২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঈদের আগে 'তারুণ্য সমাবেশ', পরে 'অল আউট' কর্মসূচি নিয়ে নামছে বিএনপি

ঈদের আগে 'তারুণ্য সমাবেশ', পরে 'অল আউট' কর্মসূচি নিয়ে নামছে বিএনপি - নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণার পর চলমান সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করেছে বিএনপি। সেই লক্ষ্যে জুনেই সারাদেশের ১০টি বিভাগীয় পর্যায়ে দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ে আসছে 'তারুণ্য সমাবেশ'। এই তারুণ্য সমাবেশের মূল লক্ষ্য, গেল দুবারের জাতীয় নির্বাচনে যে তরুণরা ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাদেরকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সাথে সম্পৃক্ত করা, তাদের রাস্তায় নামানো, দেশের তরুণ সমাজকে তাদের ভোটাধিকার আদায়ের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা। আন্দোলনের ঢেউকে আরো তীব্র আকার করে তোলা। পাশাপাশি জুনের প্রতি সপ্তাহে থাকছে বিএনপির অন্তত একটি বড় কর্মসূচি।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ২০০৮ সালে ভোটার সংখ্যা ছিল আট কোটি ১০ লাখ, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৯১ লাখে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, দলের নীতিনির্ধারকরা এই তিন কোটি ৮০ লাখ নতুন ভোটারকে টার্গেট করছেন।

বিএনপি সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী ১০ তারিখে চট্টগ্রামে প্রথম তারণ্য সমাবেশে শুরু হচ্ছে। এবং কুরবানির ঈদের আগে এ এক মাসের কম সময়ের মধ্যে সমাবেশগুলো শেষ হবে। সর্বশেষ সমাবেশটি জুনের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় করার কথা চিন্তা করছে দলটি।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নাম প্রকাশেঅনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, `ইতিমধ্যে তিনটি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা আমরা যৌথ সভা করেছি, প্রতিটি বিভাগরে এ আন্দোলন ব্যাপক জমায়েতের মাধ্যমে সরকারে কে কঠোর বার্তা দেয়া হবে। এ তারণ্য সমাবেশ জমায়েত হবে এযাবৎকালের বড় জমায়েত।'

দলীয় সূত্র বলছে, বর্তমানে সরকারের যেভাবে সুর নরম হয়েছে, তাতে ছাত্র-যুবক-তরুণদের সমাবেশে বাধা দেয়ার মানসিক হিম্মত নেই সরকারের। আর বাধা দিলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নীতিতে আটকে যাবে ক্ষমতাসীনরা। তাই এ ‘তারণ্য সমাবেশে’র মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার বঞ্চিতদের এবার আন্দোলনের অগ্রভাগে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগাচ্ছে দলটি।

বিএনপি সূত্র থেকে আরো জানা যায়, আগামী ১৫ জুন পযন্ত জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর প্রোগ্রাম ইতোমধ্যে ঘোষণা এসেছে। কুরবানি আগে বাকি সপ্তাহে অন্তত একটি বড় কর্মসূচি পালন করবে। কুরবানির পর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ‘অল আউট’ কর্মসূচিতে যাবে দলটি।

বিএনপির কয়েকজন নেতা জানায়, ভিসা নীতির পর সরকারের চাল-চলন দিকে লক্ষ্য রাখছে। চূড়ান্ত আন্দোনের কর্মসূচি পরিস্থিতি বুঝে জুনের মাঝামাঝিতেও হতে পারে। আন্দোলনকে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার ব্যাপারেও ভিন্ন একটি পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।

গেল ২৯ মে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিটিউট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, সরকারের লাফালাফি কমে গেছে এখন। গলার সুরও নেমে এসেছে। এখন আমাদের গণঅভুত্থানের দিকে যেতে হবে শান্তিপূর্ণভাবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের মামলার নিয়ে ৩১ মে নয়া পল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব বলেন, বিএনপি নেতাদের, বিরোধীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। আবারো একতরফা নির্বাচনের পায়তারা করছে। সাড়ে ১৩ শ' মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো তড়িঘড়ি করে সাজা দেয়া হবে, এসব মামলা রাজনৈতিক মামলা, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেছেন, আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে সেই পুরনো খেলা। পুরাতন খেলা কী? বেশি লাফাচ্ছ, তারা (সরকার) এমনটা ভাবছে , যত মামলা আছে তা দ্রুত শেষ করব। যে মামলাগুলো চালু হয়েছিল সেই তথাকথিত ১/১১ সরকারের সময়। তারা তাদের মামলাগুলো সব তুলে নিয়ে গেছে, খারিজ করেছে। আর বিরোধী দলের মামলাগুলো রেখে দিয়েছে। ওই মামলায় আমাদেরকে এখন সাজা দেয়া হচ্ছে। এটার একটা সীমা থাকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে, যখন-তখন এই আমাদের আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিতে পারে।’

সারাদেশে বিএনপির সমাবেশগুলোতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। গত ২৬ এবং ২৭ তারিখে রাজধানীসহ সারাদেশের সমাবেশগুলোতে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হলে কোথাও কোথাও পাল্টা হামলা চালানোর ঘটনাও ঘটছে। সব মিলিয়ে নেতাকর্মীদের মনোভাব এখন চাঙ্গা।

একটি সূত্র জানায়, ছাত্র-যুবদের দিয়ে মাসব্যাপী তারুণ্য সমাবেশ দিয়ে সরকারকে ব্যস্ত রাখাতে বিএনপি। পাশাপাশি ঢাকামুখী চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া। কারণ দলটি মনে করছে, সরকার আগাম নির্বাচন করার জন্য পাঁয়তারা করে যাচ্ছে । এমনকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যেসব দল নির্বাচনে যাবে না তাদের উপর আরো চড়াও হতে পারে সরকার। বিরোধী রাজনীতির সিনিয়র ও মাঝারি সারির নেতাদের গ্রেফতার হতে পারে।

এছাড়াও সারাদেশে আবারো হঠাৎ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার, পুরনো মামলার রায় দিচ্ছে সরকার। এ বিষয়গুলো কিছুটা ভাবিয়ে তুলছে দলটিকে। দলটি মনে করছে, আন্দোলন একটা বাতাস উঠেছে, কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না- এতে সরকারের হামলা-মামলায় উল্টা দলের সাংগঠনিক শক্তি ক্ষয় হবে।


আরো সংবাদ



premium cement