২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ : নৈতিক উপলব্ধি

-

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে প্রথম মহামারী কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হয়েছে। ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলে এই অতিক্ষুদ্র অণুজীব ঢুকে পড়েছে এবং দোর্দণ্ড প্রতাপে ও অবাধে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এত ব্যাপক প্রাদুর্ভাব নিয়ে কোনো ভাইরাসের আগে পৃথিবীতে বিস্তার ঘটেনি। বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম প্রাণঘাতী করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় এবং প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ, ২০২০। এ পর্যন্ত (১২ জুলাই, ২০২০) বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ২৫ লক্ষাধিক এবং করোনা মহামারীতে বিশ্বে মৃত্যুবরণ করেছে পাঁচ লাখ ৬০ হাজারের অধিক মানুষ। এখন পর্যন্ত এ বৈশ্বিক মহামারীর সর্বসম্মত কোনো চরিত্র ও প্রতিষেধক টিকা ও ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। ফলে মানবজাতি অতিশয় আতঙ্কগ্রস্ত এবং মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
মানুষের আবাসভূমি এই পৃথিবীতে লাখ লাখ ভাইরাস ও জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে। মানবদেহের অভ্যন্তরেও রয়েছে অগণিত ভাইরাস। এগুলোর মধ্যে কিছু আছে প্রাণঘাতী, রয়েছে মানুষের জন্য উপকারী ভাইরাসও যাদের অনেকগুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না এবং কোনো কোনোটি আবিষ্কারও করা সম্ভব হয়নি।
আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার মালিকের (বিশাল) বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।’ (সূরা আল মুদ্দাসসির, আয়াত : ৩১) আল্লাহই এদের নিয়ন্ত্রণ করেন। জলে-স্থলে, আসমান-জমিনের সব কিছুই মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালার একক কর্তৃত্বে পরিচালিত। তিনি পৃথিবীর কিছু জিনিস মানুষের ব্যবহারের জন্য এদের নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন। কিন্তু এরা সবাই তাঁর অনুগত বাহিনী। প্রতিটি অণু-পরমাণুর ওপর রয়েছে কেবল আল্লাহর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’। (সূরা আল ফাৎহ, আয়াত : ৭)
মানুষের হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। সুস্পষ্ট উপদেশ স্বরূপ কুরআন নাজিল করেছেন। প্রকৃত আলেম বা ‘ওয়ারিছাতুল আম্বিয়ারা’ অসৎ, অপকর্ম, পাপ থেকে পরিচ্ছন্ন হয়ে সুশীল, পরিশুদ্ধ ও কল্যাণকর জীবনযাপন করার জন্য উপদেশ দিচ্ছেন। এত কিছুর পরও যখন মানুষ অন্যায় করে, অশ্লীলতা ছড়ায়, ব্যভিচার এবং জুলুম-নির্যাতন করে, জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ বাধায়, অন্যের অধিকার হরণ করে খোদাদ্রোহী হয়ে জলে-স্থলে বিভিন্ন বিপর্যয় সৃষ্টি করে নৈতিক অবক্ষয়ের অতল গহবরে নিমজ্জিত হয়, তখনই আল্লাহ বিভিন্ন জাতিকে সতর্ক করে দেন, বিপদ মুসিবত দেন, মহামারী দিয়ে তাদের বিপর্যস্ত করেন। সেই আদিকাল থেকে প্লেগ, ব্ল্যাক ডেথ, স্মল পক্স, গ্রেট প্লেগ, কলেরা, ম্যালেরিয়া, পীতজ্বর, গুটিবসন্ত, স্প্যানিশ ফ্লু, সার্স, সোয়াইন ফ্লু, জিকা ভাইরাস, ইবোলা, বর্তমানে কোভিড-১৯, এভাবে বিভিন্ন শতাব্দীতে কোনো না কোনো মহামারী ছিল ও আছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি লক্ষ করে না যে, তারা প্রতি বছর একবার অথবা দুইবার কোনো না কোনো বিপদে পতিত হয়? তবুও তারা তাওবা করে না, আর না তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ সূরা আত তাওবা, আয়াত : ১২৬। আদ, সামুদ, বনি ইসরাইল ও ফেরাউনসহ বিভিন্ন জাতির ওপর আল্লাহ কী ধরনের বিপদ মুসিবত নাজিল করেছেন, ইতিহাস তার সাক্ষী। