২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গণতন্ত্রের ওপর করোনার কোপ

অন্য দৃষ্টি
-

করোনাভাইরাসের হুমকিকে নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা সংহত করার কাজে ব্যবহার করছেন স্বৈরাচারী ও কথিত গণতান্ত্রিক নেতারা। এ সুযোগে তারা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ওপর ছুরি চালিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকার পাকা বন্দোবস্ত করছেন।
ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি চমৎকার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ত্রুটিপূর্ণ ওই গণতান্ত্রিক দেশটি এক ঝটকায় পুরোমাত্রায় স্বৈরাচারী হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানকে দেশটির পার্লামেন্ট সঙ্কট শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশ শাসন করার ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে। এর ফলে পার্লামেন্ট নির্বাচন কার্যকরভাবে বাতিল হয়ে গেল। বাইরে থেকে তার ক্ষমতা প্রয়োগকে শুধরানোর সুযোগ এখন খুব সামান্য। অরবান বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করার জন্য এ ধরনের ক্ষমতা তার থাকা প্রয়োজন। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো হাঙ্গেরিও করোনায় আক্রান্ত। ছোট ওই দেশটিতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৮৫ জন মারা গেছে।
ইউরোপের অন্য একটি দেশ রোমানিয়ার ক্ষমতাসীন দল করোনা সঙ্কটের শুরুতে এর একটা উপযুক্ত ব্যবহার করে। ক্ষমতাসীন দলের ভাষায় করোনাকালীন অস্বাভাবিক ‘ভোট’। সুতরাং বিরোধীদের জন্য এতে খুব বেশি সুযোগ থাকার প্রয়োজন নেই। এ নিয়ে খুব বেশি বিতর্ক ও আলোচনারও দরকার নেই। লুডোভিক অরবান তাই আবারো প্রধানমন্ত্রী পুনর্নির্বাচিত। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার শুনানি তিন মাস পিছিয়ে দেন। লকডাউনে সঙ্গনিরোধ কার্যকর করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দারুণ একটা ব্যাপার, সঙ্কটে পড়া নেতারা সঙ্কটকেই পুঁজি করছেন। করোনা দিয়েই তারা তাদের সঙ্কট উৎরাচ্ছেন।
হাঙ্গেরির একজন অতি দক্ষিণপন্থী নেতা যিনি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে জোরদার প্রচারণা চালিয়ে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পোক্ত করেছেন, তিনি প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শানাচ্ছেন। করোনাভাইরাস ও অভিবাসনের মধ্যে ‘স্পষ্ট সংযোগ’ রয়েছে বলে তিনি দেখতে পাচ্ছেন। অভিবাসন আইন কঠিন করে বিদেশীদের আসা বন্ধ করার জন্য যারা একপায়ে খাড়া তারা বলছেন, কোভিড-১৯ সীমান্তের ওপারের রোগ। বিদেশীরা এটা আমাদের দেশে বহন করে এনেছে। সুতরাং বিদেশীদের এদেশে আসা বন্ধ করে দেন। হোয়াইট হাউজে বসে থাকা সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের জন্য কোভিড-১৯ দারুণ একটা সুযোগ। এ সুযোগে তারা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। এ ছাড়া সেলফোনে মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম জোরদার করে মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মহাসুযোগ এ মহামারী।
সাবেক বিশ্বনেতা ও নোবেল পুরস্কার পাওয়া ৫০০ বিশিষ্ট ব্যক্তি এক খোলা চিঠিতে দাবি করেছেন, মহামারীর মধ্যে সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব সারা বিশ্বে আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিন্নমত বা সমালোচনা দমনে সারা বিশ্বে স্বৈরাচারীরা এই সঙ্কটকে ব্যবহার করছে। স্টকহোম কেন্দ্রিক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্র্যাসি ওই খোলা চিঠি প্রকাশের আয়োজন করে। চিঠিতে বলা হয়েছে, কতৃত্ববাদী ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত উভয় প্রকারের সরকার মহামারীর প্রকোপের মধ্যে জরুরি ক্ষমতাকে ব্যবহার করছে। প্রতিবাদী মানুষদের গ্রেফতার করছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লুণ্ঠন করছে।
গরিব ও প্রান্তিক দেশগুলোর অবস্থা আরো করুণ। জনমানুষের প্রাণেরই কোনো মূল্য সেখানে নেই, জনমতের মূল্য তো বহু দূরে। মহামারী মোকাবেলায় সরকারের একচোখা নীতি। কারো জন্য উন্নত চিকিৎসা রয়েছে, সাথে রয়েছে ভালোবাসাও। অবশিষ্টদের জন্য ডাক্তারের সামান্য পরামর্শ পাওয়ারও সুযোগ নেই। গরিব দেশের মন্ত্রীদের জন্য বাসায় সামনে বিমান অপেক্ষা করে। অন্য দিকে গরিব মানুষ রাস্তায় প্রাণ দেয়। আর রয়েছে কঠিন আইন। পান থেকে চুন খসলেই পুলিশ, আইন-আদালত। করোনাকালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে যাচ্ছে জনগণকে কতটা দমন করলে কতটা প্রতিক্রিয়া হয়। আর সেসব প্রতিক্রিয়া কিভাবে দমিয়ে দেয়া যায়। ‘গণতন্ত্র হলো স্বৈরাচারের হাতিয়ার’ করোনা যেন তাই বলে যাচ্ছে।
মানবাধিকার সঙ্কুচিত করতে, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কঠিন করতে মহামারীকে তারা ব্যবহার করছে। এগুলো করছে তারা বেআইনিভাবে। সংসদকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে। তথ্য পাওয়ার অধিকারকের সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট দেয়ার অভিযোগে নাগরিকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে। সঙ্গনিরোধ ও লকডাউন এমন থেরাপি কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেয়ে মানুষের একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ বন্ধ করার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। সাবেক বিশ্বনেতা ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের ওই খোলা চিঠিতে মানুষের স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য ও মর্যাদা সবই বিপন্ন বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার, ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লারা ডবরেভ, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। চিঠিতে তারা বলেছেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা স্তব্ধ করে দেয়া, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভিন্নমত প্রকাশকারীকে জেলে পোরা, নির্বাচনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে রাখাÑ এগুলো জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কাজে আসবে না।’ গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে জানিয়ে সচেতন নাগরিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করার ও এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সুইডেন একটি উন্নত রাষ্ট্র। তাদের সরকার পরিচলনাও উন্নতমানের। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে তারা ধারণ করে। সুইডেনের জনগণের সাথে দেশটির সরকারের সম্পর্ক স্বচ্ছ। কোনো ধরনের ছলচাতুরি এর মধ্যে নেই। প্রতারণার কোনো ব্যাপার নেই। একপক্ষ অন্যপক্ষকে বিশ্বাস করে। মহামারী মোকাবেলায় তারা এই আস্থার সম্পর্ককে ব্যবহার করেছে। জনগণের অধিকারকে শতভাগ সমুন্নত রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। লকডাউন বা মানুষের স্বাধীনতা হরণের মতো কোনো নির্দেশ তারা দেয়নি। দেশটিতে করোনার প্রকোপ ইউরোপের প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি হয়নি।
ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্র্যাসি একটি আন্তঃসরকারি সংগঠন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে এটি কাজ করে। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি গণতন্ত্র কতটা আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে সে ব্যাপারে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। বিশ্বে এখন নোবেল পুরস্কারকে সর্বোচ্চ মর্যাদার পুরস্কার হিসেবে মনে করা হয়। একজন এ পুরস্কার পেলে তার ব্যক্তিগত মর্যাদা অনেক বেড়ে যায়। তার প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ-সম্মান-আস্থা অর্জিত হয়। পরবর্তীতে তার এই ভাবমর্যাদাকে ব্যবহার করা যায়। গরিব দেশগুলোতে কেউ এ পুরস্কার পেলে অনেক বেশি সাড়া জাগে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের দিয়ে শুভকাজের উদ্যোগ নিলে মানুষ সহজে সেদিকে ঝুঁকে। অনেক পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি জনমানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তরা জোটবদ্ধ হয়ে অনেক সময় অন্যায়-অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানবতার পক্ষে আওয়াজ তোলেন। সাবেক বিশ্বনেতা ও নোবেল পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিদের দিয়ে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করে নি®প্রভ হয়ে পড়া গণতন্ত্রের জন্য তারা কিছু একটা করতে চাইছেন।
গণতন্ত্র রক্ষায় সুইডেনের ডেমোক্র্যাসি ইনস্টিউটের এ উদ্যোগ গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকদের জন্য একটি বার্তা। যারা গণতন্ত্রকে প্রমোট করতে চান, নীতি কৌশল প্রণয়নে এটি কাজে দেবে। তবে এই প্রচেষ্টা হালে পানি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। গণতন্ত্র চর্চাকারী বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশগুলোতে ভাঙন ধরেছে। আমেরিকাতে এর সবচেয়ে বড় ভাঙন দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র রক্ষায় কোন মুখে তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর শাসন অনেক অগণতান্ত্রিক দেশের চেয়ে শোচনীয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও প্রধান গণতন্ত্রচর্চাকারী দুটো দেশের নির্বাচিত নেতা। এই নেতারা নির্বাচিত হয়ার জন্য গণতন্ত্রকে একটি সুযোগে হিসেবে ব্যবহার করেছেন। গণতন্ত্রের মর্যাদা তাদের কাছে এতটুকুই। তারা এটাই প্রমাণ করছেন, গণতন্ত্র এমন একটা ব্যবস্থাÑ স্বৈচারীরাও এর সুযোগ নিতে পারে। দুজনই মানুষকে ধর্ম এবং বর্ণের ভিত্তিতে বিবেচনা করছে। উভয়ে এমন নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে তাতে দেশের ভেতরে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদাগত শ্রেণী তৈরি হচ্ছে। আমেরিকায় হোয়াইটরা ও ভারতে হিন্দুরা মর্যাদায় উন্নতর। তারা ব্রাহ্মণ, তাই তাদের সুযোগ-সুবিধা বেশি। তাদের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে হবে। অন্যদের অবনত থাকতে হবে হোয়াইট ও ব্রাহ্মণদের কাছে। অধিকার নিয়ে উচ্চবাচ্য করা যাবে না। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে ভারতে প্রচারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়Ñ এটি মুসলমানদের রোগ। এটি ছড়িয়ে পড়ার জন্য মুসলমানরা দায়ী। এ নিয়ে তবলিগের বিরুদ্ধেও জোর প্রচারণা চলে। তাদের মুরব্বিদের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকার মামলাও ঠুকে দেয়। চীনের শাসনব্যবস্থা কোনোভাবে এসব দেশের চেয়ে খারাপ বলা যাবে না। শাসনের দিক দিয়ে চীন এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের চেয়ে উন্নত। কারোনা মোকাবেলায় সক্ষমতা তাদের উত্তম শাসন-শৃঙ্খলার প্রমাণ বহন করে। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে এক লাখেরও কম মানুষের মধ্যে এর সংক্রমণ হয় আর আট হাজারের কম মানুষ এতে প্রাণ হারায়। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র করোনা মোকাবেলায় বিষম বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। ২৬ লাখের বেশি আমেরিকান এতে আক্রান্ত, এক লাখ ২৮ হাজারের বেশি প্রাণ হারিয়েছে। ভারতে করোনা রোগী সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে, প্রাণ গেছে সাড়ে ১৬ হাজারের বেশি। স্বৈরাচারী মনোভাবের দিক দিয়ে এখন আমেরিকা-ভারত ও চীনের মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। সুতরাং চীনাদের তাদের চেয়ে অধম বলার সুযোগ কম।
গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত এর শুভাকাক্সক্ষীরা। ইউরোপ থেকে আমেরিকা সব জায়গায় এর অবনতি ঘটছে। ফ্রিডম হাউজের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, টানা ১৩ বছর ধরে গণতন্ত্র তার স্বাস্থ্য হারাচ্ছে। ১৭৭৬ সাল জন্ম থেকে আমেরিকা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক শাসনের পৃষ্ঠপোষক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও তা রক্ষায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে তারা। এ জন্য হাজার হাজার মার্কিন নাগরিকের প্রাণও গেছে বিদেশে। দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও চিলিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দারুণ সফলতাও পেয়েছে তারা। ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ভেনিজুয়েলা কঠিনভাবে ব্যর্থও হয়েছে। সফলতা ও ব্যর্থতার মধ্যে গণতন্ত্র ফেরি করার কাজ আমেরিকার এগিয়ে নিয়ে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে ইতিহাসের গতিপথ উল্টে দিলেন। তিনি আমেরিকার সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট নিজেই স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে চাচ্ছেন। এ অবস্থায় বাকি বিশ্বের গণতন্ত্রের কী হবে?
পরামর্শ এসেছেÑ ‘গণতন্ত্র’ বাদ দিয়ে আমেরিকার উচিত ‘গুড গভর্নেন্স বা উত্তম শাসনের’ ফেরিওয়ালা হওয়া। কারণ গণতন্ত্র এখন তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। এটি একটি ধোঁয়াশাপূর্ণ ধারণায় পরিণত হয়েছে। স্বৈরাচারী সরকারগুলো একে এতটাই অপব্যবহার করেছে, মানুষ এর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। আবার স্বৈরাচারীরা নিজেদের উত্তম গণতান্ত্রিক শাসক বলে দাবি করে। গণতন্ত্রের বদৌলতে তারা এতটাই শক্তি অর্জন করে; তাদের কিছুই বলা যায় না। গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকরা বলেছিলেন, এতে সব ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী অ্যাকোমোডেড হবে। এতে ‘সব শক্তির উৎস হবে জনগণ’ বলে ঘোষণা রয়েছে। অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের পদ্ধতি। এর কোনোটিই এখন অনেক গণতান্ত্রিক দেশে নেই। এটি তাই এখন পুরোপুরিই দূষিত হয়ে গেছে।
করোনার ধাক্কা সামাল দিয়ে গণতন্ত্র পৃথিবীতে কি আবার শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারবে? বিশেষজ্ঞরা সম্ভবত এ ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু বলতে পারবেন না। এর সমাধান যে সমাজতন্ত্র নয়; তা আরো বহু আগে প্রমাণ হয়েছে। তা হলে কি বিশ্বের জন্য সামনে স্বৈরাচারীর স্বর্গভূমি রচিত হবে, না আরো বড় কোনো করোনা পুরো পৃথিবীকে আরো বেশি নৈরাজ্য, গোলোযোগ, বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দেবে? দেশ শাসনের আর কোনো ভালো নীতি যে মানুষের হাতে নেই। একটি ভালো নীতি কখনো কল্যাণকর কিছু করতে পারে না, যদি না এর বাস্তবায়নকারী পেছনের মানুষটি ভালো না হয়। পেছনের মানুষটি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। পৃথিবীর মানুষের দুর্দিনও তাই বাড়ছে। হ
jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement