৬-দফা কেবল বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ নয়, সারাবিশ্বের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস : শেখ হাসিনা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ জুন ২০২৪, ১৮:৪৭
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঐতিহাসিক ৬-দফা’ কেবল বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ নয়, সারাবিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস।
তিনি ‘ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবস’ উপলক্ষে আজ এক বাণীতে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামীকাল ৭ জুন ‘ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবস’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬-দফা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৬ সালের ৭ জুন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬-দফা দাবি উত্থাপন করেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ৬-দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬-দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ৬-দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ৬-দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ। ৬-দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ মানুষ রাজপথে নেমে আসে ৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ঘোষিত ৬-দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা আদায়ের লক্ষ্যে এদিন আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, আবুল হোসেন, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন।
তিনি ঐতিহাসিক ৭ জুনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬-দফার প্রতি এদেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা। ৬-দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অঙ্কুরিত হয় স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ। ৬-দফা ভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ৬-দফা ভিত্তিক ১১-দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। ৬-দফা কেবল বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ নয়, সারাবিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ঐতিহাসিক ৭ জুনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে বদ্ধপরিকর। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে এবং প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে আমরা দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার আজীবন স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ, আধুনিক স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি ।’
তিনি ‘ঐতিহাসিক ৬-দফা দিবস’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। সূত্র : বাসস