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আমি তাদের ওপর ঝড়-তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্তপাতজনিত বিপর্যয় পাঠালাম, এসবই সুস্পষ্ট নিদর্শন; কিন্তু অহঙ্কার বড়াই করতে থাকল, আসলেই তারা ছিল অপরাধী জাতি।’ সূরা আল আ’রাফ, আয়াত : ১৩৩। এসব বিপর্যয়ের হয়তো কিছু প্রাকৃতিক কারণ ও ব্যাখ্যা থাকে। কিন্তু নৈতিক অনুভূতি হচ্ছে এগুলো আল্লাহর অবাধ্যতার পুরস্কার। এটি অত্যুক্তি হবে না যে, আজ বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনার যে সংক্রমণসহ বিভিন্ন বিপর্যয় সবই মানুষের কুকর্মের ফল এবং সর্বনাশা অপরাধের অনিবার্য পরিণতি।
জ্ঞানবুদ্ধির দিক থেকে মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে উৎকৃষ্ট। মানুষ বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শুধু মনুষ্য সমাজেই নয়, জীবজন্তু ও প্রকৃতিতেও বিভিন্ন বিপর্যয় সংঘটিত করছে। পাহাড় কেটে ও নদীতে অবৈধ বাঁধ দিয়ে প্রকৃতি ধ্বংস ও বিপন্ন করছে। প্রাণঘাতী রাসায়নিক বর্জ্য ফেলে পানি দূষিত করছে। পশুপাখির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে। সুন্দরবন ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। বিশ্বের বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট আমাজন পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়েছে কোটি কোটি গাছপালা ও প্রাণীকুল। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের ০৫.৮ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমিতে আগুন লাগানো হয়েছে। এভাবে বনভূমি উজাড় করে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে বায়ুমণ্ডলের নিরাপত্তা স্তর ধ্বংস করছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় ডেকে আনছে। নিছক অর্থনৈতিক স্বার্থে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। খাদ্যে ভেজাল মেশানো, ফরমালিনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ, পণ্যসামগ্রী নকল করা প্রভৃতি তো আছেই। করোনার সঙ্কট মুহূর্তেও অসাধু চক্র নকল সনদ, পরীক্ষায় জালিয়াতি এবং অক্সিজেন, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর মূল্য অনৈতিকভাবে বৃদ্ধি করে দুর্ভোগ বৃদ্ধি করছে। এভাবে মানুষ নিজেকে কলুষিত এবং মাটি, পানি, বায়ু ও এর অভ্যন্তরের সব কিছু দূষিত ও জনপদকে শ্বাপদ-সঙ্কুল করছে। আজ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের চরিত্র ও কর্ম প্রাণীকুলের থেকেও অধম। আর শাসকরা কেউ কেউ হালাকু খান, চেঙ্গিস বা হিটলারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কিছু দিন আগে মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবন্ত পুড়িয়ে, হাত-পা কেটে মেরেছে। ওদের ঘরছাড়া করে নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছে, দেশ ছাড়া করেছে। কাশ্মিরে সন্তানদের সামনে গণহারে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে মহিলাদের। দীর্ঘ দিন ঘরে লকডাউন করে নির্যাতন করা হয়েছে। বিশ্ব কি এসবের প্রতিবাদ করেছে? শুধু অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রতিপক্ষকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য কত কুকামই না করা হয়। আজ অত্যাচারের কাছে ন্যায়বিচার বশীভূত। তেমনি দয়া নিষ্ঠুরতার কাছে, সততা দুর্নীতির কাছে আর জ্ঞানবুদ্ধি মূর্খতার কাছে পরাভূত হচ্ছে। এসব অপরাধের কি কোনো দিন বিচার হবে না?
এতসব বিপর্যয় দেখে প্রাণীকুল আজ মানুষের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করছে। পাহাড়, পর্বত, গাছপালা, পশুপাখি, গ্রহ-নক্ষত্র, মেঘমালা, বায়ু সব কিছুই আল্লাহ তায়ালার গুণগান করে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘সাত আসমান, জমিন এবং এ (দু’য়ের) মাঝখানে যা কিছু আছে তা সবই তার পবিত্রতা ও মহিমা করছে, (সৃষ্টিলোকে) কোনো একটি জিনিস এমন নেই যা তার প্রশংসা পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করে না।’ সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৪৪। মানবজাতির সর্বগ্রাসী ঔদ্ধত্য ও অপকর্ম আজ প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাদের আল্লাহর গুণগান ও পবিত্রতা ঘোষণা করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের কষ্ট ও অভিযোগ আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ফলে, এই বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ প্রকৃতির অভিশাপ, আসলে মানুষের ‘হাতের কামাই’। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’(সূরা আর রুম, আয়াত : ৪১) মানুষ তাদের অজ্ঞতা, মূর্খতা, হিংসা ও লোভের বশবর্তী হয়ে বিভিন্নভাবে এই পৃথিবীকে ভারসাম্যহীন করছে। এর অনিবার্য ফল এমন মহামারী। আজ মানুষে মানুষে, সমাজে ও দেশে দেশে যে বিষবৃক্ষের জন্ম হয়েছে তার শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। নৈতিক সঙ্কট ও মূল্যবোধের অবক্ষয় পরস্পরের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। মানুষ দীর্ঘ দিন শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। শুধু নিজের স্বার্থে ও সুখের জন্য অপরকে ধ্বংস করতে পর্যন্ত পিছপা হয়নি। মানুষ নিজের দায়বদ্ধতা থেকে বহু আগেই অনেক দূরে সরে গেছে। প্রতিফল হলো, আজ আপনজন মরে গেলেও তার লাশটি পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখতে পারছে না। যেমন, বাপ ছেলেকে ফেলে, ছেলে বাপকে ফেলে চলে যাচ্ছে। এর চেয়ে বড় প্রাকৃতিক প্রতিশোধ আর কী হতে পারে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমাদের স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘোষণা করেছে বারবার সাবান পানি দিয়ে বিশ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে, হাত স্যানিটাইজিং করতে হবে, হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে প্রভৃতি। জীবনঘাতী ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আর ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য বিধিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ও জাতির সুরক্ষার জন্য এসব স্বাস্থ্যবিধি অবশ্য পালনীয়। বাহ্যিকভাবে হাত পরিষ্কার করলাম, মুখ, জিহবা, চোখ মাস্ক দিয়ে বন্ধ রাখলাম, পিপিই দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখলাম; কিন্তু ঔদ্ধত্যপূর্ণ হাত, লাগামহীন মুখ ও রক্তচক্ষু উঁচিয়ে পৃথিবীতে যে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছি, হিংস্রতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছি, সেগুলোর পরিশুদ্ধতার কী হবে? অনেক সময় মারাত্মক অপরাধ করার সময় ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে থাকতে ভয়ঙ্কর অপরাধীরাও গ্লাভস, মাস্ক আর চশমা পরে। মানবজাতি অপরাধে নিপতিত এবং প্রকৃতির শত্রু। গ্লাভস, মাস্ক, পিপিই দিয়ে তাদের চেহারা আড়াল করার প্রতীকী প্রয়াস পাচ্ছে বৈ কি। কিন্তু আমরা হাত দিয়ে অবৈধ কর্তৃত্ব প্রদর্শন ও জুলুম, গরিবের মাল আত্মসাৎ, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, খুন, অপহরণ, গুম, চাঁদাবাজি ও ঘুষ আদান-প্রদান, ওজনে কম দেয়া, দুর্নীতি, জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ-অনৈক্য, সন্ত্রাস ছড়িয়ে বৈধ দেশ দখল প্রভৃতি জঘন্য অন্যায় অপকর্ম, তার কী হবে? মুখ ও জিহবা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিদ্রোহ ও দম্ভ-অহঙ্কার, মিথ্যাচার, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা শপথ, মিথ্যা সুপারিশ, অপবাদ দেয়া, চোগলখোরী, ওয়াদাখেলাপি, হিংসাবিদ্বেষ, গালি ও কষ্ট, হারাম খাওয়া, ধোঁকা ও প্রতারণা ইত্যাদি দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে জনপদ, সমাজ ও বহু দেশকে নরক বানিয়েছি আমরা, তার কী হবে? অন্য দিকে চোখ দিয়ে বিনোদনের নামে ব্যভিচার, উলঙ্গ ও উন্মত্ত নাচ এবং অশ্লীল দৃশ্য প্রদর্শন করি। কথিত শিল্প ও সংস্কৃতির ওপর ভর করে অশ্লীল সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিয়ে সুস্থ পরিবেশ নষ্ট করা হয়, আজাবগজবের ক্ষেত্র তৈরি করি, তার শুদ্ধতার কী হবে? মানুষ এতটাই হিংস্র ও ভয়ঙ্কর হয়েছে যে, তারা যেন পরস্পরের সংস্পর্শে না আসতে পারে, সে জন্য খাঁচায় বন্দী নেকড়ে-হায়েনার মতো পরস্পর থেকে দূরে লকডাউন করা হচ্ছে, সামাজিক দূরত্বের আবরণে পরস্পরের পাপমোচনের ব্যর্থ চেষ্টা হচ্ছে। মানুষ হাত, পা, মুখ, জিহবা, দৃষ্টিশক্তি, জ্ঞানবুদ্ধি প্রভৃতি বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে যেসব জুলুম-নির্যাতন, অনৈতিক ও পাপ কাজ করেছে, সেগুলো থেকে যেন কিছুটা বিরত থাকতে পারে! তাই এই সাময়িক ব্যবস্থা। কিন্তু শুধু বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন, সাময়িক সামাজিক দূরত্ব তৈরি বা লকডাউন করে মানবজীবনে স্থায়ী শান্তি অর্জন কি সম্ভব? করোনার আতঙ্ক ও বিপর্যস্ততা থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ যদি প্রকৃতই নৈতিক উৎকর্ষ অর্জন করে, সব অন্যায়, অত্যাচার ও গুনাহ থেকে বিরত থাকে, মনের গরলতা দূর করে মহান ও পরাক্রমশালী প্রভুর উপদেশ গ্রহণ করে, তওবা-ইস্তিগফার করে, তখনই সব ভাইরাস ও মহামারী থেকে স্থায়ীভাবে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। আল কুরআনের সূরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, (ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য) তোমরা সবাই আল্লাহর দরবারে তওবা করো; আশা করা যায় তোমরা নাজাত পেয়ে যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন গুনাহ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই যারা গুনাহ করে, তাদের কৃতকর্মের যথাযথ ফল তাদের দেয়া হবে।’ (সূরা আল আনয়াম, আয়াত : ১২০)
জনপদের ভালো-মন্দ সবাইকে মহামারী সংক্রমণ করে থাকে। তাই আসুন, সবাই অন্যায় ও অকল্যাণকর কাজ থেকে ফিরে আসি। বিবেককে জাগ্রত করি। দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তির জন্য স্রষ্টার আদেশ নিষেধ মেনে চলি এবং তাঁর একত্বভিত্তিক সভ্যতার অভ্যুদয় ঘটিয়ে আল্লাহর রহমত লাভের উপযোগিতা অর্জন করি। করোনা-পরবর্তী সম্পূর্ণ নতুন পৃথিবী, আরো উন্নত, টেকসই ও সর্বোপরি মানবিক পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য যেন সবাই প্রতিশ্র“তিবদ্ধ হই।হ
লেখক : ব্যাংকার
email : aminurrahman1964@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement