২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : মানবপাচার ভয়ঙ্কর অপরাধ

-

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৯৪ সালে এক সভায় ‘মানবপাচার’ বলতে বুঝানো হয়েছেÑ ভয় দেখিয়ে বা জোর করে অথবা অন্য কোনোভাবে জুলুম, হরণ, প্রতারণা, ছলনা, মিথ্যাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে, ভুল বুঝিয়ে, দুর্বলতার সুযোগে অথবা যার ওপর একজনের কর্তৃত্ব আছে অর্থ বা সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে, তার সম্মতি আদায় করে, শোষণের উদ্দেশ্যে কাউকে সংগ্রহ, স্থানান্তরিত ও হাতবদল করা, আটকে রাখা বা নেয়ার নাম হলো ‘মানবপাচার।’ বাংলাদেশে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছেÑ ‘মানবপাচার’ অর্থ হলো কোনো ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে বা বল প্রয়োগ বা প্রতারণা করে বা ওই ব্যক্তির আর্থসামাজিক বা পরিবেশগত বা অসহায়ত্ব কাজে লাগিয়ে বা অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধায় লেনদেন করে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণে দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে যৌন নির্যাতন, নিপীড়ন বা শ্রমশোষণ অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেয়া তাই পাচার বলে গণ্য হবে।
দেশে মানবপাচার নানা পথে সঙ্ঘটিত হচ্ছে। এটি আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। নারী ও শিশু পাচারকারীর সাথে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক চক্র জড়িত। নারী ও শিশুরাই পাচারের প্রধান বলি।
বাংলাদেশে ২০০০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধগুলো কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রণীত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’-এর কয়েকটি ধারায় পাচারের শাস্তি বর্ণিত হয়েছে। ২০০৩-এ এই আইনের কিছুটা সংশোধনী আনা হয়। এ আইনে অপরাধ সঙ্ঘটনকারী ব্যক্তি অনধিক যাবজ্জীবন এবং ন্যূনতম পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। সংঘবদ্ধ মানবপাচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অপরাধে প্ররোচনা দিলে অনধিক সাত বছর ও তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
মানবপাচারের সাথে যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতা থাকে বা ওই দেশে কোনো সাক্ষী, অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ, বিবাদি বা অপরাধে সহায়তাকারী ব্যক্তি থাকে, তবে সেই দেশের সাথে সমঝোতা স্মারক সই করা যাবে। চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত এমন যৌথ আইনি সহায়তা আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ ছাড়া বিদেশে বসবাসরত কোনো বিবাদির বিরুদ্ধে এ আইনের অধীনে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে এই অধ্যায়ে উল্লিখিত বিধানের অতিরিক্ত হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৯৩ক, ৯৩খ এবং ৯৩গ ধারায় প্রক্রিয়া যতটুকু প্রয়োগযোগ্য, ততটুকু প্রয়োগ করা হবে।
কোনো ব্যক্তি কাউকে জোরজবরদস্তি করে বা লোভ দেখিয়ে পতিতাবৃত্তি অথবা অন্য কোনো ধরনের যৌন শোষণের কাজে নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে দেশের অভ্যন্তরে আনলে অথবা দেশের একস্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠালে তার অনধিক সাত বছর এবং অন্যূন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হবে।
মানবপাচার মানবাধিকারের একটি চরম লঙ্ঘন এবং সভ্যতার প্রতি উপহাস, যা সমাজে দরিদ্রতা, অশিক্ষা, অজ্ঞতা, বিপুল জনসংখ্যা, আবাসনস্বল্পতা ইত্যাদি কারণে ঘটে থাকে। বাংলাদেশে এটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সরকার মানবপাচার প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন করেছে। এর জন্য রয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় ও জেলা কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনা। তবুও মানবপাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সাধারণ জনগণ, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবী, পেশাজীবী, গণমাধ্যমকর্মীসহ দেশের বিবেকবান সব মানুষের স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে। হ


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল