২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আগামী নির্বাচনে জামায়াত একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে : ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ

আগামী নির্বাচনে জামায়াত একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে : ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমাদেরকে ইসলামপন্থীরা মনে করে আমরা পলিটিক্যাল পার্টি, অন্যদিকে সরকার ও তার মতের নিকটবর্তী দলের লোকেরা মনে করে আমরা মোল্লা-মৌলভী পর্যায়ের ব্যক্তি। তাহলে জামায়াতের কর্মী হিসেবে আমার পরিচয় আসলে কি? আমাদের পরিচয় আমরা আল্লাহর গোলাম এবং এই জমিনে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মী। জনগণের কাছে জামায়াতে ইসলামীর জন্য নিজস্ব পরিচয় স্পষ্ট করতে হবে। সেজন্য কর্মীদেরকে আরো বেশি ইসলামী জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। আরো বেশি জনসম্পৃক্ত হয়ে সামাজিক কাজকে বেগবান করতে হবে। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশে জামায়াত একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে ইনশাআল্লাহ। সমগ্র বিশ্ব খুব দ্রুতই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিবে। তাই এখন থেকেই বাংলাদেশের সবুজ ভূ-খণ্ডে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদেরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এলাকাকে ইসলামী আন্দোলনের মদিনা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, জামায়াতের একজন কর্মী হিসেবে আমাদের আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে, তিনি যেন সবার প্রতি আমার অন্তরকে প্রশস্ত করে দেন, আমার কথা ও আহ্বানগুলো যেন সকল কঠিন হৃদয়ের মানুষের কর্ণকুহরেও পৌঁছিয়ে দেন। দ্বীন ইসলাম বিরোধী একজন মানুষের দুঃখ ও কষ্টে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ-তায়ালা মুমিন হিসেবে আমাকে যে মানবিক চরিত্র দিয়েছেন তা দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ন করতে হবে। মানবতার প্রতি আমাদের মনের দুয়ার খোলা রাখতে হবে। আমরা সংখ্যায় কত সেটা বিবেচনার বিষয় নয়, মূলত একজন ঈমানদার হিসেবে সত্যের দাওয়াত সবখানে পৌঁছানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শাসক তার সকল শক্তিমত্তাকে প্রয়োগ করে আমাদের থামিয়ে দিতে চাইলেও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা কখনো পিছপা হবে না। আর সর্বশেষ দ্বীনের বিজয়ের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওয়াদা তো রয়েছেই।

শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত সাবেক ছাত্র জনশক্তিদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম।

শিক্ষাশিবিরে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিনদের জন্য আশ্রয়স্থল, তিনি চাইলে নিমিষেই সকল জুলুম অত্যাচারের অবসান ঘটিয়ে এখানে দ্বীনের বিজয় দান করতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা সকল যুগের সকল জুলুমবাজ, অত্যাচারী শাসকদের জন্য দৃষ্টান্ত রেখে দিয়েছেন। মানুষের উপরে অন্যায় ভাবে জুলম করা কালে আল্লাহ তাদের ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। নির্যাতিতরা চিরকাল নির্যাতন ভোগ করবে এটা আল্লাহর সুন্নাত নয়। আল্লাহ বলেছেন, আমি একটা সভ্যতাকে আরেকটা সভ্যতার উপরে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করি। একটা সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেই তাদের পাপের ফসল হিসেবে।

তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার বাংলাদেশকে দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। জনজীবন আজ চরম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। দেশে জ্বালানি তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরকারের গ্রেফতার, হয়রানী, মিথ্যা মামলা দেয়াসহ সকল প্রকার নির্যাতন নিপীড়ন ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। জামায়াত নেতৃবৃন্দসহ মজলুম আলেম-ওলামাদের কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। আজ গোটা দেশের মানুষই তাদের জুলুমের শিকারে পরিণত হয়েছে।

আমরা দাবি জানায়, দেশের স্বার্থে জামায়াত নেতৃবৃন্দসহ গ্রেফতার সকল আলেম-ওলামাদের মুক্তি দিন। সেই সাথে জনগণের মুক্তির জন্য অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার অধীনে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের জনগণ নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে হলেও আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে আপনাদের বিদায় নিশ্চিত করবে। দেশবাসী এসব নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে।

মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, দায়িত্ব পালন থেকে দূরে থাকা, জিহাদের ভূমিকা থেকে পিছিয়ে থাকা ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের মনটাকে সবসময়ে সতেজ করে দিন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যারা নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ সংগ্রাম করে, সেখানে আগ্রহী কিছু অক্ষম ব্যক্তি থাকলেও তারা জিহাদের সওয়াব পেয়ে যাবেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের জন্য জান্নাতের ওয়াদা রেখেছেন। আমাদের নেতৃবৃন্দ যখন শহীদ হন তখন একটি গোষ্ঠী মিষ্টি খেয়েছিল! আর আমরা চোখের পানি ফেলেছি। স্মরণে রাখতে হবে মুজাহিদদের মর্যাদা পুরস্কার আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। দেশে আজ নাগরিকদের নূন্যতম অধিকারও নেই। জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নেই, ভোটের অধিকারসহ জনগণের সকল অধিকারই একে একে কেড়ে নেয়া হয়েছে। যারা জনগণের সম্পদ লুট করে, ইজ্জত লুট করে তারা কখনো দেশের রক্ষাকারী হতে পারে না। তাই তিনি জনগণের অধিকার সুনিশ্চিত করতে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকলকে একযোগে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, নিজেদের পরিশুদ্ধি ও পরিচ্ছন্নতা সবার আগে দরকার। আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে তোমরা যা নিজে করো না, তা অপরকে বলো না। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদেরকে গড়ে তোলার প্রয়োজনে আমরা ব্যক্তির মান উন্নয়ন করতে চাই। স্মরণে রাখতে হবে দুজন সম্মানিত লেখক আমাদের ডান ও বাম কাঁধে বসে সর্বদা আমার কাজ কর্ম লিপিবদ্ধ করছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা নিজে আমাদের সকল কর্মতৎপরতা সম্পর্কে অবহিত। এজন্য আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী হিসেবে আমাদের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। সেখানে শপথ হচ্ছে একটা লক্ষ্যে উপণিত হওয়ার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যম। সব সময়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রীয় থেকে প্রত্যেক কর্মীকে মান উন্নয়ন করতে হবে। মনে রাখতে হবে ত্যাগ-কুরবানী ছাড়া দুনিয়ার ছোট্ট একটি বস্তুও অর্জন করা সম্ভব হয় না। সুতরাং সকল পরিস্থিতিতে আমাদের ত্যাগ-কুরবানি তথা কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেদের জান-মাল, সময়, শ্রম ও মেধা দিয়ে বাংলাদেশের সবুজ ভূ-খণ্ডে দ্বীন ইসলাম বিজয়ের আন্দোলনে আমাদেরকে আত্মনিবেদিত থাকতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের ইখলাস-খুলুসিয়াতকে আরো উন্নত করতে হবে। সর্বপরি সিবগাতুল্লাহ আল্লাহর রংয়ে রঙিন হওয়ার চিন্তা লালন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এদেশে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের ঘাটতি পূরণ করার জন্য ছাত্র জীবনে আপনারা নিজেদেরকে তৈরি করেছিলেন। আজ আপনাদেরকে দ্বীন বিজয়ের কাজে সক্রীয় থেকে আরো বলিষ্ঠ অবদান পেশ করতে হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের কর্মী হিসেবে আমরা শপথ করতে চাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। যেন সাধারণ মানুষ আমাদেরকে নিয়ে মদিনা রাষ্ট্রের মতো স্বপ্ন দেখে। সমাজের তৃণমূল থেকে সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে নিয়ে আসার জন্য আমরা ভূমিকা রাখবো। সেই সাথে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তিনি শহীদ নেতৃবৃন্দের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য জামায়াতের কর্মীদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে আরো তৎপর হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, কর্মীদেরকে পরিকল্পনা মাফিক ভারসাম্য জীবনযাপন করতে হবে। দ্বীনের কাজের হক আদায় করে আমাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। বিশ্বাসের যায়গাটা সব সময়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। কোনো ঈমানদার বলে না আমি পরিস্থিতির শিকার বরং রাসূল স:-এর সাথে যারা এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ছিলেন তারা বলেছেন, এখন আমাদের বাইয়াত বা শপথের অঙ্গিকার হচ্ছে এই পরিস্থিতিকেই আমরা শিকার করবো। পরিস্থিতির কাছে আমরা নতি-স্বীকার করবো না। আমরা যদি মজবুতভাবে ঈমানের উপরে টিকে থাকতে পারি, একটু দাঁড়িয়ে যায় ইনশাআল্লাহ সকল প্রতিকূলতা ঈমানদারের কাছে নতি শিকার করে পায়ে লুটিয়ে পড়বে। আজকে সেই ঈমান নিয়ে আমরা তৈরি হতে পারলে শুধু বাংলাদেশ না গোটা বিশ্বের পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ।-বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement