১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরিবেশ থাকুক দূষণমুক্ত

-

কিছুদিন আগে পালিত হলো এ বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবার পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ঞরসব ভড়ৎ ঘধঃঁৎব, অর্থাৎ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের এখনই সময়।’ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে এবার পরিবেশ দিবস তেমন আড়ম্বরের সাথে পালিত হয়নি। আমরা এখন অনেক সচেতন। করোনা আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ ও গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে। পরিবেশ দিন দিন দূষিত হচ্ছে। ফলে আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাই এখন থেকেই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে।
আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়ে আমাদের পরিবেশ। আর পরিবেশের উপাদানের মধ্যে রয়েছে গাছপালা, ঘরবাড়ি, পশুপাখি, রাস্তাঘাট, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত এবং আরো অনেক কিছু। এসব উপাদান মানুষ ও অন্যান্য জীবের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এগুলোর ক্ষতি হলে ভারসাম্য নষ্ট হয়।
পরিবেশের সব উপাদান আমাদের পরিবেশকে যেমন সুন্দর করে, আবার দূষিতও করতে পারে। প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশে একদিন জীবন সম্ভব হয়েছিল পৃথিবীর বুকে। বনাঞ্চলের পরিমাণ বেশি এবং জনসংখ্যা কম থাকায় বায়ুমণ্ডলে সমস্ত জীবকুলের বন্ধু অক্সিজেনের অভাব ছিল না। খাদ্য ও পানিতে ছিল সতেজ বিশুদ্ধতা। কিন্তু ‘জীবনকে উন্নত’ করার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান যখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করল, তখন পরিবেশ আর আগের মতো রইল না। বিজ্ঞানের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পৃথিবীতে ডেকে আনা হলো অতি যান্ত্রিকতা। ফলে প্রকৃতির সাথে তার যে ভারসাম্যাবস্থা দীর্ঘকাল ধরে বজায় ছিল, তা ধীরে ধীরে বিঘিœত হতে শুরু করল। দূষিত হতে শুরু করল পরিবেশ। আজ দূষণে সমগ্র জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। বাযুমণ্ডলে আগের মতো বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া খুবই কষ্টকর। পরিবেশ দিতে পারছে না জীবজগতের নিরাপত্তা। নির্বিচারে প্রকৃতি সংহার এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন আবহাওয়া দূষিতকরণের মধ্য দিয়ে মানুষ পৃথিবীতে ডেকে এনেছে ক্ষয় ও অবক্ষয়ের মহামারী। বাংলাদেশেও একই অবস্থা।
বিজ্ঞানী কলিন ওয়াকারের মতেÑ রাসায়নিক, ভৌতিক ও জৈবিক কারণে পরিবেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে ও যেকোনো পরিবর্তনই হলো দূষণ। ইউনেস্কো ঊধৎঃয ংঁসসরঃ ্ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ জবষধঃরড়হ-এর দৃষ্টিতে পৃথিবী প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা যা আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক জীবনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে তাকে পরিবেশ দূষণ বলা হয়।
পরিবেশ দূষণ বর্তমান বিশ্বে একটি বড় সমস্যা। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণ করছি। পরিবেশ আমাদের জীবন রক্ষাকারী। বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছুই আমরা পরিবেশ থেকে গ্রহণ করে থাকি। আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তা পরিবেশের উপাদান গাছ থেকেই পাই। প্রতিনিয়ত আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তা পরিবেশের দান। কিন্তু মানুষ বন কেটে বাড়ি, গাড়ি ও সড়ক নির্মাণ করছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকি বয়ে আনছে। আমাদের জীবনযাত্রায় আজ একদিকে বিজ্ঞানের বিজয় গৌরব, অন্যদিকে দূষণের দুঃস্বপ্ন। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ আমাদের নিত্যসঙ্গী।
পরিবেশ দূষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বায়ু দূষণ। বায়ু সাধারণত ২১ শতাংশ অক্সিজেন, ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন, ০.০৩১ শতাংশ কার্বন-ডাই অক্সাইড, একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে ওজন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি দ্বারা গঠিত। যদি কোনো কারণে বায়ুতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে অন্যান্য গ্যাসের ঘনত্ব বেড়ে যায় অথবা বালুকণার ভাগ বৃদ্ধি পায় তখন বায়ু দূষিত হয়। বায়ু দূষণ গত এক শতাব্দী থেকে শহর ও শিল্প এলাকার কোটি কোটি মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রাচীনকালে যখন আগুন আবিষ্কৃত হলো, তখন থেকেই বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান অক্সিজেনের ধ্বংস সূচিত হয়। আগুন বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস করে জীবনের অনুকূল পরিবেশের ভারসাম্যই শুধু নষ্ট করে না, ধোঁয়া এবং ভস্মকণায় তাকে করে তুলেছে কলুষিত। গাছপালা কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণীর জন্য অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয় এ পৃথিবীতে। কিন্তু মানুষ নগর জনপদ গড়ে তোলার প্রয়োজনে বিরামহীনভাবে হাতে তুলে নেয় নিষ্ঠুর কুঠার। মায়ার হাত একটুও প্রসারিত হয় না বৃক্ষের প্রতি।
যানবাহনও বায়ু তথা পরিবেশকে নানাভাবে দূষিত করে। গাড়ি যখন চলে তখন অক্সিজেনের সাথে কার্বনের দহনশক্তি উৎপন্ন হয়। দহনকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হলে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাসের সাথে আরো কিছু গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে। এর মধ্যে বিষাক্ত কার্বন-মনোক্সাইড গ্যাসও থাকে। কলকারখানার যে দূষিত পদার্থ কালো চুল্লি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে বাতাসকে বিষাক্ত করে তোলে, তার পরিণতির কথা ভাবলে যেকোনো সুস্থ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়বে।
বায়ু দূষণ প্রসঙ্গে আর একটি দিকের কথা উল্লেখ করা যায়। তা হলো ধোঁয়াশা। ধোঁয়া আর কুয়াশা অবলম্বন করে এর উৎপত্তি। শীতের সন্ধ্যায় স্তব্ধ আবহাওয়ায় ধোঁয়াশার উৎপত্তি ঘটে এবং এর অস্তিত্ব শহর ও শহরতলির পরিমণ্ডলে অধিক মাত্রায় রয়েছে। শীতকালে ঠাণ্ডা হাওয়ায় বাতাসের জলীয়বাষ্পের ঘনীভূত রূপ বাতাসের ধূলি ও কার্বনের কণাকে অবলম্বন করে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে। যে বাতাসে আমরা শ্বাস গ্রহণ করি, সেই বাতাসই যদি দূষিত হয়ে পড়ে, তা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হয়। আজ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মাথাধরা, শ্বাসরোগ, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ যে ক্রমবর্ধমান, তার মূল কারণ বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি। গ্রামের মানুষও বায়ু দূষণ থেকে মুক্ত নয়।
পানির অপর নাম জীবন। পানি আজ দূষিত হচ্ছে বিভিন্নভাবে। কোনো জলাশয়ে শিল্পজাত বা গৃহস্থালির বর্জ্য পদার্থ পানিতে বিগলিত হয়ে বা ভাসমান থেকে অথবা তলায় জমে থেকে জলজ বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটালে তখন আমরা একে পানি দূষণ বলে থাকি। দূষিত পানি মানুষের ব্যবহারের ফলে অবস্থানগতভাবে পরিবর্তিত হয়ে পড়ে, ফলে ওই পানি যেসব উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেত এখন তা করা যায় না। ভূমণ্ডলের শতকরা ৭০ ভাগ পানি দ্বারা আবৃত। সাগর, নদী, বিল, হ্রদ ইত্যাদির পানি বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই পানি যদি কোনো কারণে দূষিত হয়ে পড়ে, তাহলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কঠিন। নদী-নালা, খাল-বিলের পানিতে কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য এবং শহর ও গ্রামের পয়োবর্জ্য মিশে দূষিত করছে। শস্যক্ষেতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পানিতে মিশে পানি দূষিত করে। দূষিত পানিতে মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী বাস করতে পারে না। জলজ উদ্ভিদও জন্মায় না। দূষিত পানি ডায়রিয়া, জন্ডিস, খোস পাঁচড়া, টাইফয়েড ইত্যাদি নানা রকমের রোগ ছড়ায়। দূষিত পানি রান্না, ধোয়ামোছা, গৃহস্থালি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায় না। এ পানিতে গোসল করলে চর্মরোগ হয়।
পানি যদি দূষিত হয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের জীবন সঙ্কটময় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীর তীরে অসংখ্য কলকারখানা গড়ে উঠেছে। শিল্প উৎপাদনে নিয়োজিত বিভিন্ন কারখানা থেকে রাসায়নিক ও বর্জ্য নিয়মিতভাবে নদীতে নিক্ষিপ্ত হয়। শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ পানিকে কতটা দূষিত করে, তা বলা বাহুল্য। তার উপরে গৃহের উচ্ছিষ্ট এবং পৌর করপোরেশনের আবর্জনা সেই দূষণক্রিয়াকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। লঞ্চ-জাহাজ থেকে নির্গত তেলও পানি দূষণের অন্যতম কারণ। গ্রামের পুকুর, খাল-বিলের পানিও নানা করণে দূষিত হয়। নালা-নর্দমার সাথে পুকুরের যোগ আছে। তা ছাড়া বাড়িঘর এবং বিবিধ আবর্জনার ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ বিভিন্ন জলাশয়। ফলে, জলাশয়ের পানি যেখানে খাবার পানি অবলম্বন, সেখানে জনস্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার গুরুতর আশঙ্কা আছে। পানি দূষণ আধুনিক সভ্যতার এক অভিশাপ। গ্রামে নদীর পানিতে পুকুরে প্রচুর আবর্জনা ফেলা হয় এবং পাট পচানো হয়। ফলে পানি দূষিত হচ্ছে।
শহরে শব্দ দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। রাস্তায় বাস, ট্রাক, ট্যাক্সির হর্ন, কলকারখানার আওয়াজ, বোমাবাজি, মাইকের চিৎকার, মিছিলের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি এসবই স্বাভাবিক পরিবেশকে নষ্ট করে শান্তিপূর্ণ জীবনকে বিঘিœত করছে।
বাসস্ট্যান্ড, মাঠ-ঘাট এমনকি স্কুলের পাশেও উচ্চস্বরে মাইক বাজছে, যার তীব্রতা অনেক বেশি। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, ৫০ ডেসিবলের উপর শব্দের তীব্রতা সৃষ্টি হলে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নগরীতে এর মাত্রা ৫০ ডেসিবলের অনেক উপরে। গ্রামে এখন মেলা, যাত্রা, গানের জলসায় অহরহ শব্দ দূষণ হচ্ছে। ক্যাসেট-সিডি, মাইকের দোকানে বেশির ভাগ সময় উচ্চমাত্রায় গান বাজে। মায়ের গর্ভে থাকা শিশুরা জন্মের পর বিভিন্ন বিকৃত আচরণ করছে। শুধু তাই নয়, শব্দ দূষণের ফলে হৃদরোগ, মাথা ব্যথা, বধিরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে পারমাণবিক যুগ। কাঠ, কয়লা এবং তেল দহনের ফলে বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণে দূষিত হয়, পারমাণবিক দহনে দূষণের পরিমাণ তার চেয়ে কয়েক লাখ গুণ বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম বর্ষে পারমাণবিক বোমাবর্ষণের ফলে জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকিই ধ্বংস হয়নি, তার প্রবল প্রতিক্রিয়ায় সন্নিহিত ভূখণ্ডের মানুষ, জীবজন্তু এবং উদ্ভিদের অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়ে। এই বিষময় পরিণামের কথা স্মরণ রেখেও চলছে পারমাণবিক বোমার প্রস্তুতি। পরীক্ষামূলকভাবে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে বায়ুমণ্ডলকে যে পরিমাণে বিষাক্ত করে তোলা হয়, বায়ুমণ্ডলকে সেই পরিমাণ বিষমুক্ত করে তার পরিশোধনের প্রয়াস নেই। তা ছাড়া প্রচণ্ড শক্তিশালী রকেটের সাহায্যে মহাকাশ অভিযানেও উপগ্রহ উৎক্ষেপণে যত বিষাক্ত গ্যাস পৃথিবীর বায়ুণ্ডলে নিক্ষেপ করা হয়, তাতেও আবহাওয়া দূষিত করে চলেছে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো।
আমরা প্রতিদিন পলিথিন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করছি। কিন্তু এ পলিথিন ও প্লাস্টিক মাটিতে পচে না। তাই এগুলো মাটি বা পানির সাথে মিশে যায় না। পলিথিন বছরের পর বছর অবিকৃত অবস্থায় থাকে। এরূপ মাটিতে গাছপালা ভালোভাবে জন্মায় না। পলিথিন অথবা প্লাস্টিক থাকার কারণে উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে যেতে পারে না। এতে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কলকারখানার বিভিন্ন বর্জ্য ও মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং একে দূষিত করে। দূষিত মাটিতে কোনো গাছপালা জন্মায় না। চাষাবাদ করে ফসল ফলানো যায় না। ভালো ফসল ফলানো এবং কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য কৃষকরা অপরিকল্পিতভাবে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এতে মৃত্তিকা দূষণের সাথে সাথে জীবজগতে বিপন্ন অবস্থা দেখা দিয়েছে।
নাগরিকের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ সুন্দর রাখাও আমাদের দায়িত্ব। সরকার পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে। গ্রহণ করেছে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ। যেমনÑ ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অতিথি পাখি ধরা ও শিকার করা আইনত নিষিদ্ধ। পাহাড় কাটা ও জলাভূমি ভরাট ইত্যাদি বেআইনি কাজ। এসব আইন মেনে চলা আমাদের কর্তব্য। সমাজের সবাই যেন সব আইন মেনে চলে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত। এ ছাড়া সরকার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, রাস্তাঘাট পরিষ্কারের মতো যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতে নেয় সেখানে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য চাই সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বর্তমানে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে। ‘পরিবেশ দিবস তা বক্তৃতা-সেমিনার ঘেরা এক নি®প্রাণ আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। জ্ঞানপাপীর দল দিবস পালন করে, দূষণের জন্য চোখের পানিও ফেলে, আবার পরিবেশ দূষিত হয় এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে।
পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশের ভূমিকা নগণ্য। আর পাশ্চাত্যের শিল্পোন্নত দেশগুলো প্রায় ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করছে। দূষণের ফলে বাংলাদেশ তার সমুদ্র তীরবর্তী নিচু অংশ হারাবে বলে বিজ্ঞানীরা বলেছেন। অন্য দেশ পরিবেশ দূষণ করবে আর আমাদের মতো সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে সহায়তাকারী দেশ এর মারাত্মক ক্ষতিকর ফল ভোগ করবে, তা হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রী-আমলাদের পশ্চিমা বিশ্বের কাছে জাতির দাবি পেশ করতে হবে। তারা যেন পরিবেশ দূষণের কাজ না করে অতীতে বাংলাদেশের যতটা ক্ষতি হয়েছে তার সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে।
যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থযুক্ত কালো ধোঁয়া যাতে বন্ধ করা যায়, তার জন্য পুরনো ইঞ্জিনচালিত গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ করা দরকার। ধূমপায়ীদের বিরুদ্ধে যে নীতিমালা রয়েছে, তার বাস্তবায়নও জরুরি। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে। কলকারখানা বা ইটের ভাটাগুলো শহর বা জনবসতির কাছাকাছি না হওয়া বাঞ্ছনীয়। অপরিকল্পিতভাবে জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার থেকে কৃষকরা বিরত থাকা জরুরি। জৈব আবর্জনা না পুড়িয়ে, পচানোর মাধ্যমে সারে পরিণত করা যায়, তা কৃষকদের বুঝাতে হবে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণও খুব কঠিন নয়। হর্ন ও মাইকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশেষ করে স্কুলের পাশে যেন হর্ন, মাইক বাজানো না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তার পাশে যেন স্কুল, হাসপাতাল নির্মাণ করা না হয় সে দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।
স্বাস্থ্যসম্মত বসবাস করতে হলে দূষণমুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। সবাইকে পরিবেশ দূষিত করে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। দূষণ প্রতিরোধের জন্য নির্বিচারে বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে হবে। যেখানে সুযোগ আছে, সেখানেই গাছ লাগাতে হবে। বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে। বায়ু দূষণ রোধের জন্য গাছপালার প্রতি যতœশীল হতে হবে। বাড়ির আশপাশে গাছপালা লাগাতে হবে। বনায়নের পরিকল্পনা নিয়ে প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে। গাছের যতœ নিতে হবে এবং অপ্রয়োজনে গাছপালা কাটতে জনগণকে নিষেধ করতে হবে।
বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলতে হবেÑ ‘আর পরিবেশ দূষণ নয়, চাই তার বিশুদ্ধকরণ।’ আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে আরো সচেতন হতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আমাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তার ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। এ দায়িত্ব পালন না করলে পরিবেশ দূষণজনিত অপমৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারবে না। তাই আমাদের সেøাগান হোকÑ খরাব ধহফ ষবঃ ষরাব. অর্থাৎ, বাঁচো এবং বাঁচতে দাও। হ
লেখক : ব্যাংক কর্মকর্তা
ansarisahadat4@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement