২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

স্মরণ : প্রফেসর প্রকৌশলী শাহজাহান

-

ড. মোহাম্মদ শাহজাহান ১৯৩৯ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরীর পাশের কেরানীগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। খেলাধুলাতেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। বক্সিং ও ক্রিকেট ছিল তার প্রিয় খেলা। ১৯৫৪ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৬ সালে আইএসসি পরীক্ষাতেও পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬০ সালে আহছানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমানে বুয়েট) থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে এমএস ডিগ্রি এবং ১৯৭০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর স্ট্রাথক্লাইড ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ইরাকের মোসুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন অধ্যাপনা শেষে দেশে ফিরে বুয়েটে পুনরায় অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। তিনি দেশ ও বিদেশে পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
ড. শাহজাহান দীর্ঘ দিন বুয়েটে অধ্যাপনা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। দুই টার্ম বুয়েটের নির্বাচিত ভিসি ছিলেন। তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট এবং বিআইটি কাউন্সিলের নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সমিতির সভাপতি ছিলেন। বিশেষ করে প্রকৌশলীদের বেতনবৈষম্য দূর করেছেন। তিনি নোয়ামির (ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউট) সভাপতি ছিলেন। তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অন্যতম ডিজাইনার ছিলেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকার অনেক দেশ সফর করেন। পানিবিশেষজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। দেশে ও বিদেশে ড. শাহজাহানের ১০০টিরও বেশি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছিল। একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ৪০টিরও বেশি প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। ড. শাহজাহান তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি জিন টেকনোলজি নিয়েও স্বপ্ন দেখেছেন। ২০০০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অসংখ্য গুণগ্রাহী, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী ও ছাত্রদের কাছ থেকে চিরবিদায় নেন। ১৯৮৭ সালে বুয়েটের পুরকৌশল অনুষদের ডিন এবং ১৯৯১ সালে ভিসি নিযুক্ত হয়েছিলেন। তারই উদ্যোগে বুয়েটে লেটার গ্রেডসহ কোর্স সিস্টেম চালু হওয়ার ফলে সেশনজট অনেক কমে যায়। ভিসি থাকাকালে সরকার তার সহযোগিতায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল কম্পিউটারাইজড করায় ফলাফলে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দিন কনভোকেশন হয়নি, সেখানে দু’বার কনভোকেশনের আয়োজন করেছিলেন। তার মতো প্রতিভাবান প্রকৌশলীর ব্যাপারে তৎকালীন সরকার একুশে পদক নিয়ে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল, তা দেশবাসী অবগত আছে। তৎকালীন সরকার তাকে পদকবঞ্চিত করে নিজেরাই অপমানিত হয়েছে। ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সেই পদক দিয়ে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই কলঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্ত করলেন। অত্যন্ত খ্যাতিমান হওয়া এবং তার আন্তর্জাতিক মানের অনেক প্রবন্ধ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকতা জীবনে তাকে শুধু এক বছরের জন্য এক্সটেনশন দেয়া হয়েছিল; যেখানে প্রায় সব শিক্ষককেই পাঁচ বছরের এক্সটেনশন দেয়া হয়। গার্ডিয়ান পত্রিকায় পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তার সাক্ষাৎকার। প্রতিটি সাক্ষাৎকারেই তার মৌলিক চিন্তার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানিচুক্তির মূল্যায়ন করে ড. এম শাহজাহান বলেছেনÑ চুক্তি অনুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করলে তাতে ভারতের দুরভিসন্ধি এবং বাংলাদেশ সরকারের অজ্ঞতা ও দেউলিয়াপনা প্রকটভাবে ধরা দেয়। মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করি। হ
ড. মো: আব্দুর রহিম
প্রফেসর, বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট


আরো সংবাদ



premium cement
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল কাহনেম্যান আর নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ খণ্ডালেন ওবায়দুল কাদের আটকের পর নাশকতা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো ইউপি চেয়ারম্যানকে বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন পণবন্দী জাহাজ ও ক্রুদের মুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝালকাঠিতে নিখোঁজের ২ দিন পর নদীতে মিলল ভ্যানচালকের লাশ বাল্টিমোর সেতু ভেঙে নদীতে পড়া ট্রাক থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে নিহত ৪ সুইডেনে বসবাসের অনুমতি বাতিল কুরআন পোড়ানো শরণার্থীর ভালো আছেন খালেদা জিয়া

সকল