১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভোটাররা উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে : রিজভী

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী - ছবি - নয়া দিগন্ত

আওয়ামী প্রতারণার ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের ভোটাররা সর্বান্তকরণে উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেকে আড়াল রাখার বিধি-নিষেধের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে মানুষের মনোযোগ ভিন্ন খাতে সরিয়ে দেয়ার জন্য দেশময় অশান্তি জিইয়ে রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে দখলদার সরকার। আজ বুধবার নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ছাত্র-যুবক-শ্রমিক-বুদ্ধিজীবীসহ অধিকারবঞ্চিত জনগণের ওপর দমন-পীড়ন-অত্যাচার-বন্দীশিবির-মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, মিথ্যা মামলায় আটক, খুন, ধর্ষণ, শত শত মানুষের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, উচ্ছেদের রাজনীতি আর সীমাহীন সন্ত্রাস অবাধে চলছে রাষ্ট্রের মদদে। নতুন করে গুম ও বিরোধী দলের ওপর হিংস্র আক্রমণ প্রতিদিনের সংবাদে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, লুণ্ঠনের রাজনীতি ও অর্থনীতির দেউলিয়াপনার বাতাবরণ, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেকে আড়াল রাখার বিধি-নিষেধের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে মানুষের মনোযোগ ভিন্ন খাতে সরিয়ে দেয়ার জন্য দেশময় অশান্তি জিইয়ে রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে দখলদার সরকার। নতুন করে ক্ষমতা করায়াত্ত করে নিজেদের সুবিধাভোগী শ্রেণী আওয়ামী অলিগার্কির লুটপাট ও টাকা পাচারের লোমহর্ষক কাহিনী, ক্ষমতাসীনদের নিজের আর পরিবারের আর্থিকভাবে গুছিয়ে নেয়ার ধান্দাতে সারাদেশ বিপর্যস্ত। আর তাই ডাকাতি আর লুটের সব অভিনব ঘটনা ঢাকতেই আওয়ামী হিংস্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ যে শূন্যগর্ভ তা আজ নির্মম সত্য। আবারো নতুন করে গুমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, হামলা করে রক্তপাতের ধারা বইছে সর্বত্র। গতকাল আসরের নামাজের সময় মসজিদে যাওয়ার পথে সিদ্ধেশরী মাঠ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মাহিদুল হাসান হিরুকে সাদা পোশাকধারীরা মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। যে গাড়িতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তার নম্বর-ঢাকা মেট্রো-চ, ৫২—১৪৫০।

তিনি আরো বলেন, নিজ কক্ষে তিন ঘণ্টা আটকিয়ে রেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দুই নেতা নাফিউল ইসলাম জীবন ও তার বন্ধু ইউনুস খানকে মারধর ও চরম নির্যাতন করা হয়। পিস্তল দেখিয়ে পায়ে গুলি করার হুমকি দেয়া হয়। অবৈধ সরকারের অনাচারমূলক স্বার্থসিদ্ধির সুসজ্জিত সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে ছাত্রলীগকে। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে এরা হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে গণতন্ত্রমনা ছাত্রদের ওপর। এরা হামলা চালাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপরও। জীবন-জীবিকা সব কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত ও বিপর্যস্ত করছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ দেশের সবচেয়ে খতরনাক বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

কেন উপজেলা নির্বাচন বর্জন করছে জনগণ, সে কারণ তুলে ধরে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, মানবজাতি স্বৈরাচারের দুঃশাসনে বেশিদিন লুকিয়ে থাকতে ও নীরব থাকতে পারে না। অধিকার আদায়ে বুক বেঁধে সাহসের সাথে এগিয়ে যায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একনায়কতন্ত্রের অপরাধগুলো ধিক্কার জানায়।

‘দমনমূলক শক্তি ভোটারদের নিগ্রহ করছে, উগ্র রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।
নিকৃষ্ট লুণ্ঠনের মাধ্যমে উপজেলা প্রতিষ্ঠানকে করা হয়েছে লুটেরা ও দস্যু দলের আখড়া। এমনো দেখা যাচ্ছে, ভোটারবিহীন নির্বাচনে দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে এক শ’ বিঘার বেশি জমির মালিক হয়েছে। অথচ আইন অনুযায়ী ৬০ বিঘার বেশি জমি থাকতে পারে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি যতই উচ্চারিত হয়, ততই সরকারের কাছে জেল-জুলুমের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। যারা দ্বিতীয়বার প্রার্থী হয়েছেন তাদের আগের হলফনামায় ঘোষিত আয়ের চেয়ে কয়েকজনের আয় বেড়েছে তিন হাজার শতাংশের বেশি। কারো আয় বেড়েছে এক হাজার শতাংশের বেশি। গাইবান্ধায় একজন প্রার্থীর আয় বেড়েছে চার হাজার শতাংশ। স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদও বেড়েছে কোথাও কোথাও ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার শতাংশ।’

রিজভী বলেন, যে দেশে গণতন্ত্রের ছিটেফোটাও নেই, সেই দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের স্বজন ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচিত হতে পারে না। ভোটারদের ভোটের প্রয়োজন হয় না। ফলাফল নির্ধারিত থাকে, সেটিই ঘোষিত হয়।

আওয়ামী প্রতারণার ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের ভোটাররা সর্বান্তকরণে উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে বলে জানান রিজভী।

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহতের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে তেঁতুলিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নাগরিক ইয়াসিন আলী ও আব্দুল গনি নিহত হয়েছে। বিজিবি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভারত যেন এখন সরাসরি রক্তাক্ত আগ্রাসন চালাচ্ছে বাংলাদেশে। আর এটি সম্ভব হয়েছে ডামি সরকারের আত্মা বিক্রির জন্য।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের রক্তপিপাসুর মাত্রা যেন দিন দিন তীব্র হচ্ছে। আওয়ামী সরকারের একতরফা ভারত তোষণ নীতির কারণেই বিএসএফ বাংলাদেশীদের মানুষ বলে গণ্য করে না।

সত্য বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, বিএনপির বিভাগীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা এই দুর্যোগ দূর্গিপাতের সময়, বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে, আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেসব নেতাদের বিরুদ্ধে সম্মানহানি, নানা ধরনের অভিযোগ, দুর্নীতির অভিযোগে রিপোর্ট করা হচ্ছে। আমার মনে হয় এটা বস্তুনিষ্ঠতার পরিপন্থী হচ্ছে।

বস্তুনিষ্ঠতার সাথে সংবাদ পরিবেশন করলে গণমাধ্যমের গতি আরো তীব্র হবে এমন অভিমত জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের গণতন্ত্র আরো শক্তিশালী হবে। আমি কাউকে পছন্দ করি না, এমন মনোভাব নিয়ে ঘায়েল করতে চাইলে, এটা হবে দুর্ভাগ্যজনক।


আরো সংবাদ



premium cement