২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আবহাওয়ার সঙ্কেত এবং জীবন ও সম্পদ রক্ষা

-

বাংলাদেশের আবহাওয়া অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, কালবৈশাখী; জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে বহু লোকের জীবনহানি ঘটে ও সম্পদ খোয়া যায়। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতির পরে এ ব্যাপারে সরকার তৎপর হয় এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়মিত রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার করতে থাকে। তবে বহুবার এই সঙ্কেতের সাথে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ বেগে ঝড় হয়ে বহু প্রাণহানি ও সম্পদ বিনষ্ট করেছে। প্রতি বছরই জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে বারবার সমুদ্রবন্দরের জন্য ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেয়া হয়। এতে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে বিধায় সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও ভোলা এলাকায় কোস্টাল কার্গো জাহাজডুবি হচ্ছে এবং মাছ ধরার ট্রলার ডুবে বহু মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। এটি রাজধানী ঢাকা থেকেই আমরা পোড়খাওয়া নাবিকেরা বুঝতে পারি। এক মাসেই তিনটি কার্গো এবং ২০টি ফিশিং ট্রলারডুবির দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ দেশের সাধারণ জনগণের অভ্যাস হচ্ছে, তারা সমুদ্রে ৩-৪ নম্বর সঙ্কেতে কখনো খুব বেশি সাবধান হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিপদ সঙ্কেত ৫, ৬, ৭ না ওঠে, ততক্ষণ জেলে ও নাবিকেরা তেমন গুরুত্ব দেয় না। ফলে প্রতি বছরই শুধু ‘বিভ্রান্তিকর’ আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কারণে অনেক জাহাজ ও ট্রলারডুবি হয়ে অকালে জীবন ও সম্পদহানি হচ্ছে।
বর্তমানে শুধু ঘূর্ণিঝড়ের জন্য আগাম পূর্বাভাস দেয়ার ব্যবস্থা আছেÑ যা প্রায়ই বাস্তবভিত্তিক হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সঙ্কেত জনগণের কাজে লাগে বৈকি। কিন্তু টর্নেডো ও কালবৈশাখীর জন্য তেমন কোনো কার্যকর পূর্বাভাস দেয়ার ব্যবস্থা নেই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পরে সরকার সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরের জন্য একই ধরনের ছয়টি সঙ্কেত নির্ধারণ এবং ঝড়ের গতিবেগ ও করণীয় প্রসঙ্গে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছিল, যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে প্রায় ১৮ বছর লেগেছে। কারণ আমাদের দেশ ছোট হলেও অনেক বেশি মন্ত্রণালয় ও শাখা-প্রশাখা, বিভাগ-দফতর, অধিদফতর-পরিদফতর রয়েছে। এ কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির ওপর অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত নিতেই প্রায় ১৫-১৬ বছর লেগেছে। প্রতিবেদন পাওয়ার প্রায় ২৮ বছর পরও তা বাস্তবায়ন হয়নিÑ সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!
সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রচলিত ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের গুরুত্ব¡ একইÑ শুধু ঘূর্ণিঝড়টি বন্দরের উত্তর-দক্ষিণ অথবা বন্দরের ওপর দিয়ে প্রবাহের জন্য ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত করা হয়েছে। অর্থাৎ ৫ নম্বর সঙ্কেত উঠলে বাতাসের গতিবেগ ৬২-৮৮, ৬ এবং ৭ নম্বরেও বাতাসের গতিবেগ ৬২-৮৮ কিলোমিটার। একই ভাবে ৮, ৯ ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের গুরুত্ব একই রকমÑ কারণ ৮ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের সময় বাতাসের গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার থেকে ঊর্ধ্বে, আবার ৯ ও ১০ নম্বরের সময়ও বাতাসের গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে। শুধু দিকনির্দেশের জন্য ৩টি নম্বর ব্যবহার করা হয়, যা বাস্তবসম্মত নয় বিধায় প্রায় ২৮ বছর ধরে পর্যালোচনা করে সারা দেশের জন্য মোট ৬টি সঙ্কেত (সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরের জন্য একই) পরিবর্তনের জন্য কমিটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে। সেটি যদি কার্যকর হতো তাহলেও জনসচেতনতা কিছুটা বৃদ্ধি পেত বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। ১৯৬২ সালে প্রণীত, অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য মোট চারটি ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্কেতের মধ্যে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেতের অর্থ হচ্ছে, ৬৫ ফুট বা তার ছোট নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। ফলে ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে ২ নম্বর সঙ্কেতের সময়ই এমভি নাসরিন-১ এমভি দিগন্ত এক্সপ্রেস, মিতালী-৩, লাইটিংসানসহ অনেক লঞ্চ এবং অন্যান্য নৌযান ডুবে যায়। ২ নম্বর সঙ্কেতে যেহেতু ৬৫ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নৌযান চলাচল করা নিষিদ্ধ নয়, তাই এসব নৌযানের মাস্টাররা বিভিন্ন ঘাট থেকে যাত্রা করে মেঘনা নদী বা অন্যান্য বড় নদীতে এসে দেখেন, প্রকৃত অবস্থা ভয়াবহ। কিন্তু ঝড়ের সঙ্কেত ২ নম্বরই ছিল। ফলে যাত্রীদের চাপে এবং আবহাওয়ার সঙ্কেত অনুসরণ করে বড় নদী পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে যায়। এ জন্য ঝড়ের সঙ্কেতই অনেকাংশে দায়ী বলে সচেতন মহল মনে করে।
চাঁদপুরের কাছে নাসরিন-১ ডুবে ৬২৫ জন লোক নিহত হওয়ার পর অতি জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার জন্য আমরা ১৪টি রাডার স্টেশন স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছিলাম, যা বর্তমানে বাস্তবায়নের পথে। বর্তমানে কঠোর পদক্ষেপের ফলে যাত্রীবাহী লঞ্চের দুর্ঘটনা অনেক হ্রাস পেয়েছে। তার পরও ২০১৯ সালেই এ পর্যন্ত মোট ৩২টি নৌ-দুর্ঘটনায় মোট ৮৯ জন নিহত এবং ১৭৩ জন আহত হয়েছে। আমরা চাই, নৌপথে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটুক। তা ছাড়া, সড়কপথের চেয়ে নৌপথ অনেক নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিভ্রান্তিমূলক পূর্বাভাসের ফলে দেশ ও জাতিকে অনেক ক্ষেত্রে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। বিশেষত মৎস্যজীবীদের বাঁচাতে অবিলম্বে আবহাওয়ার নতুন ছয়টি সঙ্কেত ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি জনস্বার্থে চালু করা উচিত। কারণ, আর কোনো গরিব ও নিরীহ মানুষ বা জেলেদের অকালে প্রাণহানি জাতি দেখতে চায় না। হ
লেখক : সাবেক পরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ এবং নদী গবেষক
e-mail : emdadulbadsha@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান

সকল