২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্ম র ণ : অধ্যাপক মুহম্মদ শামসুজ্জোহা

-

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিÑ এই দিনেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহা শহীদ হন।
’৬৯ সালের প্রারম্ভে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সমগ্র পাকিস্তানে। গণ-আন্দোলনের মুখে সরকারের ওঠে নাভিশ্বাস। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ খবর পৌঁছার পরপরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। মিছিল আর প্রতিবাদ সভায় ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। ১৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের লাঠি চার্জে বেশ কিছু ছাত্র আহত হন। ড. জোহা ছিলেন সেই মিছিলের অগ্রভাগে। লাঠি চার্জে কিছু ছাত্রের আহত হওয়া তার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। একজন ছাত্রের ওপর লাঠিচার্জের সময় তিনি ‘ঢাল’ হয়ে দাঁড়ান। ছাত্রটির মাথা ফেটে রক্ত পড়ছিল। তার মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন নিজের জামা ছিঁড়ে।
১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রতিবাদ সভায় শহীদ জোহা বলেছিলেনÑ ‘আমি ধন্য! ছাত্রের পবিত্র রক্তে আমার জামাটি রঞ্জিত হয়েছে তা যতœ করে রেখে দেবো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যে রক্তদান, তা কখনো বৃথা যায় না।’
পরদিন প্রতিবাদ সভায় ড. জোহাকে অশ্লীল গালি দিয়ে নৃশংসভাবে বেয়নেট চার্জ করা হয়। ড. জোহা ‘পানি পানি’ বলে কাতরাতে থাকেন। সেই অবস্থায় পুলিশ ছাত্রদের গুলি করার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত হয়। এ খবর পেয়ে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর শামস-উল-হক ঘটনাস্থলে যান। তাকে দেখে এক লেফটেন্যান্ট ড. জোহাকে তুলে নিয়ে শহরের দিকে যেতে থাকে। পথে তারা গুলি চালিয়ে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র নুরুল ইসলামকে হত্যা করে। হাসপাতালে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ড. জোহা শাহাদত বরণ করেন। শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সান্ধ্য আইন জারি করা হয় বেলা ২টা থেকে। ড. জোহার শাহাদত বরণের খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছার পরপরই জোহা স্যারের বাসায় সবাই সমবেত হয়। তার একমাত্র মেয়ে তখন মাত্র তিন বছরের শিশু। মিসেস জোহা তখন সংজ্ঞাহারা।
পরদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে সবার প্রিয় জোহা স্যারের নামাজে জানাজা শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাকে দাফন করা হয়। ড. জোহার ত্যাগ ও আদর্শ বৃথা যায়নি। তার এই মহান মৃত্যুর দুই বছর পরই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
আজ শহীদ জোহার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তার মাগফিরাত কামনা করে গৌরব বোধ করি সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ‘পরোক্ষ ছাত্র’ হিসেবে। আমিন! হ
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
ঊসধরষ: ংযধঃর৮৫১@ধড়ষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement