২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দখল দূষণে ছাত্ররাজনীতি

-

ছাত্র আর রাজনীতি দুটোই মহৎ বিষয়। ছাত্রের প্রথম কাজ ছাত্রত্বের দায়িত্ব পালন করা। লেখাপড়া, ক্লাস ও নিরাপদে শিক্ষাবর্ষ সমাপ্ত করা। ছাত্রের মৌলিক দায়িত্ব হলো, নির্দিষ্ট বিষয়ে সেশন শেষ করা। শিক্ষার সাথে সামাজিক সৃজনশীলতামূলক কর্মকাণ্ড, ক্লাব, সংগঠন, খেলাধুলার সাথে নিজ প্রয়োজন ও সামাজিক দায়বদ্ধতায় সময় অতিবাহিত করা যায়। বাস্তবে একজন শিক্ষার্থীর মূল দায়িত্ব হলো নির্দিষ্ট ক্লাস ও সেশন শেষ করা। একজন ছাত্রের নিজের নিরাপদ শিক্ষার জন্য যে রকম ক্যাম্পাস চাই, অপর সতীর্থের জন্যও সে রকম হওয়া চাই। একজন নিরাপদ ও অপরজন অনিরাপদÑ তেমন বিদ্যাপীঠ কাম্য নয়। ছাত্রদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা, শৃঙ্খলাবোধ থাকতে হবে। একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্নেহবোধ থাকাটা এক ক্যাম্পাসের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যতম দায়িত্ব হলো শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ বজায় রাখা এবং ছাত্রছাত্রী ও সতীর্থদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ প্রতিষ্ঠা করা। এ সমাজ বাস্তবে কী দেখতে পাচ্ছে? আমাদের ছাত্র প্রজন্ম কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? শিক্ষা-দীক্ষায় বিজ্ঞান গবেষণায় পৃথিবী যখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় নতুন নতুন আবিষ্কারের দিকে যাচ্ছে, তখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ক্ষুধা দারিদ্র্য শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা আমাদের মতো জাতি কোন দিকে যাচ্ছে? ভাবতে অবাক লাগে, স্বাধীনতার পর এ জাতির অনেক আশা ও স্বপ্ন ছিল। বাস্তবে আশা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে অসংখ্য বাধা রাজনীতির মারপ্যাঁচে। দেশ স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মা-বোনের রক্ত আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে। তরুণ-যুবক তাদের তাজা রক্ত ঢেলেছিল সেদিন। বুক ভরা আশা আর হাজার স্বপ্ন ছিল তাদের চোখে মুখে। স্বাধীনতার পরবর্তী ৪৮ বছরের বাংলাদেশ নানাভাবে নানা ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করলেও মানবীয় গুণে পরিপূর্ণ শিক্ষা, সমাজ, ক্যাম্পাস গড়ে উঠতে পারেনি। প্রশাসনের লাগামহীন দুর্নীতির সাথে শিক্ষার নীতি-নৈতিকতা পর্যুদস্ত। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিশুশিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কোথাও শৃঙ্খলা দেখছে না সমাজ। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনোভাবেই শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্ররাজনীতির একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় থাকলেও সে ইতিহাস ম্লান হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য সেক্টরের সাথে ছাত্ররাজনীতিও কলুষিত হয়ে পড়ছে। ছাত্রদের যৌবনকে ব্যবহার করে একটি অশুভ শক্তি ক্ষমতার প্লাটফর্ম পরিবর্তন চায়। ছাত্রদের ক্ষমতায় ওঠার অথবা প্রতিপক্ষকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে যা অভিভাবক ও সমাজের জন্য উদ্বিগ্নের কারণ। ছাত্রসমাজ তাদের ভালো মন্দ অনেক ক্ষেত্রে পারে না বলেই এ শক্তিকে ব্যবহার করে অশুভ শক্তি তাদের হীন উদ্দেশ্য হাসিল করে। দেশী-বিদেশী এসব ষড়যন্ত্রের শিকার দেশের গোটা শিক্ষাক্ষেত্র। এ দেশের রাজনীতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেগে আছে বিশৃঙ্খলা ও মারামারি। রাজনীতি কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোথাও শৃঙ্খলা মিলছে না। অস্থিরতা যেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনে, তেমনিভাবে দেশের সবগুলো উচ্চশিক্ষা ক্যাম্পাসে দখল ও ছাত্রদের শিক্ষা হননে অপশক্তি লেগে আছে। ফলে সতীর্থ ছাত্রদের নানা সংগঠনের মধ্যে হানাহানি, বিভাজন, মারামারি নিত্যদিনের সঙ্গী। সেখানে ছাত্রদের জীবনহানির আশঙ্কা থাকছে। শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে কখনো নিরাপদ থাকছে না। তাদের নিরাপদ থাকতে দেয়া হচ্ছে না। রাজনীতির মোড়ল, ধান্ধাবাজ তথাকথিত নেতারা ক্ষমতার সিঁড়ি ধরে রাখার জন্য ছাত্রসমাজকে ব্যবহার করে থাকেন। দুর্ভাগ্য ও দুঃখজনকভাবে বলতে হয় উন্নত দেশের কোথাও এ ধরনের ছাত্র রাজনীতি চোখে পড়ে না। আমাদের ছোট দেশ, গরিব দেশ অপ-ছাত্ররাজনীতির শিকার। এ দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী দুঃখী কৃষকসহ মেহনতি মানুষের সন্তানরা শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে মা-বাবার কাছে লাশ অথবা পঙ্গু হয়ে ফিরে আসে। মর্মান্তিক এসব দৃশ্য আর দেখতে ভালো লাগে না। দেশের সব সেক্টরের উন্নয়ন অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও ছাত্ররাজনীতির প্রত্যাশিত কোনো পরিবর্তন দেখছি না। সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যদি ছাত্ররাজনীতি হয়, তাহলে কোনো কথা নেই। যদি দেশের সুশাসনের জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা নিয়ে ছাত্ররাজনীতি চলতে থাকে, তাহলে সেখানে কোনো কথা নেই। অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রআন্দোলন প্রয়োজন। কিন্তু ছাত্ররাজনীতিকে ব্যবহার করছে অশুভ শক্তি ক্ষমতা দখলের জন্য অথবা খাসজমি, পাহাড়, টিলা, নদী, খাল, চর ও ক্যাম্পাস দখলের জন্য,
তখন আর কোনো অভিভাবক স্থির থাকতে পারেন না। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে যেসব রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংঘটিত হচ্ছে, এসব কার্যকলাপে অভিভাবকসমাজ মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছে না। বলতে গেলে এখন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনটিই ক্যাম্পাসে সক্রিয়। অন্যরা গা ঢাকা দিয়েছে। বিরোধীদলীয় রাজনীতি তাদের মতপ্রকাশ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সভা-সমাবেশ করতে অনেকটা বাধা পাচ্ছে। এ সময় স্বাধীনভাবে সবখানেই বিচরণ ও সভা-সমাবেশ ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনরাই করে যাচ্ছে। তাদেরকে প্রতিপক্ষ বাধা দিচ্ছে না। তবুও তারা অন্তঃকোন্দলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সঙ্ঘাত সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এসবের জন্য তাদের নেতারাই দায়ী। ছাত্ররাজনীতি আমাদের দেশে ক্ষমতায় ওঠানামার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সেটি দেশ, জাতি, অভিভাবক কারো জন্য শুভ নয়। জাতি এ ধরনের রাজনীতি থেকে নিরাপদ এমন ক্যাম্পাস প্রত্যাশা করে। হ
ইমেইল : mh.hoqueansari@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ

সকল