ্য দেয় যে, করোনা (কোভিড-১৯) মহামারীর মতো, সৃষ্টিকর্তা ঘোষণা দিয়েই অনেক অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে মানবজাতিকে শতাব্দী অন্তর অন্তর শাস্তি দিয়েছেন। কুরআনের ভাষ্য মতে, ‘সৃষ্টিকর্তা হিসেব গ্রহণে তৎপর’। [সূরা আর রহমান, আয়াত-৩১ এবং সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৯৯ (শেষাংশ)] বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পৃথিবী তাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে, তারা চাঁদে যেতে পারেন, সমুদ্রের তলদেশের মাটির নিচে কী আছে তা বলতে পারেন; কিন্তু আশ্চর্য হয়ে যাই যখন চোখে দেখা যায় না, এমন ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র করোনাকে বিজ্ঞানীরা প্রতিরোধ করতে পারেন না। এসব দৃষ্টান্ত চিন্তা করার বিষয়। গভীরভাবে চিন্তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানবজাতি যত না শক্তিশালী তার চেয়ে বেশি অসহায় ও খুবই দুর্বল। এ জন্যই সৃষ্টিকর্তার নিদর্শন নিয়ে গভীরভাবে মনোনিবেশ করা দরকার। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘নিশ্চয় আকাশ মণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১৯১)
মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানবজাতি আনুগত্য প্রকাশ করবেÑ এটিই ধর্মের মর্মকথা, অন্য দিকে ‘নাস্তিক’, যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বই স্বীকার করে না, তাদের বিষয় আলাদা। নাস্তিকেরা অনেক সময় সমঅধিকার বা মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে নীতিকথা বলে থাকে; কিন্তু সৃষ্টি সম্পর্কে বা সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে যাদের জ্ঞান বা ধারণা নেই তাদের ভাবাবেগ ও মনগড়া কথা, যারা ধর্মপালনে শিথিল ও উদাসীন তারাও গ্রহণ বা সমর্থন করে না। কিন্তু ধর্ম যারা পালন করেন, তারাও কি সঠিক পথে অর্থাৎ মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন? ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে জিন ও মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের জন্য। এখন প্রশ্ন হলো ইবাদত বা উপাসনা কি শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? একজন মানুষের চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য বা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড বা চলার পথে তার বাহ্যিক ব্যবহার বা আচরণ কোন ধরনের হওয়া বাঞ্ছনীয়?
একজন মানুষ একজন মানুষের প্রতি কী ধরনের আচরণ করবে, স্বামী বা স্ত্রী তার জীবনসাথীর কাছ থেকে কী ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করেন, বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব কী? প্রতিবেশী বা স্বজাতি বা আত্মীয়স্বজনের প্রতি কী তার কর্তব্য? একজন মানুষ যখন একটি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের অংশীদার, তখন তার দায়িত্ব ও কর্তব্য কোন পর্যায়ে পড়ে, এগুলোর বিশ্লেষণের মাধ্যমেই চারিত্রিক গুণগত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়ে থাকে।
‘দায়িত্ব’ ও ‘কর্তব্য’ এ দু’টি শব্দের মধ্যেই একজন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মূলত সীমাবদ্ধ। অন্য দিকে একজন মানুষের নিজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, যা সে যদি সঠিকভাবে প্রতিপালন না করে তবে সে নিজেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বরং পরিবার, সমাজ ও জাতি বা রাষ্ট্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ জন্যই কুরআনের ভাষায় বলা হয়েছে যে, ‘নিজেকে চিনো’। নিজেকে চিনতে গিয়ে ফকির লালন গেয়েছেন ‘লালন মরল জল পিপাসায় থাকতে নদী মেঘনা।’ এসব অন্তর্নিহিত ভাবসম্প্রসারণ করলে বুঝা যায় যে, আমরা দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, চন্দ্র, সূর্য, সমগ্র ভূ ও নভোমণ্ডলকে নিয়ে যে গবেষণা করি, এর আগে নিজেকে নিয়ে গবেষণা করা দরকার। নিজেকে গড়ার মাধ্যমেই জাতিকে গড়ে তোলা যায়। ব্যক্তি নিজে যদি ‘মানুষ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে না পারে, সে ব্যক্তি দ্বারা পরিবার, সমাজ বা জাতি ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি নিজেকে কিছু দিতে পারে না, অর্থাৎ সত্য ও ন্যায়ের সন্ধান পায় না সে যত বড় ডিগ্রিধারী হোক বা তাকে যত মর্যাদার আসনে বসানো হোক না কেন তার দ্বারা সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার নগ্ন প্রমাণ স্বাস্থ্য খাতে বর্তমান করোনাকালে ঘটে যাওয়া অনৈতিক কর্মকাণ্ড। শুধু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই যাদের কোনো অভাব অনটন নাই তারাও চুরি করে, প্রতারণা করে, ঘুষ খেয়ে অবিচার করে, অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে অনধিকার চর্চা করে, মূলত এ ধরনের ব্যক্তিরা প্রতারণা করে সবার সাথে, এমনকি নিজের বিবেকের সাথেও।
ধনী-গরিব পাশাপাশি সবারই বসবাস, যদিও ধনীর চেয়ে গরিবের সংখ্যা অনেক বেশি। ধনী ব্যক্তিটি তার মেয়ের বিয়েতে গরিবদের আপ্যায়ন করার পরিবর্তে লাখ টাকার আলীশান গেট বানাচ্ছে, চোখ ধাঁধানো আলোক সজ্জা করছে, সারা রাত মাইক বাজিয়ে গায়ে হলুদের পার্টি করে প্রতিবেশীর ঘুম নষ্ট করছে, এসব যেন সবার গা সওয়া হয়ে গেছে, ফলে সমাজ বা বিবেকের এখন আর কেউ ধার ধারে না। ধনী ব্যক্তির আলিশান ডেকোরেটিভ গেট দেখে একজন কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার মনে কষ্টের ছায়াপাত হওয়ার বিষয়টি এখন আর কেউ উপলব্ধি করে না। ‘সমাজ’ যেন সমষ্টিগত চিন্তার পরিবর্তে ‘যার যার তার তার’ মনোভাব অবলম্বনে চলছে। প্রায়ই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গেটে দেখা যায়, লেখা আছেÑ ‘জ্ঞানের জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও’। ছাত্রদের আকৃষ্ট করার জন্য কোনো এক মনীষীর বাণীটি কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গেটেরই শোভাবর্ধন করছে। ছাত্রছাত্রীদের মন-মগজ কতটুকু আকৃষ্ট বা প্রভাবিত করতে পেরেছে? সম্প্রতি করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অমানবিক কর্মকাণ্ড, প্রতারণা, জাল সার্টিফিকেট প্রভৃতি সব ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া ‘শিক্ষিত ভদ্রসমাজ’ দ্বারা, যাদের মানুষ অত্যাধিক সম্মান করত তাদের মনভুলানো বক্তৃতা শুনে। দেশব্যাপী সব কারাগারের প্রধান গেটে লেখা রয়েছে ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ।’ বিভিন্ন সময়ে বার বার কারাগারের অভিজ্ঞতা থেকে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, দুর্নীতি, মাদক আগ্রাসনের প্রসারসহ কারাবাসীদের ওপর নির্যাতনের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হলো কারাগারগুলো। কারাগারের জেলারসহ কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে কারাগারে আটক ব্যক্তিদের শুধু শোষণই করেন না, বরং রীতিমতো নির্যাতন করে থাকে। দায়িত্ব নিয়েই বলছি যে, কারা রক্ষীরাই কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে মাদক সরবরাহ করে আসছে। কারা কর্মকর্তারা জেলখানায় নিজেদের ‘রাজা/বাদশা’ মনে করেন। তাদের মুখের কথাই আইন। কারা কর্মকর্তাদের বেআইনি চাহিদা পূরণ করতে না পারলেই বন্দীদের ওপর শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। এ জন্যই কারা আইন তথা জেল কোডের আশু সংস্কার হওয়া জরুরি।
‘মানবসভ্যতা ও পৃথিবী’ সম্পর্কে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুহু ‘জগৎ গুরু মুহাম্মদ সা:’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৩৬/৩৭) লিখেছেন যে, ‘পৃথিবীতে যে মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছে, তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যাই-ই হোক না কেন, তার পারিবারিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় সংগঠনের নির্মাণ ও পরিচালনা এই মানবজাতি ও তার পারিপার্শ্বিকতার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। আদিগন্ত এ সুন্দর সুকোমল পৃথিবীর সব দিকে প্রাকৃতিক পরিবেশে বিরাজমান সৌন্দর্যের মেলা এবং মানুষের মধ্যে উপস্থিত পূর্ণতাপ্রাপ্তির অপরিসীম সম্ভাবনার সম্মিলনে গঠিত হয়েছে এ মহান মানবসভ্যতা। এই দুইয়ের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্কে ভারসাম্য ও সুবিচারপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমেই সুন্দর, সমৃদ্ধিশালী ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠতে পারে, বিকশিত হতে পারে সুন্দর সভ্যতা এবং নিশ্চিত হতে পারে এর অগ্রগতি। অন্য দিকে ভোগ ব্যবহারের ভারসাম্যহীনতা সাজানো-গোছানো এ পৃথিবীকে রূপান্তরিত করতে পারে এক অশান্তির অঙ্গারে। এমনকি কেউ আছে এ সভ্যতাগর্বী বিশ্বে যে, এ সত্য কথাটি জানে না? তাহলে কেন এ অশান্তি, কেন এ সঙ্কীর্ণতা, কেন এ স্বার্থপরতা, কেন এ হানাহানি, কেন, কেন এ অহঙ্কারপূর্ণ ব্যবহার? অন্যকে ছোট করে নিজেকে বড় করে তোলার এই নিরন্তর প্রতিযোগিতা? এই জ্ঞান পাপীগণ দায়িত্বহীন এ ব্যবহার দ্বারা কতদিন এবং কতটুকু শান্তি পেয়েছে, আর কত দিনের জন্যই বা তারা বেশি বেশি পাওয়ার আশা রাখে? অন্যকে বঞ্চিত করে, মেরে ধরে সব কিছু হাতিয়ে নেয়ার
শয়তানি বাসনা যখন কাউকে পেয়ে বসে, তখন হিসাব-নিকাশ জ্ঞান খতম হয়ে যায় এবং তখনই সুন্দর এই মানুষটি জ্ঞানহারা ও মাতাল হয়ে সংহারে মেতে উঠে। এইভাবে সে খতম করে নিজেকে এবং খতম করে অন্যকে। তাই একটু ভেবে দেখুন: এই
প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্য থেকেই প্রাপ্ত বস্তুগত শক্তি, যা থেকে মানুষ শারীরিক ও মানসিক খাদ্য ও পুষ্টি লাভ করে, আর এ উপায় উপকরণের অধিকারী সভ্য জগৎ নিজের কৃতিত্বের কথা প্রচার করে এবং প্রাকৃতিক আকর্ষণীয় বস্তু থেকে প্রয়োজনীয় সব কিছু আহরণ
করে, কিন্তু আফসোস। তারা এসব নেয়ামত লাভ করে, রাব্বুল আলামীনের শোকরগুজারি করার পরিবর্তে বিলাসিতা ও নীতি-নৈতিকতাহীন আমোদ ফুর্তিতে আজ লিপ্ত হয়ে পড়েছে, অথচ এসব নেয়ামতকে আল্লাহপাকের দান হিসেবে স্বীকার করে যদি তারা তার সামনে আনুগত্যের মাথা নত করে দিত তাহলে তাদের চেষ্টা সাধনা এবং প্রাকৃতিক রহস্যাদি উদঘাটনের প্রয়াসসমূহ সবার কাছেই অতি উন্নত গুণাবলি হিসেবে স্বীকৃতি পেত এবং সারা দুনিয়াটা হয়ে যেত এক ফুল বাগিচা।’
দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধের মাধ্যমেই ব্যক্তির চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুটিত হয় এবং তা হয় অনেক কল্যাণকর। যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ‘মেরুদণ্ড’ শক্ত থাকে, তবেই তার ‘বিবেক’ কাজ করে, নতুবা দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে করতে হয় চাটুকারী বা গোলামি, ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ নিয়োগকর্তার ব্যক্তিগত চাকরে পরিণত হয়। ন্যায়-অন্যায় যাই হোক, নিয়োগকর্তার ইচ্ছার প্রতিফলন করাটাই হয়ে যায় তখন মুখ্য বিষয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাংবিধানিক পদ অর্থাৎ শপথ বাক্য পাঠ করে চাকরিরত ব্যক্তিরাও এর ব্যতিক্রম নন, বরং অন্যান্য রাষ্ট্রের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে এর ব্যতিক্রম রয়েছে, যার সংখ্যা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, যা মাইক্রোস্কোপে দেখতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলতে হয়, একটি ট্রাকশন প্রোগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশানকে এক সাংবাদিক বলেছিলেন যে, ‘আপনার ট্রাকশন তো সাপের মতো।’ প্রতিউত্তরে টি এন সেশান বলেছিলেন, ‘আমি সাপ হতে যাবো কেন? আমার তো মেরুদণ্ড আছে’ (জাতীয় পত্রিকা, ০৯/০২/২০১৭ ইং) সেশানের ‘মেরুদণ্ড’ শক্ত আছে বলেই বিতর্কহীনভাবে তিনি দীর্ঘদিন ১০০ কোটি মানুষ সমৃৃদ্ধ একটি রাষ্ট্রের (ভারত) নির্বাচন কমিশনের বিতর্কহীন নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রে তার উল্টো, মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনের কারণেই এ দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচনের অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে। ফলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য ‘মেরুদণ্ড’ একটি ফ্যাক্টর বটে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রি দিয়ে অর্জিত হয় না, বরং যা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এটা জন্মগত বিষয়।
ঠুনকো সম্মান ও ক্ষমতা পাওয়ায় অতিরিক্ত কামনা, বাসনা যখন একজন মানুষকে অন্ধ করে তোলে তখনই শুরু হয় তার চারিত্রিক পদস্খলন। তখন তার মনে ও কর্মে পরনিন্দা, পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যা কথা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা, হিংসা, অহঙ্কার প্রভৃতি মন্দ অভ্যাস অন্তরে স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধে। তখনই নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করে। যথা : (১) তিরস্কার, (২) ব্যঙ্গোক্তি, (৩) অবজ্ঞা, (৪) দাম্ভিকতা, (৫) অহঙ্কার, (৬) কটূক্তি, (৭) দম্ভোক্তি, (৮) কুৎসা, (৯) হিংসা বিদ্বেষ, (১০) ঘৃণা, (১১) তুচ্ছজ্ঞান, (১২) দূরাচার, (১৩) দুর্বৃত্তায়ন, (১৪) পাপিষ্টতা, (১৫) কদাচার, (১৬) দুর্বচন, (১৭) দুর্বাক, (১৮) দুরুক্তি, (১৯) দুর্মুখ, (২০) দুরভিসন্ধি, (২১) দৃঢ় বৃত্তায়ন, (২২) দুর্বিনীত হয়া, (২৩) দুর্বুদ্ধি, (২৪) দুর্ব্যবহার, (২৫) দুশ্চরিত্র ও (২৬) দুর্কষ্ট।
ক্ষমতাবান বা ধনী হওয়া এবং উন্নত জীবনের অধিকারী হওয়া এককথা নয়। যে ব্যক্তি অযাচিতভাবে ক্ষমতাবান বা ধনী হতে ইচ্ছা পোষণ করবেন তাকে অবশ্যই উপরিউক্ত এসব বদ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি উন্নত জীবনের অধিকারীতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় তাকে নিম্নবর্ণিত অভ্যাসগুলোতে মনোনিবেশ করতে হবে। যথা : (১) নিয়ত মৃত্যু চিন্তা, (২) জীবনের পূর্বাপর ভাবনা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, (৩) নিজ সম্পর্কে গবেষণা করা, (৪) অল্পে তুষ্ট থাকা, (৫) যেকোনো কথা বলা বা পদক্ষেপ নেয়ার আগে গভীর চিন্তা, (৬) অপরের জন্য যে চিন্তা বা সিদ্ধান্ত যা নিজের জন্য করা যায়, (৭) চিন্তাধারার পরিচ্ছন্নতা, (৮) স্বভাবে প্রশান্তি, (৯) মেজাজে ভারসাম্য, (১০) চরিত্রে পবিত্রতা, (১১) আচরণে সততা, (১২) ব্যবহারে নম্র্রতা, (১৩) লেনদেনে সততা, (১৪) কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, (১৫) অঙ্গীকারে দৃঢ়তা, (১৬) সামাজিক জীবনযাপনে সদাচার প্রভৃতি।
‘শিক্ষা’ মানুষকে আলোর পথ দেখায় বটে; কিন্তু ব্যক্তি যদি নিজে আলোচিত হওয়ার সদিচ্ছা মনে পোষণ না করে তবে সে আলোর সন্ধান পাবে না, বরং সে শিক্ষা তাকে উল্টো পথে ধাবিত করবে। উন্নত জীবনের বৈশিষ্ট্য লাভ করা অনেক সাধনার বিষয়। এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে নিজ ইচ্ছাশক্তির ওপরে। মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় ত্রুটি হচ্ছে, নিজের ত্রুটি নিজে না বুঝা, নিজের ত্রুটি নিজে শনাক্ত করতে না পারা। বিজ্ঞানী বলেছেন যে, Every action has positive re-action। সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, প্রতিটি মানুষ তার কর্মফল ভোগ করবে। ‘কর্মফল’ নির্ভর করে একজন মানুষের ‘কর্মের’ ওপরে। কিন্তু ‘লোভের’ প্রভাবে ‘কর্মফলের’ ব্যাপারে উদাসীন হওয়ার কারণে মানবজাতি আজ বিপথগামী; এর ব্যতিক্রম যা তা চোখে পড়ার মতো নয় বা নগণ্য।
লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail: taimuralamkhandaker@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement