১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্মরণ : নবাব মীর কাসিম

-

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬০ সালের ২০ অক্টোবর মীর জাফরকে অপসারণ করে তার জামাতা মীর কাসিমকে মুর্শিদাবাদের মসনদে অধিষ্ঠিত করে। তার রাজত্বকাল ছিল ১৭৬০-১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দ। নবাব সিরাজউদ্দৌলার গ্রেফতারের ব্যাপারে তিনি যে পাপ করেছিলেন তার জন্য তিনি আজীবন অনুতাপ করে গেছেন। মীর কাসিম নওয়াব হয়ে অচিরেই স্বীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর হন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। প্রথম থেকেই কলকাতা কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্য তার প্রতি সন্দেহ ও শত্রুতার মনোভাব পোষণ করতে থাকেন। মীর কাসিম মুঘল বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের স্বীকৃতি সনদ লাভ করেন এবং তাকে বিহার ছেড়ে যেতে প্রলুব্ধ করেন। রাজকোষের আয় বাড়ানোর জন্য ব্যয়ভার সঙ্কোচন করেন। ধনবান নগরবাসীর অতিরিক্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং জমিদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন। শাসনকার্যে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার যে অন্যায় অধিকার ছিল, সে সুযোগে ইংরেজ কর্মচারীরা ব্যক্তিগত ফায়দা ভোগ করতে থাকে। ফলে নবাবের প্রভূত আর্থিক ক্ষতি হয়। তিনি ইংরেজ গভর্নরের কাছে এর প্রতিকার দাবি করেন। কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় মীর কাসিম পরবর্তী সময়ে দেশীয় বণিকদের ওপর থেকে বাণিজ্য শুল্ক উঠিয়ে দেন। এ কারণে নবাব মীর কাসিমের সাথে ইংরেজদের পাটনায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। কাটোয়া, ঘেরিয়া, মুর্শিদাবাদ, উদয়নালা ও মুঙ্গেরে নবাব বাহিনীর সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়েছিল। নবাব পরাজিত হয়ে পাটনায় পালিয়ে যান। পাটনা থেকে তিনি অযোধ্যার দিকে অগ্রসর হন। অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং রাজ্যহারা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ইংরেজদের বিরুদ্ধে তার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন।
১৭৬৪ সালের ২২ অক্টোবর বিহারের বক্সারে সম্মিলিত বাহিনী যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়। মীর কাসিম ছিলেন বুদ্ধিমান, তেজস্বী, কর্মদক্ষ এবং সর্বোপরি স্বাধীন প্রকৃতির নবাব। তিনি ইংরেজদের হঠাতে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ জন্য অশেষ কষ্ট ও ত্যাগও স্বীকার করেছেন। দুঃখ দারিদ্র্য ভোগ করে ১৭৭৭ সালের ৬ জুন শাজাহানাবাদের এক অখ্যাত পল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন। ভগ্নস্বাস্থ্য ও দুর্দশার মধ্যে ছদ্মবেশে নবাবের জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছিল।
মো: জোবায়ের আলী জুয়েল


আরো সংবাদ



premium cement