২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে করণীয়

-

আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিকের পাঁচ মৌলিক অধিকারের মধ্যে একটি খাদ্যের অধিকার। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা এর মধ্যেই পড়ে। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ঋঅঙ) মতে, খাদ্য নিরাপত্তা হলো এমন একটি অবস্থা পৃথিবীর সব স্থানের সব মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিন্তে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় পছন্দের খাবার পাওয়ার দৈহিক ও আর্থিক সুযোগ সৃষ্টি করা। যে খাদ্যে কোনো ক্ষতিকারক কেমিক্যাল নেই, জীবাণু দিয়ে দুষ্ট নয়, প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিকভাবে তৈরি, সেটাই নিরাপদ খাবার। সাম্প্রতিককালে খাদ্যে ভেজালের ছড়াছড়ি। মানুষ কেন খাদ্যে ভেজাল দেয় তার কারণ পর্যালোচনা করলে ভোগী মনোবৃত্তির পরিচয় মেলে। স্বল্প সময়ে যাতে অধিক উপার্জন করা যায় সে দিকেই ভেজালকারীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে। এতে পরিশ্রম কম হয়, কিন্তু রাতারাতি বিত্তবান হয়ে ওঠা যায়। স্বার্থান্ধ মানুষ নিজেদের স্বার্থের কথা মনে রেখে ভেজাল দিতে গিয়ে মানুষের যে চরম সর্বনাশ সাধন করে তা কখনোই তারা ভেবে দেখে না। অন্যের ভালো-মন্দ বিবেচনা করার মতো বিবেক তাদের নেই। ভেজালমিশ্রিত জিনিস খাওয়ার ফলে নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সহজেই পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেসব রাসায়নিক পদার্থ নিরাপদ খাদ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার অন্যতম ফরমালিন। এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে মূলত লাশের সংরক্ষণসহ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে। কিন্তু দ্রুত পচন রোধে সহায়ক বিধায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ফরমালিনকে একরকম সহজ মুনাফার পদ্ধতি হিসেবে খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করছে। ফলমূল, শাকসবজি ও মাছ-গোশতে এর ব্যবহার যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বস্তুত বর্তমানে এর অপব্যবহারই হচ্ছে বেশি। জটিল প্রক্রিয়ায় তৈরি ফাস্টফুড, রাস্তার খোলা খাবার এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরি করছে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি। পাশাপাশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু ভেজাল ও ক্ষতিকর খাদ্য মানুষের সুস্থতার বদলে অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অনিরাপদ খাদ্যে নানা জটিল রোগের বিস্তার ঘটছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য তা হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। সরকার ২০০৯ সালে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯’ এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করেছে। নিরাপদ খাদ্য আইনেÑ মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথবা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য বা উহার উপাদান বা বস্তু, কীটনাশক বা বালাইনাশক, খাদ্যের রঞ্জক বা সুগন্ধি বা অন্য কোনো বিষাক্ত সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়া সহায়ক কোনো খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণে ব্যবহার বা অন্তর্ভুক্তি অথবা উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ মজুদ, বিপণন বা বিক্রয় করলে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর, কিন্তু অন্যূন চার বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অন্যূন পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আবার একই অপরাধ সংঘটন করলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এ ছাড়া খাদ্য নিয়ে মিথ্যা বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন ছাড়া খাদ্যপণ্য বিপণন, ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত কাউকে দিয়ে খাদ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে ভেজালবিরোধী তৎপরতা লক্ষ করা গেলেও পরবর্তীতে তা অনেকটা ভাটা পড়ে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এ যেসব কার্যকলাপকে অপরাধ গণ্য করা হয়েছে তা হলোÑ আইন ও বিধি দিয়ে নির্ধারিত হওয়া সত্ত্বেও পণ্যে মোড়ক ব্যবহার না করা; মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা; সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা; ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য, ওষুধ বা সেবা বিক্রি করা; ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা; খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্য মিশ্রণ করা; মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাসাধারণকে প্রতারিত করা; প্রতিশ্র“ত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি বা সরবরাহ না করা; ওজনে কারচুপি করা; বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রে প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শন করা; পরিমাপে কারচুপি করা; দৈর্ঘ্য পরিমাপক কার্যে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছুতে কারচুপি করা; পণ্যের নব প্রস্তুত বা উৎপাদন করা; মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা; সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য করা এবং অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দিয়ে সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটানো।
ভোক্তা অধিকার আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে পারলে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। পাশাপাশি দেশের প্রধান খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটকে (বিএসটিআই) আরো সতর্ক ও সক্রিয় হয়ে ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে হবে। শহরের দোকান ও রেস্টুরেন্টে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানোর পর কিছুদিন ভেজালমুক্ত খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়, কিন্তু পরে যেই-সেই হয়ে যায়। এর থেকে পরিত্রাণে আমাদের সমাজিকভাবেও নীতি-নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সৎ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে সততা, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার আলোকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যারা ভেজাল খাদ্য তৈরি করে তাদের তৈরি ভেজাল দ্রব্যের ফাঁদে তারা নিজেরা কিংবা তাদের পরিবার পরিজনও পতিত হতে পারে কোনো না কোনো সময়। ভেজাল প্রতিরোধে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নৈতিকতাবোধ, উৎপাদক, বিপণনকারী, ভোক্তা সবাইকেই সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। হ
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার অবৈধ গাড়ি কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগে বিভেদ শরীয়তপুরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভুট্টার আবাদ মিরসরাইয়ে ৩ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি আলুতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা ফরিদপুরের পদ্মাপাড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ২৩ এস্কেভেটর ও ৮ ট্রাক ফেলে পালালো বালুদস্যুরা বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা গলাচিপায় নির্বাচনী মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নাটোরে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীবকে শোকজ হোসেনপুরে গ্রামের গ্রাহকরা দিনে এক ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না ঈদগাঁওতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ৭ প্রার্থীকে জরিমানা গাজীপুরে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন

সকল