১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা হারাবে : কর্নেল অলি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন অলি আহমেদ - ছবি : নয়া দিগন্ত

বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা হারাবে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বীর বিক্রম।

শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অলি আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা হারাবে। ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিককে জেগে উঠতে হবে। অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। দেশে গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের সম্মুখে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বর্তমান অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে বাধ্য। হয়তো নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর যাবৎ বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই বললেই চলে। কারণ সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আইন-আদালতগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দলীয় লোকদের মাধ্যমে পরিচালনা করছে। আইনের প্রয়োগ হচ্ছে অন্যায়ভাবে, শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি ও মিথ্যা এবং সাজানো মামলার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য। অথচ দেশকে সঠিক পথে এবং উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য, সমাজে শান্তি নিশ্চিত করার জন্য, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য, সর্বত্র শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আইনের শাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করছে এবং সর্বসাধারণের ওপর জোর-জুলুম-নির্যাতন ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশে কখনো শান্তি ফিরে আসবে না, মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। যেকোনো সময় ব্যাপক ধস নামতে পারে।’

জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘দেশে লুটতরাজের কারণে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের টাকা পাঠানো থেকে বিরত রয়েছে। অন্যদিকে ’২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯.৬ বিলিয়ন ডলার। আসল পরিশোধের কথা দূরে থাক, এমনকি সুদের টাকা পরিশোধ করার অবস্থাও বর্তমান সরকারের নেই।’
‘পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্যের খাতে বকেয়া পড়েছে ৫ বিলিয়ন ডলার। বিদেশী শিল্প উদ্যোক্তারা ডলারের সংকটের কারণে তাদের লাভের টাকা নিজ দেশে ফেরৎ নিতে পারছে না। এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে ১১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশী ঋণ পরিশোধ করার চাপ রয়েছে। এই ঋণ এবং ঋণ বাবদ সুদসহ নির্দিষ্ট সময় শেষে পরিশোধ করতে হবে। যা বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় সম্ভব নয়। অন্যদিকে এর প্রভাব বিভিন্ন প্রকল্পের ওপরও পড়েছে। যার কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি এবং বাজেট বাস্তবায়ন ৪০ শতাশের নিচে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। কিছু কিছু প্রকল্প এখনো চলমান আছে এবং কয়েকটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রত্যেকটি প্রকল্পের ব্যয় পার্শ্ববর্তী ভারতের তুলনায় ৩ থেকে ৫ গুণ বেশি। অনেকের ধারণা জনগণের এই অর্থগুলো আত্মসাৎ করা হয়েছে। ডলার সংকট এবং অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য এই মেগা প্রকল্পগুলো অনেকাংশে দায়ী।’

অলি আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আশঙ্কাজনক হারে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশীয় মুদ্রার তারল্য সংকট প্রতীয়মান। খুব শিগগিরই এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো পথ খোলা নাই। কারণ নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। নতুন ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্র সংকোচিত হয়েছে। কারণ তারা আমাদের বর্তমান অর্থনীতির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। তদুপরি ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, অন্যদিকে বিদ্যুতের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দিন দিন উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কোনো নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগ নাই। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের পথে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার সবকিছু লেজেগোবরে করে ফেলেছে। বাহির হওয়ার দরজাও বন্ধ।’

তিনি বলেন, ‘৫ হাজার টাকা কৃষি ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে কৃষকদেরকে জেলে দেয়া হয়। অথচ লালো হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি করলে বা বিদেশে পাচার করলে তার কোনো শাস্তি হয় না। কারণ সরকারই তাদের পৃষ্ঠপোষক। দেশে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে। বিশেষভাবে খাদ্য দ্রব্যের উপর মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশের ওপরে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিগত ১৫ বছর যাবৎ বাকশালী কায়দায় দেশ শাসন করছে। আল্লাহ ওয়াস্তে এখন ক্ষান্ত হন। জনগণকে তাদের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করার সুযোগ দেন। আমি না থাকলে দেশ চলবে না এই ধরণের ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে যান। আল্লাহর উপর ভরসা করেন।’

‘বর্তমানে দেশের সর্বত্র জুয়া ও হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট। এগুলো বন্ধ করার দায়িত্ব কার? মাঝে মাঝে গ্রামে-গঞ্জে স্লোগান শোনা যায়, ‘বর্তমান সরকারের উন্নতি, ঘরে ঘরে সন্ধ্যায় মোমবাতি।’

এলডিপি প্রধান বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারি, গত দুই বছরে টাকার মান কমেছে ৩৮ থেকে ৫১ শতাংশ। সুদের হার বৃদ্ধি পেয়ে ৯ শতাংশ থেকে ১৪.৫৫ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে টাকার প্রবাহও হ্রাস পেয়েছে এবং ব্যাংকগুলোতে টাকার হিসাবে গড়মিল দেখা দিয়েছে। আর্থিক খাতে বাংলাদেশ রেড জোনে প্রবেশ করেছে। সুতরাং আর্থিক ঝুঁকি খুবই বড়। ভুয়া দলিল এবং সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নেয়া এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।’

কর্নেল অলি আহমেদ বলেন, ‘পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম সাবেক মন্ত্রী, আমলা এবং ঋণখেলাপি এবং ১/১১-এর সাবেক সেনা কর্মকর্তারা দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে। ৩৯৪ জনের সম্পদের পাহাড় ২,৬৩৬ কোটি টাকা মূল্যের ৬৬১টি সম্পত্তির লিস্ট পাওয়া গেছে। এছাড়াও লন্ডন, কানাডা ও আমেরিকায় লাখো হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ধরনেণের কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ তারা সরকারের বিভিন্ন অপকর্মে সাহায্য সহযোগিতা করে। তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও হয় না। ফলে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

নির্বাচনের সময় নিশিরাতের জাল ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে তাদের সম্পদের হিসাব দাখিল করেছে। রাতারাতি তারা এত বিশাল অংকের টাকা কোথায় পেল, এত সম্পদ কিভাবে ক্রয় করেছে, তার কোনো ব্যবস্থা দুদক নিচ্ছে না। অথচ একটা গাছ কাটার জন্য কোর্ট থেকে সুয়োমটো দেয়া হয়। কিন্তু লুঠেরারা দেশ ধ্বংস করছে, সাধারণ মানুষ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এতে কারো মাথাব্যাথা নাই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ভারত সরকার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের সাথে সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকবে বরং ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব স্থাপনে মনোযোগী হবে।’

সকলে নিজ নিজ জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসবে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে অলি আহমেদ বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব আমরা বিএনপি’র নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করব, ইনশাআল্লাহ। ঐক্যবদ্ধ হোন। প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই বাকশালী সরকারের পতন হবে। দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে ইনশাআল্লাহ।’


আরো সংবাদ



premium cement