২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সমাবেশের অনুমতিপত্র আমাদের কাছে পৌঁছে দিন : ডা. মোহাম্মদ তাহের

সমাবেশের অনুমতিপত্র আমাদের কাছে পৌঁছে দিন : ডা. মোহাম্মদ তাহের। - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাবেশের অনুমতিপত্র পৌঁছে দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা পুলিশের নৈতিক দায়িত্ব।’

শনিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আয়োজিত দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন।

ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য নিবন্ধন জরুরি নয়, নির্বাচনের জন্য রেজিষ্ট্রেশন নিতে হয়। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, মিছিল করার জন্য নিবন্ধন কিংবা অনুমতির প্রয়োজন নেই। তিনটি মৌলিক দাবিতে আগামী ৫ জুন রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এ সমাবেশ বাস্তবায়ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সমাবেশে বাধা দেয়া মানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা দেয়া, গণতন্ত্রের পথে বাধা দেয়া। ৫ জুনের সমাবেশের অনুমতি জনগণ দিয়েছে। তাই আপনারা বাড়াবাড়ি করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট তার শরিকরাও প্রত্যাখ্যান করেছে। এ বাজেট একটা ভারসাম্যহীন, বায়বীয়, ঋণ-নির্ভর বাজেট। এতে জনগনের কোনো কল্যাণ নেই। মধ্য ও নিম্নবিত্তের মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। আমরা এ বাজেট প্রত্যাখ্যান করছি।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। তারা বারবারই একই কথা বলছেন। তারা আসলে সত্য বলছেন না বলেই এই কথা বারবার বলছেন। তারা উন্নত দেশের কথা বলছেন। আমি তাদের বলব, উন্নত দেশের মধ্যে এমন তিনটি দেশের নাম বলুন, যে দেশে দিনের ভোট আগের রাতেই হয়েছে। বর্তমান সরকার যেকোনো উপায়ে নির্বাচন করতে চায়। এখন ২০১৪ বা ২০১৮ সাল নয় এবং ওই পরিবেশও আর নেই।’

জামায়াত নেতা বলেন, ‘বর্তমান সঙ্কটের উত্তম সমাধান হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করা। কেবলমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই বিরোধী দলের থাকতে পারবেন। আওয়ামী লীগ যদি আবারো ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে চায়, তাহলে এ সরকার টিকবে না। বরং অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। তাই অবিলম্বে নিদর্লীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সংগ্রাম করে, কঠোর কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে নয়, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। আর যদি তা না হয়, আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হবে। পরিস্থিতি এখন আপনাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে আপনারা তো আগে থেকেই জানতেন। তখন জনগনকে জানালেন না কেন? ঘোষণা হওয়ার পর বললেন, এটা বিরোধী দলের জন্য। এখন কি উল্টা হয়ে গেল? আমরা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তাক্ষেপ পছন্দ করি না। ভিসা নীতি গোটা জাতিকে অপমানিত করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বৈধ সংগঠন। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। কারো মুখের কথায়, শব্দ চয়নে জামায়াতের অবস্থান পরিবর্তন হবে না। বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য নিবন্ধন জরুরি নয়। নির্বাচনের জন্য রেজিষ্ট্রেশন নিতে হয়। জামায়াতে ইসলামী বৈধ, রেজিস্ট্রার্ড রাজনৈতিক সংগঠন। জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ষড়যন্ত্রের কারণে উচ্চ আদালতে নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। যা এখন বিচারাধীন রয়েছে। বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করে আসছে। প্রয়োজনে সেখানে স্থায়ী মঞ্চ গড়ে তোলা হবে। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করি। সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা পুলিশের নৈতিক দায়িত্ব।’

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আমরা গত ২৮ মে ঢাকায় মিছিল সমাবেশে সহযোগিতা চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) আবেদন করেছি। এরই কপি আমরা স্ব-শরীরে আইনজীবীদের মাধ্যমেও পুলিশ কার্যালয়ে জমা দিয়ে এসেছি। দেশের সুপ্রিম কোর্টের সম্মানিত আইনজীবীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আবেদন পত্রটি নিয়ে গেলে তাদের সাথে যে ন্যাক্কারজনক আচরণ করা হয়েছে, তা পুরো জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশ করতে চাই। সরকার তাতে সহযোগিতা করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’

তিনি বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, ‘যে বাজেট দেশে পেশ করা হয়েছে তা গরীব মারার বাজেট। দেশের উন্নয়নের নামে লুটপাটের আরো সুযোগ তৈরি করতেই ঋণ-নির্ভর এ বাজেট তৈরি করা হয়েছে। এই বাজেটে যেসব খাতে কর নেই ওইসব খাতেও কর আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। কর দেয়ার জন্য উপযুক্ত নয় যারা তাদেরও কর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে এই বাজেটের মধ্য দিয়ে সরকারের সেচ্ছাচারিতা প্রকাশ পেয়েছে। আজ দেশের উন্নয়নের চেয়ে বড় বেশি প্রয়োজন এই সরকারের পতন নিশ্চিত করা।’

তিনি আগামী ৫ জুন জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল সফল করতে দলে দলে অংশগ্রহণ করতে ঢাকাবাসীসহ জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, মাওলানা আবু সাদিক, ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, অধ্যাপক নুরুন্নবী, আবু জয়নব, সিরাজুল ইসলাম, আবু ওয়াফি, মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement