২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বন্যা মোকাবেলায় নেক্সাস প্ল্যানিং

বহমান এই সময়ে
-

কোভিড-১৯। বিশ্বজুড়ে এক মহা অভিশাপ। এটা তছনছ করে দিয়েছে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি। কমবেশি সব দেশ এর অভিঘাতের শিকারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এ থেকে ভিন্ন কিছু নয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারকেও লড়াই করতে হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিকে একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে। শুরুতে আমাদের সবার মতো সরকারেরও ধারণা ছিলÑ মাস কয়েকের মধ্যেই এই করোনা বিদায় নেবে। এরপর মানুষ আবার ঘর থেকে বেরিয়ে অর্থনীতির চাকাকে দ্রুত সচল করে তুলতে সচেষ্ট হবে; যেমনটি হয়ে থাকে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর। সেভাবেই এই করোনা সময়ের ‘সাময়িক’ ভোগান্তির কথা ভুলে মানুষ নিজেদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে।
কিন্তু তেমনটি যে হচ্ছে না, তা এখন প্রায় নিশ্চিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের সহসা অবসান হবে না। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদি রূপ নিতে যাচ্ছে। বদলে চলতে পারে এর প্রকৃতিও। তাই করোনা মোকাবেলায় আমাদের ভাবতে হচ্ছে ভিন্নভাবে। স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের বাইরে গিয়ে ভাবতে হচ্ছে কিছুটা হলেও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের কথা। কিন্তু শুধু ভাবলেই তো হবে না, যেকোনো পদক্ষেপ নিতে গেলেই চাই প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান। অর্থসম্পদের অভাব রয়েছে আমাদের। করোনা মহামারী সে সম্পদের উৎসকে করে ফেলেছে সঙ্কুচিত। তাই এ নিয়েও আছে বাড়তি ভাবনা।
এর বাইরে করোনা মহামারীর মধ্যে আমাদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতগুলোতে শ্রমিকদের বেতন ভাতা কী করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সচল করে তোলা নিশ্চিত করা যায়, সেটি একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে আমাদের সামনে। এ চ্যালেঞ্জ এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও। আনুষ্ঠানিক ও উপআনুষ্ঠানিক খাত এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ মাত্র। শ্রমিকদের মজুরি পাওয়া নিশ্চিত করতে না পারলে উৎপাদনের বর্তমান অচলাবস্থা ও মানুষের বেকারত্ব সমস্যার অবসান ঘটানো যাবে না। আর উৎপাদনের চাকা সচল না করতে পারলে, মানুষকে স্বাভাবিক কর্মজগতে ফিরিয়ে আনতে না পারলে অর্থনীতির চাকা অচলই থেকে যাবে। সে আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন গোটা জাতি। করোনার এই সময়ে সবচেয়ে দুর্ভোগে রয়েছে দেশের শ্রমিক সমাজ। অথচ তারাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখার মূল কারিগর। মোটামুটিভাবে বলা যায়, বাংলাদেশে রয়েছে দুই ধরনের শ্রমিক : আনুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক। আনুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি খাতের কোম্পানিতে কাজ করে এবং মাস শেষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন পায়। এ খাতের শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে কিছু আইনগত সম্পর্ক রয়েছে। আর অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা কাজ করে নিজ নিজ অধীনে থেকেই। তারা অনেকেই কাজ করেন নিজস্ব ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান বা খামারে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ শ্রমিকই আনুষ্ঠানিক খাতের। কোনো খাতের শ্রমিকরাই এই লকডাউনে ভালো নেই। তাই ভালো নেই অর্থনীতির বিভিন্ন খাতও। কান টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি আনুষ্ঠানিক ও অন্যান্য খাতের অবস্থাও এখন অন্যান্য খাতের অবস্থারই অনুরূপ। অর্থনীতির প্রতিটি খাতে করোনা মহামারীর থাবা সম্প্রসারিত। বলা যায়, পুরো সমস্যাটি এগিয়ে যাচ্ছে সঙ্কটের পর্যায়ে। এই সঙ্কটজনক পর্যায়ে যে যার অবস্থান থেকে আমরা ভাবছিÑ কী করে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয়পর্যায়ে এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।
এমনি যখন অবস্থা তখন আমাদের এ দিকটি নিয়ে মগ্ন থাকারই কথা। কিন্তু এরই মধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো আমাদের অর্থনীতিকে সচল করার পথে এসে হাজির আরেকটি বড় ধরনের বাধা : দ্বিতীয় দফায় আসা দেশব্যাপী চলমান দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। চারদিক থেকে খবর আসছে বন্যাকবলিত মানুষের নানা দুর্ভোগের। বন্যার পানি এরই মধ্যে ভাসিয়ে দিয়েছে প্রায় সারা দেশ। বন্যায় স্বাভাবিক ফসলের ক্ষতি তো হয়েছেই, সেই সাথে আছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে কর্মহীন করে তোলার দিকটি। আছে ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নেয়াসহ নদীভাঙনের সমস্যাও। এই বন্যার সময়ে এরই মধ্যে ব্যাপক নদীভাঙনের ফলে বিলীন হয়েছে এবং হচ্ছে গ্রাম, বসতবাড়ি আর ফসলি জমি।
করোনাকালের এই সময়ে অর্থনৈতিক সমস্যার বাইরে দেশে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে নতুন ধরনের নানা সামাজিক সমস্যা। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, চলমান বন্যায় বাংলাদেশের ২৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে ১৩ লাখ শিশু। তা ছাড়া এরই মধ্যে পাঁচ লাখ পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে। একই সাথে নদীভাঙন ঘরবাড়ি বিলীন করে দিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিলীন হয়ে যাচ্ছে পুরো গ্রাম। এসব তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ। অপর দিকে এবারের এই দীর্ঘমেয়াদি বন্যা এমন সময় এলো, যখন আমরা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আমফানের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কাজে ব্যস্ত। এর ওপর রয়েছে করোনা মোকাবেলায় জরুরি নানা স্বাস্থ্য-পদক্ষেপ। আর আমাদের এই করোনা নিয়ন্ত্রণের কাজটি করতে হচ্ছে পুরো দেশজুড়ে। এর আগে কোনো সময়েই এত ব্যাপকভিত্তিক জরুরি স্বাস্থ্য-কার্যক্রম আমাদের চালু করতে হয়নি।
ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে ভারী বর্ষণ, ব্যাপক বন্যা ও মারাত্মক ভূমিধসে লাখ লাখ শিশু ও পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আসলে এর প্রভাব রয়েছে আমাদের বাংলাদেশের মওসুমি বন্যার ওপর। তা ছাড়া উজানের এসব দেশের খরার প্রভাবও পড়ে আমাদের দেশে। তখন বাংলাদেশকে তার প্রয়োজনীয় ন্যায্য পানির হিস্যাটুকু থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তাই বন্যা বিশেষজ্ঞদের তরফ থেকে তাগিদ এসেছে এবং অনেক সময় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাগিদ আসে উজান ও ভাটির দেশগুলো একসাথে মিলে বন্যা-খরা মোকাবেলায় যৌথ প্রয়াস চালানোর ব্যাপারে। আমাদের মনে রাখতে হবেÑ এই বন্যা ও খরার প্রভাব রয়েছে এসব দেশের পানি, খাদ্য, জ্বালানি ও পরিবেশের ওপর। এই পানি, খাদ্য, জ্বালানি, পরিবেশের ওপর আমাদের নিরাপদ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হলে এই বছর-বছর মওসুমি বন্যা সমস্যার সমাধান করতে হবে। আর তা সম্ভব শুধু উজানের ও ভাটির দেশগুলোর সম্মিলিত আন্তরিক প্রয়াসে, আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে। এসব দেশের পারস্পরিক স্বার্থেই তা করতে হবে। এ তাগিদেরই প্রতিফলন পাওয়া যায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের একটি ওয়েবভিত্তিক সেমিনারে তথা ওয়েবিনারে।
গত শুক্রবার প্রকাশিত একটি খবরে জানা যায়, ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন ফর ন্যাচার’ (আইইউসিএন) সম্প্রতি ওয়ার্ল্ডওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে একটি ইন্টারেক্টিভ সেমিনার তথা ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে। এ সেমিনারে বিভিন্ন স্থান থেকে অংশগ্রহণকারীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। এই আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের বিষয় নিয়ে কাজ করে আসছে। তারা তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে এগুলোর বিশ্লেষণ, গবেষণা, সরেজমিন প্রকল্প পরিচালনা, প্রকৃতি প্রশ্নে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, এতদ্বিষয়ক শিক্ষা প্রভৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট। যা-ই হোক, উল্লিখিত ওয়েবিনারের বিষয়বস্তু ছিলÑ নিড ফর নেক্সাস প্ল্যানিং ফর ওয়াটার, ফুড, এনার্জি, অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সিকিউরিটি ইন দ্য ট্র্যান্সবাউন্ডারি বেসিনস। ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদী অববাহিকায় পানি, খাদ্য, জ্বালানি ও পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে একটি ‘নেক্সাস প্ল্যানিং’। উল্লেখ্য, নেক্সাস প্ল্যানিং বা নেক্সাস থিঙ্কিং (সংক্ষেপে ‘নেক্সাস’) বলতে আমরা বুঝি একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রক্রিয়াকে, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়নে এবং একই সাথে কমিয়ে আনে সম্পদের অভাব আর খাতসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব থেকে সৃষ্ট ঝুঁকি।
ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীরা এশিয়াজুড়ে চালু থাকা বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও কেস স্টাডি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। এ ওয়েবিনারের মাধ্যমে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর একটি প্ল্যাটফরমের ও এন্ট্রি পয়েন্টের সুযোগ করে দেয়া হয়, নদী অববাহিকা সম্পর্কে তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার জন্য।
বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে সুশীল সমাজের সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তরুণ পানি-বিষয়ক পেশাজীবীদের মধ্য থেকে শতাধিক অংশগ্রহণকারী এই ওয়েবিনারে অংশ নেন।
আইইউসিএনের ‘গ্লোবাল ওয়াটার প্রোগ্রাম’ প্রধান ড. জেমস ড্যাল্টন ওয়েবিনারে বলেন, ‘আগামী ৫০ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়ে যাবে ৭০ লাখ থেকে ৯০ লাখ। আর তা নদী অববাহিকার সম্পদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। সেই সাথে বাড়বে বিভিন্ন খাত ও দেশের মধ্যকার দ্বন্দ্ব।’ তার অভিমত হচ্ছেÑ পানি, খাদ্য, জ্বালানি ও পরিবেশের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে আমাদের জানাশোনা আরো বাড়ানো গেলে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো সরকার ও বেসরকারি খাতগুলোকে অধিকতর জাবদিহির আওতায় আনতে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারবে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে দীর্ঘমেয়াদি পানি নিরাপত্তা।
অপর দিকে ক্যানবেরাস্থ ‘কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন’ (সিএসআইআরও)-এর অববাহিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রধান গবেষণা পরামর্শক ড. শাহরিয়ার ওয়াহিদ তার বক্তৃতায় নেক্সাস প্ল্যানিংয়ে সিমুলেশন টুলের ভূমিকা তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে তিনি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কাবুল অববাহিকা ছাড়াও চীন, ভারত ও নেপালের কোশি অববাহিকার উদাহরণ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, এসব অববাহিকার ওপর আবহাওয়ার পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। ফলে সেখানে ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে এবং বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের ধরন পাল্টে যাচ্ছে।
মওসুমি বন্যার ফলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কৃষকরা বারবার অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এর পরও বাংলাদেশের মানুষ বন্যার সাথে লড়াই করে এ পর্যন্ত টিকে আছে। তবে এবারের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কতটুকু সম্ভব হবে, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে, তা বলা মুশকিল। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের ‘সানমুখশা’র প্রতিষ্ঠাতা ড. অশোক দাস মনে করেন, স্মার্ট টেকনোলজি বন্যা পরিস্থিতিতে কৃষকদের জোগান খরচ কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে। সেই সাথে বাড়িয়ে তুলতে পারে কৃষকদের আয়রোজগার। তার সংগঠন উড়িষ্যার ৪১ জন কৃষকের সাথে কাজ করছে। তারা তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলছেন, যাতে সৌরবিদ্যুৎ চালিত স্মার্ট পাম্প ব্যবহার করে তাদের প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া নিশ্চিত হতে পারে। এর মাধ্যমে তারা এখন সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে কম খরচে পানি পৌঁছে দিতে সক্ষম, আবার প্রয়োজনে অপ্রয়োজনীয় পানি সরিয়ে ফেলতেও সক্ষম। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্থানীয় নারীদের নিয়ে স্থানীয় সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা। আসলে আমাদের দেশের খরা ও বন্যাপীড়িত কৃষকদের সহায়তার জন্য এ ধরনের প্রযুক্তি এবং অন্যান্য আধৃনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেÑ বাংলাদেশকে সাংবাৎসরিক বন্যা থেকে মুক্ত করতে হলে নেক্সাস প্ল্যানিংয়ের ওপর সর্বাধিক জোর দিতে হবে। বন্যার কবল থেকে আমাদের মুক্ত হওয়ার এটি হতে পারে একটি উত্তম উপায়। কারণ বাংলাদেশ হচ্ছে একটি ভাটির দেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রয়েছে একটি প্রতিকূল অবস্থানে। তাই শুধু বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে ব্যস্ত না থেকে পানি-কূটনীতির ওপর সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে, যাতে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে নিয়ে একটি সমন্বিত নেক্সাস প্ল্যানিং প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায়।
উল্লিøখিত ওয়েবিনারের মূল সুরটি ছিল তা-ই। এ ওয়েবিনারে প্রয়াস চলেছে কী করে সুশীলসমাজের সংগঠনগুলোকে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় পানি ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট করা যায়। এই অববাহিকায় আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর বন্যা-প্রবণতার প্রকোপ কমানোর একমাত্র উপায় এটিই। এ বিষয়ে শিগগিরই আরো দু’টি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আসন্ন সেসব ওয়েবিনারে নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনার সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে মতবিনিময় করা হবে। আমাদের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের উচিত এ ধরনের ওয়েবিনারে যোগ দেয়া। কারণ আমরা আর কত বন্যার ধকল বয়ে বেড়াব? এর একটা স্থায়ী সমাধানের উপায় আমাদের খুঁজতেই হবে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য উপায় হচ্ছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার জন্য একটি সমন্বিত নেক্সাস প্ল্যানিং প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পথ খোঁজা। আশা করি, আমাদের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement