২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

-

১. সতর্কতামূলক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা : মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে। এ কারণে আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো’ (সূরা আননিসা-৭১)। হাদিসে শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমার ওপর তোমার শরীরেরও অধিকার রয়েছে’ (বুখারি, হাদিস নং-১৯৬৮)। ২. আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হওয়া : আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোনো বিপদই আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যা আমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করেছেন তা ছাড়া কোনো কিছুই আমাদের স্পর্শ করবে না; তিনিই আমাদের অভিভাবক। আল্লাহর ওপরই মুমিনদের নির্ভরশীল হওয়া উচিত’ (সূরা আত তাওবা-৫১)। ৩. লকডাউন : যে এলাকা মহামারী আক্রান্ত হয় সে এলাকার প্রবেশ এবং সেখান থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়া। এ সম্পর্কে মহানবী সা: বলেন, ‘যদি তোমরা শুনতে পাও কোনো জনপদে প্লেগ বা অনুরূপ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তবে তোমরা তথায় গমন করবে না। আর যদি তোমরা যে জনপদে অবস্থান করছ তথায় এর প্রাদুর্ভাব ঘটে তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না’ (বুখারি, হাদিস নং-৫৩৯৬)। ৪. আইসোলেশন : মহামারী রোধে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পৃথক রাখাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘আইসোলেশন’ বলা হয়। মহানবী সা: এ সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন, ‘অসুস্থকে সুস্থের কাছে নেয়া হবে না’ (বুখারি-৫৭৭১ ও মুসলিম-২২২১)। ৫. হোম কোয়ারেন্টিন : সুস্থ ব্যক্তি মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় জনবিচ্ছিন্ন থাকাকে কোয়ারেন্টিন বলা হয়। বিভিন্ন হাদিসে এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমনÑ মহানবী সা: বলেন, ‘কোনো বান্দা যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে ধৈর্যসহকারে, সওয়াবের নিয়তে এ বিশ্বাস বুকে নিয়ে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তাকদিরে যা চূড়ান্ত রেখেছেন তার বাইরে কোনো কিছু তাকে আক্রান্ত করবে না, তাহলে তার জন্য রয়েছে শহীদের সমান সওয়াব’ (বুখারি-৩৪৭৪ ও মুসনাদে আহমাদ-২৬১৩৯)। ৬. মুসাফাহা ও কোলাকুলি এড়িয়ে চলা : এর মাধ্যমে সংক্রমণের ভয় থাকে। রাসূলুল্লাহ সা: সাকিফের প্রতিনিধি দলের মধ্যকার কুষ্ঠরোগীকে হাতে হাতে বাইয়াত না দিয়ে লোক মারফত বলে পাঠিয়েছিলেন, ‘তুমি ফিরে যাও। আমি তোমার বাইয়াত নিয়ে নিয়েছি’ (মুসলিম-২২৩১)। ৭. সার্বিকভাবে পরিচ্ছন্ন থাকা : কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুমিনদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন’ (সূরা বাকারা-২২২)। হাদিসে পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। শরিয়তের বিভিন্ন বিধানকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে :
অজুর মাধ্যমে মানুষের শরীরের অনাবৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা হয়; মেসওয়াকের মাধ্যমে মুখের সব ধরনের জীবাণু ধ্বংস হয়; সামগ্রিকভাবে সর্বক্ষণ ও বিশেষত সালাতে পরিধেয় কাপড় পরিচ্ছন্ন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আল্লাহ বলেনÑ ‘তোমার কাপড় পরিষ্কার রাখো’ (সূরা আল-মুদ্দাচ্ছির-৪)। ৮. গুজবে কান না দেয়া আর গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা : ইসলামে যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেনÑ ‘কোনো অসমর্থিত ব্যক্তি কোনো খবর দিলে তোমরা তা যাচাই করো’ (সূরা আল-হুজুরাত-৬)। এ সম্পর্কে মহানবী সা: বলেন, ‘যাচাই না করে শোনা খবর বিশ্বাস করা মিথ্যুক হওয়ার নামান্তর’ (মুসলিম-৫)। ৯. ঘরে নামাজ আদায় করা : আপৎকালীন অবস্থায় মহানবী সা: সাহাবিদের বাড়িতে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেন। তিনি মুয়াজ্জিনকে আজানের মধ্যে বলতে বলেন, ‘আলা সাল্লু ফি রিহালিকুম’ (তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে নামাজ আদায় করো) (বুখারি-৬৬৬, মুসলিম-৬৯৭)। তার ইন্তেকালের পর সাহাবিরাও একইভাবে আমল করতেন। সহিহ বুখারিতে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা: থেকে এর প্রমাণ বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি মুয়াজ্জিনকে নির্দেশ দেন আজানে ‘সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম’ (তোমরা বাড়িতে সালাত আদায় করো) অংশটি যোগ করার জন্য (বুখারি-৬৬৮, মুসলিম-৬৯৯)। ইসলামী শরিয়াহর উদ্দেশ্য ও মহামারীর গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় মিসর, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ফিকহ কমিটি ও ইসলামী ফাউন্ডেশন মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি সর্বনি¤œ পর্যায়ে নিয়ে আসার পক্ষে মত দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সবাইকে ঘরে ইবাদত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। ১০. গরিব-অসহায় ও নি¤œআয়ের লোকদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘোষিত লকডাউনের এ দিনগুলোতে গরিব-অসহায় ও নি¤œআয়ের মানুষের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা বিত্তবানদের দায়িত্ব। এ মহৎ গুণের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, ‘খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে, ইয়াতিম আত্মীয়স্বজনকে অথবা নিঃস্ব মিসকিনকে’ (সূরা আল-বালাদ-১৪-১৬)। ১১. ভাইরাস প্রতিরোধে ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা : ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম সরকার জনকল্যাণের বিবেচনায় কোনো নির্দেশ দিলে এবং শরিয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক না হলে তা মান্য করা অপরিহার্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসূলের ও তোমাদের নেতৃস্থানীয়দের’ (সূরা আন-নিসা-৫৯)।
এ কঠিন সময়ে আমাদের উচিত বেশি বেশি; ১. তওবা; ২. ইস্তিগফার; ৩. নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ; ৪ কুরআন তিলাওয়াত; ৫ শাবান মাসের নফল রোজা; ৬. তাহাজ্জুদ নামাজ ও ৭ রাসূলুল্লাহ সা:-এর ওপর দরুদ পাঠ করা। হ
লেখক : অধ্যাপক, আরবি বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 


আরো সংবাদ



premium cement