২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

কুরআনের বিধান সমাজে কায়েমই হলো রমজানের প্রকৃত শিক্ষা : মুজিবুর রহমান

কুরআনের বিধান সমাজে কায়েমই হলো রমজানের প্রকৃত শিক্ষা : মুজিবুর রহমান - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, কুরআনের বিধান সমাজে কায়েমই হলো রমজানের প্রকৃত শিক্ষা।

শনিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে পবিত্র রমজান, যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্যশীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, কুরআনের সবগুলো বিধানই সমাজে কায়েম করা ফরজ। কোনো একটি বিধান অস্বীকার করলে কাফির বলে গণ্য হবেন। মুত্তাকিদের জন্য বর্ণিত এসব বিধান পালন করা অত্যাবশ্যকীয়। এসব বিধানকে ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সমাজ জীবনে, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো মুত্তাকিদের কাজ। রমজানে আমাদেরকে শপথ নিতে হবে বাংলাদেশে কুরআনের আইনকে আমরা প্রতিষ্ঠা করব। এ পথে হয়তো আমরা বিজয়ী হব নতুবা আমাদের জীবন চলে যাবে তবুও কুরআনের এ পথ থেকে আমরা বিচ্যূত হব না। তাহলেই রমজানের প্রকৃত হক আদায় হবে।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম।

আরো বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মো: দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান। উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, রোজার দিনে আমাদেরকে কেউ সামান্য পানি খেতে বললে আমরা খাই না। কারণ আল্লাহ আমাদেরকে এ বিধান দিয়েছেন ফলে সেটা পালন করছি। আল্লাহ আমাদের নিষেধ করেছেন তাই দিনের বেলা পানাহার করছি না। সেই মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ কি শুধু রোজা পালনের জন্য? কুরআন মাজীদে কমপক্ষে এক হাজার বিধান আছে যেগুলো হ্যাঁ-বোধক এবং কমপক্ষে এক হাজার বিধান আছে যেগুলো না-বোধক। এই সবগুলো বিধান বা আইনকে একজন মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। হ্যাঁ-বোধকগুলোকে মেনে নিতে হবে এবং তা কায়েমের জন্য দৃঢ় থাকতে হবে। না-বোধক বিধানগুলোকে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র থেকে উৎখাত করতে হবে। তবেই কেবল রমজানের হক আদায় হবে, কুরআনের হক আদায় হবে। মানুষ হিসেবে আমরা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেই এসেছি নিশ্চয়ই আল্লাহই আমাদের রব। তিনি আমাদের হুকুমদাতা, তিনি আমাদের বিধান দাতা, রিজিকদাতা সবকিছু, এটা স্বীকার করেই আমরা দুনিয়ায় এসেছি।

সুতরাং সত্যিকার অর্থে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এই কথা মেনে নেয়ার সাথে সাথে তা বাস্তবায়নে আমাদেরকে ভূমিকা রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আসুন দুনিয়ার অশান্তি থেকে বাঁচতে, আখেরাতের ভয়াবহ আগুন থেকে বাঁচার জন্য কালিমার বিধানকে স্বীকার করে আমাদের জীবন গড়ি। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি স্তম্ভ। যাকাত ছাড়া দ্বীন পরিপূর্ণতা লাভ করে না। যারা যাকাত অস্বীকার করে তাদের কাফের বলে গণ্য করা হয়েছে। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা: যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। যাকাত শব্দের অর্থ পরিচ্ছন্ন করা, পবিত্রতা করা। আমাদের মালকে পরিশুদ্ধ করার বিধানই হচ্ছে যাকাত। যাকাত দিয়ে আমাদের মাল ও সম্পদকে পবিত্র করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, কুরআনে বর্ণিত আট প্রকারের কোনো এক প্রকার লোক অথবা প্রত্যেককে যাকাত প্রদান করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তা'আলা যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝাতে কুরআনে কারিমের বহু জায়গায় ইরশাদ করেছেন, যেমন আর তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকু করো রুকুকারীদের সাথে। আল্লাহ বলেন, আর যাদের ধন সম্পদে রয়েছে দরিদ্র এবং বঞ্চিতদের জন্য নির্দিষ্ট অধিকার। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামায এবং রোজার সম্পর্ক মানুষের দৈহিক পরিশ্রম ও মনের সাথে সম্পৃক্ত, পক্ষান্তরে যাকাতের সম্পর্ক অর্থ সম্পদের সাথে সরাসরি যুক্ত। বিশেষভাবে যাকাত ধনী বা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ওপরই ফরয হয়ে থাকে। বর্তমানে মাত্র এক লাখ টাকা কারো কাছে থাকলেই যাকাত দেয়ার উপযুক্ত বলে গণ্য হবেন। যাকাত আদায় করা ইসলামী রাষ্ট্রের কাজ। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারিভাবে যাকাত আদায় করা হয় না। আর ইসলামী রাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে আমাদের কাছে একটি সংগঠন রয়েছে। আপনার আমার যাকাতের অর্থ যদি এই সংগঠনের হাতে তুলে দিতে পারি তাহলে যাকাতের এই খাতগুলো সঠিকভাবে আদায় হওয়ার সম্ভবনা হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত আপনাদের যাকাতের টাকা দিয়েই সমাজের সার্বিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।

মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, এই রমজানে সবচেয়ে বড় শিক্ষাই হচ্ছে কুরআনের সাথে নিজের জীবনকে মেলানো। আল্লাহ তায়ালা এই রমজানে আমাদেরকে কুরআন দিয়েছেন, কেয়ামতের দিনে এই কুরআনই সুপারিশকারী হবে। এই রমজানের সময়ে আমরা রোজা পালনের পাশাপাশি কুরআনের চর্চা কতখানি করতে পারছি তা অনুধাবন করতে হবে। কুরআনকে অর্থসহ না বুঝলে এর সঠিক হক আদায় হয় না। এই মাহে রমজান মাস হচ্ছে সদাকা আদায়ের মাস। যাদের উপরে যাকাত ফরজ হয়েছে আপনারা তা আদায় করুন। সিয়ামের যে উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন আমারা সকলে যেন তা পূরণ করতে পারি।

সভাপতির বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জবিন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে রমজানের শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রমজান মাসে ব্যক্তির পরিশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি নিজেকে কুরআনের ছাঁচে ঢেলে সাজাতে হবে। রমজানে ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জন্য আমাদেরকে সমাজ পরিবর্তনের যতগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবেলা করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যাকাত হচ্ছে ব্যক্তির আর্থিক পরিশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যম। যাকাত হচ্ছে আমাদের মালের পরিশুদ্ধি এবং রোজা হচ্ছে নিজেদের তাকওয়ার পরিশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যম। এই দু'টি যখন এক সাথে মিলে যায়, তখন সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। একটি ভারসাম্যপূর্ণ সোস্যাল ওয়েলফেয়ার কাঠামো গড়ে ওঠে। একটি গঠনমূলক বাংলাদেশ, একটি বসবাস উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব এ দু'য়ের সমন্বয়ে। আসুন যারা সাহিবে নিসাব মালিক হয়েছি তারা নিজেদের মালের হিসাব করে যাকাত প্রদান করি এবং যারা যাকাত দেয়ার উপযোগী তাদেরকে যাকাত প্রদানে উদ্বুদ্ধ করি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement