২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা মোকাবেলায় শিক্ষক, ইমাম-খতিবদের ভূমিকা

-

সারা বিশ্ব এখন করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত। চীনের উহান প্রদেশে ভাইরাসটি প্রথম আঘাত হানার পর তা আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশে করোনা বিস্তৃতি লাভ করে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক লাখ। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস হানা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন। এরই মধ্যে সারা দেশে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সরকার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উন্নত বিশ্ব যেখানে ভাইরাসটি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের মতো দেশে শুধু সরকারের পক্ষে এই দুর্যোগ মোকাবেলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার ব্যাপক গণসচেতনতা। জনগণকে সচেতন করতে না পারলে ব্যাপক জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশে সরকারের একার পক্ষে এই মহাদুর্যোগ সামাল দেয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
গণসচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সমাজে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন তাদের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মানিত শিক্ষক, মসজিদের সম্মানিত ইমাম-খতিব, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীলসমাজ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সমাজে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব রাখেন। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, এ ক্ষেত্রে শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম-খতিবদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে সব মিলিয়ে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিসহ শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় পাঁচ কোটির অধিক মানুষ। শিক্ষকরা সম্মানীয় নাগরিক হিসেবে সমাজে সমাদৃত। তারা সমাজ বিনির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ দেশের শিক্ষকসমাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন শিক্ষক যখন জনগণকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতার ব্যাপারে সক্রিয় হবেন তা অধিক ফলদায়ক হবে। সাধারণ মানুষ শিক্ষকদের কথাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
মসজিদের ইমাম-খতিবসহ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরাও জাতির এই চরম দুর্যোগময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের ইমাম-খতিবরা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। সমাজে সবাই তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখে থাকেন। সম্মানিত ইমাম-খতিবরা সমাজে যথেষ্ট প্রভাব রাখেন। তারা যখন কোনো বিষয়ে মতামত দেন, সমাজ তা সহজেই গ্রহণ করে। করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগময় সময়ে জনগণকে আতঙ্কিত না করে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলার জন্য সমাজে ইমাম-খতিবরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগময় মুহূর্তে জনগণ আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বাজার অস্থির করে তুলেছে। সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা রাতারাতি চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়িয়ে অধিক মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যে সময় দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত, সেই মুহূর্তে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অনৈতিক প্রতিযোগিতা রোধ করা শুধু সরকারের একার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সর্বসাধারণের দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সহযোগিতার বাড়িয়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রেও শিক্ষকসমাজ ও মসজিদের ইমাম-খতিব, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া এবং সুশীলসমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারদের কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশে অনেক অভিজ্ঞ ও সক্ষম ডাক্তার আছেন। তাদের সরকারি উদ্যোগে এবং ব্যবস্থাপনায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। বিশেষ করে চিকিৎসাক্ষেত্রে এসব প্রবীণ ব্যক্তির অভিজ্ঞতা এই দুর্যোগে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাংলাদেশ করোনাভাইরাস এখনো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে না পড়লেও, ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সরকার তার সাধ্যমতো বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তথাপি এক শ্রেণীর মানুষ অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এ জন্য তারা বেছে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে। তা যেহেতু এখন অনেক শক্তিশালী, সেহেতু এসব অপপ্রচারে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। উচিত সব রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে, সম্মিলিতভাবে দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেশের এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা। আশার কথা হলো, দেশী-বিদেশী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীনের বিপুল চিকিৎসা সামগ্রীসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রেরণ এবং একটি বিদেশী পোশাক তৈরি করার কোম্পানি কর্তৃক বিপুল পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বাংলাদেশে তৈরির উদ্যোগ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চাই জাতীয় ঐক্য। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, দেশটা আমাদের সবার। যে জাতি যুদ্ধ করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে, সে জাতি কোনো দুর্যোগের কাছে পরাজিত হতে পারে না। প্রয়োজন সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। করোনাকে ভয় নয়, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে করতে হবে জয়। হ
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ও
সচিব, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়
salamshaju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৭ বাংলাদেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হিট অ্যালার্ট নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা ভান্ডারিয়ায় পিকআপ চাপায় বৃদ্ধ নিহত হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে?

সকল