২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকারকে স্থায়ীত্ব দেয়ার পরিকল্পনা চলছে : জিএম কাদের

বক্তব্য রাখছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) এমপি । - ছবি : নয়া দিগন্ত

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) এমপি বলেছেন, আমাদের অজান্তেই দেশে বাকশাল গঠন করা হয়েছে। সামনের নির্বাচনে বাকশালের মত সরকারকে স্থায়ীত্ব দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। দেশে একটি দল আছে। সেই দল স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করছে। সেই দলের মধ্যে প্রশাসন, আর্মি এবং আইন শৃংখলা বাহিনী সবাই সদস্য। সংসদ ও সংসদের স্পিকার সেই দলের হয়েই কথা বলছেন। সবাইকে সেই দলই রক্ষা করছে।

শনিবার (৩ জুন) দুপুরে নরসিংদী শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টি নরসিংদী জেলার আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মো: ওমর ফারুক মিয়ার সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, নাজমা আক্তার এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ।

জিএম কাদের বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। কিছু দিন আগে সরকারি দলের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি বলেছেন, প্রধান বিচারপতিকে আমরা নামিয়ে দিয়েছি। কে নামিয়ে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ নামিয়ে দিয়েছে। তার মানে বিচার বিভাগকেও ওই দলের সদস্য হতে হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন সবাই ওই দলের সদস্য হয়েছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের এবং তাদের নেতা একজন। সেই নেতা যা বলেন, সবাই তাই করেন। তাই নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু হবে? সেখানে দুর্নীতিবাজরা কিভাবে শাস্তি পাবে? কীভাবে মেধাবীরা চাকরি পাবে? সবাই দলীয় আস্তরণের মধ্যে আছে। যে নির্দেশ আসে সবাই সে নির্দেশ মেনে চলে। যেভাবে বাকশাল গঠন করা হয়েছিল, সেভাবেই বাকশালের মত সরকার গঠন করা হয়েছে। আমাদের অজান্তেই দেশে বাকশাল গঠন করা হয়েছে। শাসন ব্যবস্থার সকল প্রতিষ্ঠান একটি দলের সদস্য হয়ে গেছে। দেশের বাকি মানুষ যেন মানুষ নয়। সাধারণ মানুষ খেলো কি খেলো না, তা দেখার কেউ নেই। বাকশালের মত একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে স্থায়ীত্ব দেয়া হয়েছে। সামনের নির্বাচনে বাকশালের মত সরকারকে স্থায়ীত্ব দেয়ার পরিকল্পনা চলছে।

তিনি বলেন, দেশে বাকশালের মত দল হয়েছে, এখানে সাধারণ মানুষের কোনো স্থান নেই। সাধারণ মানুষ বিচার পায় না, সাধারণ মানুষের কথা গ্রাহ্য করা হয় না, সাধারণ মানুষ নির্বাচন করতে পারে না। সাধারণ মানুষ নির্বাচন করে জিততে পারবে না, এটাই বাস্তবতা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করছি, আমরা নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসিনি। সরকারের কথা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। একদলের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। তাহলেই দেশের মানুষ বেঁচে থাকার অবলম্বন পাবে। দেশকে মুক্ত করা না গেলে হাজার-হাজার কোটি টাকা আবারো বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। সরকারের বিপক্ষে সত্য কথা বললে কোনো গণমাধ্যম প্রকাশ করতে পারে না। গণমাধ্যমের গলা টিপে রাখার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে, আগামীতে ফাঁসির ব্যবস্থা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আইন করে, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে দেশে লুটপাটের ব্যবস্থা হচ্ছে। দেশকে বাঁচাতেই আমাদের রাজনীতি। বাজেটের কারণে সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হয়ে উঠবে। সেজন্য সরকারের কোনো প্রস্তুতি নেই। সরকার জান বাঁচাতে নির্বাচন পার করতে চাচ্ছে। তারপর তারা দেখিয়ে দেবে তারা কোথায় আর জনগণ কোথায়।

তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। দেশের মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সামনের দিনগুলো কেমন করে চলবে তা নিয়ে চিন্তিত সবাই। দ্রব্যমূল্য উর্ধগতির কারণে আয় দিয়ে সংসার চালাতে পারছে না। মধ্যবিত্তরা এখন নিন্মবিত্ত নয়, দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেট কখনোই জনবান্ধব হতে পারে না। যে ট্যাক্স বিদ্যমান আছে তাই দেশের মানুষ দিতে পারছে না। কিন্তু আরো ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে, জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়বে। মানুষের আয় বাড়েনি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করে তারা চাকরি হারাচ্ছে। সরকার করোনা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দোহাই দিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে। এখন আইএমএফের পরামর্শে আরেক দফা বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। সব কিছুর দাম বাড়াচ্ছে। সারাদেশে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে, এ দায় সরকারের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে, কিন্তু আমাদের দেশের মত কোনো দেশের মানুষ এত অসহায় নেই। মুল্যস্ফীতির কারণে মানুষ নিস্পেষিত হচ্ছে, সামনের দিকে হয়ত অনেকেই না খেয়ে মারা যাবে।

জাতীয় পার্টি মহাসিচব মো: মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চায় না। দেশের মানুষ চায় ভোটাধিকার। দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে চায়। গ্রামের মানুষ দিনে তিন ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পায় না। দেশের মানুষ মুক্তি চায়। বিদ্যুতের নামে সরকার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে কিন্তু বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। আবার বিএনপি বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছিল। এ দুটি দলকে দেশের মানুষ আর চায় না।


আরো সংবাদ



premium cement