১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার দুর্বলতা, সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়

-

আমরা যদি করোনার (কোভিড-১৯) দুর্বলতাগুলো যথার্থভাবে জানতে পারি তবে এর থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের করণীয় সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারব ইনশা আল্লাহ। বিগত ১৭ জুন, নয়া দিগন্তে ‘সংক্রমণ এড়াতে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (আমেরিকা) নির্দেশনা’ শীর্ষক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে করোনার দুর্বলতাগুলো তুলে ধরা হয়।
অকল্পনীয় ক্ষুদ্র চলৎশক্তিহীন করোনা মানুষের নাক, মুখ ও চোখ ছাড়া সুস্থ চামড়া ভেদ করে অন্য কোনো স্থান দিয়ে ঢুকতে পারে না। নিজেকে রক্ষা করার জন্য এর গায়ে আছে কল্পনাতীত পাতলা চর্বিজাতীয় আবরণ। গরমে এবং সাবানে চর্বি গলে যায়, এটাই হচ্ছে করোনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। ইন্টারনেটে করোনার হিট-টলারেন্স সম্পর্কে অনেক ভাইরাস বিশেষজ্ঞের মন্তব্য আছে। এর মাত্র তিনটি উদাহরণ দিচ্ছিÑডঐঙ-এর রিপোর্ট অনুসারে, মাত্রা ৫৬০ সে. তাপ সার্স করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে শুরু করে। জার্মান ভাইরোলজিস্ট থমাস পিটসম্যান বলেছেন করোনাভাইরাস তাপ সহ্য করতে পারে না। কারণ তাপ বাড়লে এটি ভেঙে যায়। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জন নিকোলাস বলেছেন সূর্যালোক, তাপ ও আর্দ্রতা করোনার খুবই অপছন্দনীয়।
আমার বন্ধু, আমেরিকার আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক এবং বর্তমানে সেখানে কেপ রিকো বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের ভাইরাসবিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের সাথে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের তাপ সহনশীলতা সম্পর্কে অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। সাধারণত ভাইরাস থেকে ফাঙ্গাস এবং ব্যাকটেরিয়া বেশি তাপ সহনশীল। ৫২০ সেন্টিগ্রেডে অনেক ফাঙ্গাস বা ছত্রাক নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং ৬০০ সেন্টিগ্রেডের কম তাপে অনেক ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। আমরা ৬০০ সেন্টিগ্রেডের কিছু বেশি উষ্ণ ভাপ নিতে পারি এবং ৫০০ থেকে ৫৫০ সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় পান করতে পারি। প্রথমে ইউটিউবে কয়েকজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর গরম ভাপ নেয়া, গরম পানীয় পান এবং গরম লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার বর্ণনা শুনেছিলাম। উল্লিখিত জ্ঞান এবং তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বর্ণনা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছিল। এরপর থেকেই আমার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের করোনা আক্রান্ত হলে এই চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিতে থাকি। এরপর নিজেসহ আমার পরিবারের ছয়জন, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ১০ জন এবং পরিচিতদের মধ্যে কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হই। আল্লাহ তায়ালার রহমতে গরম ভাপ নেয়া, গরম পানি খাওয়া এবং গরম লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করার মাধ্যমে সবাই সুস্থ হয়ে গেছে।
আমাদের মধ্যে যারা লক্ষণ দেখা দেয়ার পর উল্লিখিত চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করেছে এবং দৈনিক চার-পাঁচবার এর কম ভাপ নিয়েছে তাদের সুস্থ হতে দেরি এবং কষ্ট কিছুটা বেশি হয়েছে। আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যারাই বেশিবার ভাপ নিয়েছে এবং লক্ষণ দেখা দেয়ার পরপরই এটা করেছে তারা কোনো কষ্ট ছাড়া অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই সুস্থ হতে পেরেছে।
এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে, করোনা আক্রমণের শুরুতেই যদি সহনীয় গরম ভাপ নেয়া হয়, গলা ও নাকে বংশ বিস্তাররত করোনাভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং সংখ্যা বৃদ্ধির সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। করোনাভাইরাস প্রথম নাকে ও গলায় খুব দ্রুতগতিতে বংশ বিস্তার শুরু করে। এ কারণে করোনা টেস্টের জন্য স্যাম্পল নেয়া হয় নাক ও গলা থেকে।
তাই করোনাকালে আমাদের প্রত্যেকের উচিত খুবই সচেতনভাবে নিজের শরীরের অবস্থার প্রতি লক্ষ রাখা। করোনার লক্ষণ সাধারণ সর্দি জ্বরের লক্ষণের মতো বরং অনেকের ক্ষেত্রে লক্ষণ খুবই হালকাভাবে অনুভব করা হয়। আমরা সাধারণত কেউই খুব হালকা জ্বর, গা ও গলা ব্যথায় কোনো ওষুধ খাই না এবং ডাক্তারের কাছেও যাই না। কিন্তু এ লক্ষণ যদি করোনা সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে আর অবহেলা করে চার-পাঁচ দিন কেউ দেরি করে ফেলে, তবে মহাসর্বনাশ হয়ে যাবে। স্বল্পসময়ের মধ্যে লক্ষ-কোটি ভাইরাস সৃষ্টি হয়ে ফুসফুস সংক্রমিত হবে এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেবে।
আমরা জানি, বর্তমানে করোনার রিপোর্ট ছাড়া কোনো হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা যায় না। আর করোনা টেস্টের রিপোর্ট পেতে চার-পাঁচ দিন সময় লেগে যায়। গ্রামে, উপজেলায়, এমনকি জেলা শহরেও টেস্টের কোনো সুব্যবস্থা নেই। সুতরাং যে কেউ হালকা জ্বর, দুর্বলতা, কাশি, গলা বা শরীরে হালকা ব্যথা, নাকে গন্ধ না পাওয়া, খাওয়ার স্বাদ না লাগা প্রভৃতি অসুবিধা বোধ করলেই ধরে নেবেন, করোনা হয়েছে। তখন কালবিলম্ব না করে গরম ভাপ নেয়া, গরম পানি খাওয়া এবং গরম লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করা শুরু করে দেবেন।
বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন, কুসুম গরম বা সাধারণ গরম পানি নয় বরং নাকে ও গলায় সর্বোচ্চ সহনীয় গরম পানি নিতে হবে। করোনা না হয়ে অন্য যেকোনো কারণে লক্ষণ দেখা দিলেও গরম পানির ব্যবহার আপনার কোনো ক্ষতি করবে না বরং ব্যবহার করলে করুণাময় আল্লাহর রহমতে নিরাপদ হলেন।
আমরা সবাই জানি, করোনার কোনো ওষুধ নেই। আমাদের অভিজ্ঞ ডাক্তাররা করোনায় আক্রান্ত রোগীদেরকে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে রক্ষার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করার প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন যা সেবন করলে রোগীরা উপকৃত হয়ে থাকেন।
যেসব রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হবে (অর্থাৎ নিঃশ্বাস ছোট হয়ে আসবে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে না এবং নিঃশ্বাস ধরে রাখতে পারবে না, একটি বাক্য বলতে বারবার নিঃশ্বাস নিতে হবে); কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করার সুযোগ পাচ্ছেন না, অক্সিজেন দেয়ার কোনো ব্যবস্থা করা যাচ্ছে নাÑ এ রোগীদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেনÑ গরম পানির ভাপ দেয়া ও খাওয়ার পরিবর্তে নিম্নলিখিত মসলা দিয়ে পানীয় বানিয়ে ভাপ নেয়ার ব্যবস্থা করবেন এবং খাওয়াবেন। তিন গ্লাস পানিতে ১০টি লবঙ্গ, ১০টি এলাচ, ১০ টুকরা দারুচিনি, এক-দুই চামচ কালোজিরাÑ এগুলো থেঁতলে নিয়ে তার সাথে ১০ কোয়া রসুন ও দেড় ছটাক পরিমাণ আদা কুচি করে এবং একটি বড় লেবু ছোট টুকরা করে ৬-৭ মিনিট অল্প আঁচে সিদ্ধ করে নিতে হবে। দুই ঘণ্টা পরপর এ পানীয়ের সহনীয় গরম ভাপ নিতে হবে এবং ছেঁকে নেয়া এক কাপ গরম পানীয়ের মধ্যে এক চামচ মধু দিয়ে বারবার পান করতে হবে। পানীয় শেষ হলে আবার বানিয়ে নেবেন। আল্লাহর রহমতে রোগীর অবস্থার উন্নতি হবে।
এসব প্রতিটি উপাদান সব মানুষের জন্য খুবই উপকারী। যেকোনো আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথম থেকে এ পানীয়ের ভাপ নিলে এবং পান করলে বেশ উপকার পাবেন।
গরম পানি বা ভাপ নেয়ার সহজ পদ্ধতি
ক্যালেন্ডারের মোটা কাগজ দিয়ে এমনভাবে একটি চোঙ্গা বানাতে হবে যাতে এর বড় মুখ দিয়ে গরম পানির পাত্রের মুখ ঢাকা যায় এবং উপরের মুখ এমনভাবে কেটে নিতে হবে যেন তার মধ্যে নাক লাগিয়ে ভাপ টেনে মুখ দিয়ে গরম ভাপ বাইরে ফেলা যায়। এতে চোখ মুখের চামড়ায় গরম লেগে কষ্ট পাবে না।
রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যায় এ অবস্থায় অক্সিজেন স্যাচুরেশন বৃদ্ধির জন্য রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে দিতে হবে। এটাকে প্রন পজিশনিং বলে।
এতে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেলের অসাধারণ উন্নতি ঘটে। একটি অক্সিমিটার কিনতে বা জোগাড় করতে পারলে সহজে অক্সিজেন লেভেল মাপা যায়। অক্সিজেন লেভেল ৯৪ শতাংশ এর নিচে নামলে রোগীকে প্রন পজিশনে শুইয়ে দিতে হবে। এতে আল্লাহর রহমতে অক্সিজেন বেড়ে যায়।
আমার যে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলাম তা স্বাস্থ্য অধিদফতর, ডক্টরস ফোরাম এবং অন্যান্য সামাজিক সংগঠন জরিপ করে এর সত্যতা যাচাই করে দেখা বিশেষ প্রয়োজন। এতে করোনা চিকিৎসায় সঠিক সমাধান দেয়া সম্ভব হবে ইনশা আল্লাহ।
করোনাভাইরাস একজনের দেহে সংক্রমিত হলে, তার গলা ও নাকে কোটি কোটি করোনাভাইরাস সৃষ্টি হয়ে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই আক্রান্ত রোগী যখন গরম ভাপ নিতে শুরু করে তখন ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং বংশবিস্তারের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাহলে সুস্থ ব্যক্তিরা যদি দিনে দু-তিনবার সহনীয় উষ্ণ ভাপ নেন তাহলে তাদের শরীরে করোনা সংক্রমিত হয়ে কোনো প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে কি? গরম ভাপের কারণে অঙ্কুরেই সে করোনা নিস্ক্রিয় হয়ে যাবে নিশ্চয়ই। তাই অভিজ্ঞতা এবং প্রাপ্ত তথ্যের সমন্বয়ে আমরা বিশ্বাস করি গরম পানির ভাপ নেয়া করোনা চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
লেখক : সাবেক অধ্যাপক, ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


আরো সংবাদ



premium cement