২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাদের রক্ত সবচেয়ে সস্তা?

-

‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশে মুসলিম হত্যা কেন? বলেছেন ভারতের নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি আরো বলেছেন, ভারতের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার কারণ আছে। দিল্লিতে যা ঘটেছে ভারতবাসী হিসেবে আমি উদ্বিগ্ন।’ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে এক আলোচনা সভায় বিতর্কিত ও ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সারা ভারতে সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অমর্ত্য সেন এ কথাগুলো বলেছেন। দিল্লির সহিংসতায় ২ মার্চ পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৪৬-এ দাঁড়িয়েছিল। আহত তিন শতাধিক। দিল্লিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডবে নিহতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মোতাবেক, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ নিহতের সংখ্যা ছিল ২৭, পরদিন যা ৩৮-এ পৌঁছে। পরদিন শুক্রবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২-এ। উপরিউক্ত আলোচনা সভায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, ভারতে যা ঘটছে তা চলতে দেয়া যায় না, যাদের নির্যাতন করা হচ্ছে আর যারা নিহত হচ্ছেন তাদের মধ্যে মুসলমানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অনেক বেশি।’
দিল্লি চেম্বার অব কমার্স হিসাব করে দেখেছে, দিল্লির সহিংসতার ফলে প্রায় ২৫০০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে এবার। হিংসার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে অন্তত ৯২টি বাড়ি, ৫৭টি দোকান, ৫০০ গাড়ি, ছয়টি গুদামঘর, দুটি স্কুল, চারটি কারখানা ও চারটি ধর্মীয় স্থান। এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত দিল্লির শাহীনবাগে আবার জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সবাই লক্ষ করছেন যে, গুজরাট দাঙ্গার মডেল দিল্লিতেও। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা আর ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গা একই সূত্রে গাঁথা এবং দুটোর নেপথ্যে নরেন্দ্র মোদি। বিবিসি নিউজ বলছে, এবার কয়েক দিন ধরে দিল্লি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছে। ভারতের রাজধানীতে সর্বশেষ সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশকারী অমুসলিমদের নাগরিক হওয়ার অনুমতি দিয়েছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, এর ফলে ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের অভয়াশ্রমে পরিণত হবে ভারত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিলটি মুসলমানদের একঘরে করতে বিজেপির অ্যাজেন্ডার একটি অংশ। গত বছর এটি পাস হওয়ার পর ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয় এবং এর মধ্যে অধিকাংশ বিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরের পর বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা গিয়েছিলেন উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ এলাকায়। দু’দিন আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত হয় সেখানে। ‘এলাকাটিতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করত। তাদের বেশির ভাগই খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। কোনো দিন মনোমালিন্য দেখিনি আমি।’ তিনি এ কথা বলেছেন।
’৮০-এর দশকে ভারতের আসামে ঘটেছিল নেলী গণহত্যা। এরপর ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিমবিরোধী ভয়াবহ দাঙ্গায় অন্তত ৫০০০ মুসলমান শহীদ হয়েছিলেন। বিগত ৭০ বছর ধরে চলছে কাশ্মিরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। কাশ্মিরের মুসলমানরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত দীর্ঘকাল ধরে। স্মর্তব্য, ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে মুসলমানদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু তারাই আজ নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত। দুঃখজনক যে, বাংলাদেশের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ভারতের এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করছেন না। তদুপরি প্রকারান্তরে তাদের সাফাই গাইছেন। বাংলাদেশের সরকারও এসব ব্যাপারে সাধারণত নীরব। হয়তো তাদের ধারণা এসব ব্যাপারে সোচ্চার হলে ক্ষমতার রাজনীতিতে সুবিধা হবে না। এছাড়া রয়েছে প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্রটির নানা আগ্রাসন। তৎকালীন পাকিস্তান যেমন আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল, তেমনি ভারত আজ আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় আমাদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে অর্থাৎ বাংলাদেশে শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। আমরা সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে পানি, ট্রানজিট, পররাষ্ট্রনীতি এমনকি বাণিজ্যিক আগ্রাসন থেকেও মুক্ত নই। এ দিকে সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড থেকেও সীমান্তে বসবাসকারী মানুষও নিরাপদ নয়। রক্ত ঝরছে মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের। ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাসভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এশিয়া ও ইউরোপ যে দিকেই চোখ বুলান না কেন, দেখা যাবে প্রধানত মুসলমানদের রক্তে সিক্ত হচ্ছে মাটি। একটি অশুভ চক্র তাদের অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে বিভেদ বাড়িয়ে দিয়ে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে। সর্বাবস্থায় লক্ষণীয়, মুসলমান আজ উদ্বাস্তু বা শরণার্থী। একসময় যেসব দেশ তারা শাসন করত আজ সেসব দেশ তাদের হাত ছাড়া। এর একটি কারণÑ আজ মুসলিম উম্মাহ
শতধাবিভক্ত। এই সুযোগে শত্রুরা মুসলমানদের ধ্বংস সাধনে অধিকতর তৎপর। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ মুসলমানরা চরমভাবে মার খাচ্ছে। তাদের ইস্পাতকঠিন ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইসলামের মূলে যেতে হবে। প্রকৃত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে রাসূল সা:-এর পূর্ণ অনুসরণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে। ঐক্য না থাকার কারণে মুসলিম বিশ্বে জ্বলছে অশান্তির আগুন। মুসলিম রাষ্ট্র মোট ৫৭টি এবং মুসলমানদের সংখ্যা ১৮০ কোটি। ধর্মীয় দিক থেকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা প্রথম আর মুসলিমরা দ্বিতীয়। বৃহৎ সম্প্রদায় ওআইসি মুসলমানদের অভিভাবক কিন্তু তারা এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। কুরআন ও হাদিসে উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে ‘শেষ জামানায় মুসলমানরা ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। এর সুযোগ নিবে অমুসলিমরা। ৭২ দল যাবে জাহান্নামে। শুধু এক দল যাবে জান্নাতে।’
E.m: harunrashidar@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement