২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্ম র ণ

একজন শিক্ষাবিদ ও কুরআন গবেষক

-

কুরআনের তিলাওয়াত চলছে। অত্যন্ত স্পষ্ট উচ্চারণ সুরে সুরে, ছন্দে ছন্দে অনায়াস ভঙ্গিতেÑ যেন বাবা কুরআন দেখেই পড়ছেন। প্রায়ই তিনি ফজর ও মাগরিবের নামাজ তিলাওয়াত জোরেই করতেন। অন্যান্য সূরাসহ পড়তেন আয়াতুল কুরসি, সূরা নূরের ‘আল্লাহু নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ...’ ‘আল্লাহ আকাশসমূহ ও জমিনের নূর’ (২৪:৩৫) বা ‘আওকা যুলুমাতি...’ ‘অথবা অথৈ সাগরের বুকে ঘোর অন্ধকার’ (২৪:৪০)। যখনই এ আয়াতগুলো শুনতাম, আমার মনে পড়ে যেত, বাবা কিভাবে খরমযঃ টঢ়ড়হ খরমযঃ বইটিতে হৃদয়গ্রাহীভাবে সূরা নূরের আয়াতগুলো ব্যক্ত করেছেন বিজ্ঞানের আলোকে।
‘আল্লাহ যাকে নূর থেকে বঞ্চিত করেছেন, তার ভাগ্যে কোনো নূর নেই’; মনে হতো তিলাওয়াতের সময় তিনি ওই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছেন এবং তাঁর নূর সংগ্রহ করে আল্লাহর আরো নৈকট্য লাভ করছেন। তিনি গত বছর আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন; কিন্তু রেখে গেছেন অসংখ্য স্মৃতি।
বাবার চলাফেরা কথাবার্তায় প্রকাশ পেত আল্লাহ তায়ালার প্রতি অগাধ বিশ্বাস। তিনি উঠতে, বসতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন। আর নির্দিষ্ট একটি সুরে বলতেন একটি দোয়া ‘রাব্বিশরাহলি সাদরি ওয়া ইয়াস সিরলি আমরি ওয়াহলুল উকদাতাম মিললিসানি ইয়াফকাহু ক্বাওলি’, অর্থ ‘হে আমার রব, আমার অন্তর প্রশস্ত করে দাও, আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও এবং আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ ছোটবেলা থেকে শুনতে শুনতে দোয়াটি আমার মুখস্থ হয়ে গেল। মুসা আ: এই দোয়াটি করেছিলেন, যা কুরআনের সূরা ত্বাহায় (২৫-২৮) আছে। তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, স্বার্থহীন, উদার, ক্ষমাশীল, মিতভাষী, মিতব্যয়ী, সাদাসিধে, স্বল্পাহারী ও প্রচারবিমুখ। আল্লাহ তাকে সৌন্দর্য, পারিবারিক মর্যাদা, জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য, উচ্চপদ দিয়েছিলেনÑ তথাপি ছিলেন মাটির মানুষ।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত অধ্যবসায়ী। যখন স্কুলে পড়ি, তখন বাবা কুরআন শরিফ নিয়ে লেখালেখি শুরু করলেন। তিনি আরবি ভাষা ও ব্যাকরণ নিয়েও গবেষণা শুরু করলেন। আরবি ভাষার পণ্ডিতদের সাহায্য নিতেন। বড় হয়েও কতবার দেখেছি, টেলিফোনেই কোনো আরবি শব্দের ধরন নিয়ে তিনি কথা বলছেন। তিনি একটি বিষয় জানার জন্য অনেক সময় ৮-১০টি বই দেখতেন মা অথবা অন্যের সাহায্য নিয়ে হলেও (যখন থেকে তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে লাগল)। ঈড়হপড়ৎফধহপব ড়ভ ঃযব কড়ৎধহ বইটি কিভাবে পড়তে হয়, তা বাবার কাছেই শেখা।
২০০৬-০৭ সালের দিকে আব্বা খুবই গবেষণা করছিলেন কুরআনের একটি আয়াত নিয়ে। আয়াতটি ছিল সূরা ওয়াক্বিয়ার, (৫৬:৭৫-৭৬) ‘মাওয়া ক্বিইন্ নুজুম-এর শপথ! নিশ্চয়ই তা এক মহাশপথ যদি তোমরা জানতে’। বাবা চিন্তাভাবনা করে জানালেন ‘মাওয়া ক্বিইন নুজুম’-এর অর্থ হলো ‘তারকারাজির উৎপত্তিস্থলের শপথ’। আমাকে বললেন, কুরআনের পাঁচ-ছয়টি তরজমা দেখে বলতে ওই অংশের অনুবাদ কী লেখা হয়েছে। তিনি কয়েকজন পণ্ডিত ব্যক্তিকে তার বাসায় ডাকলেন এবং আয়াতটি উত্থাপন করে তার নিজের ভাবনা তুলে ধরলেন। বাবার ভাবনাটি ছিল সুদূরপ্রসারীÑ যার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এখনো হয়তো চলছে। কুরআনে ওই রূপ বৈজ্ঞানিক তথ্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। বাবা কিভাবে ওই বিশেষ শব্দের গবেষণায় ডুবে আছেন, এটা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। তার মন ছিল অনুসন্ধিৎসু এবং বছরের পর বছর প্রয়োজন হলে তিনি একটা বিষয়ের পেছনেই সময় দিতেন।
কুরআনের আয়াত নিয়ে এরূপ গভীর চিন্তা তিনি অনেকবারই করেছেন। যেমনÑ ছোটবেলায় ইসলামিয়াতে সূরা ফালাকের অর্থ (প্রথম আয়াত) পড়েছি, ‘বল, আমি আশ্রয় চাচ্ছি প্রভাতের রবের নিকট।’ তিনি ব্যাপক ব্যাখ্যা দিলেন কুরআনের অন্য আয়াতের উদাহরণ টেনে (৬:৯৫), (৬:৯৬), (২৬:৬৪) যে আল্লাহ বস্তুত ফা-লিক বা দীর্ণকারী, যিনি অন্ধকার দীর্ণ করে সূর্যের আলো নিয়ে আসেন, বীজ মাটি দীর্ণ করে চারাগাছের রূপ নেয়, মাতৃজঠরের স্তর দীর্ণ করে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়, তেমনি অজ্ঞানতার অন্ধকার দীর্ণ করে জ্ঞানের আলো ফুটে ওঠে। এটা আরো ব্যাপক ধারণা দেয় পরাক্রমশালী আল্লাহ সম্পর্কে। আমার জীবনের হতাশা ও সমস্যার সময়ে এই একটি আয়াতের ওই রূপ অর্থ মনে অনেক সাহস জুগিয়েছে। অর্থাৎ জীবনের যেকোনো অন্ধকারকে আল্লাহ দীর্ণ-বিদীর্ণ করতে পারেন।
বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারে মোহাম্মদ ফেরদাউস খানের অবদান অবিস্মরণীয়। যদিও তিনি মূলত পদার্থ বিজ্ঞানী; কিন্তু প্রতিষ্ঠালাভ করেছেন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ (একুশে পদকপ্রাপ্ত) হিসেবে।
বহুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগে তিনি ৩০ মার্চ, ২০১৬ সালে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে
৯৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পেকুয়ায় জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১৪ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ : টিআইবি লেবাননে ইসরাইলি হামলায় ইরান সমর্থিত যোদ্ধা নিহত জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেলেন ১৭ ক্রিকেটার, নেই সাকিব-মোস্তাফিজ উত্তর গাজায় আবারো ইসরাইলের গোলাবর্ষণ ধামরাইয়ে তাপদাহে জনজীবন কাহিল, ডায়রিয়াসহ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশী কেএনএফ সংশ্লিষ্টতা : ছাত্রলীগ নেতাসহ কারাগারে ৭ স্থিতিশীল সরকার থাকায় দেশে উন্নয়ন হয়েছে : ওবায়দুল কাদের

সকল