২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হলো

-

প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুক্রবার দুপুর থেকে শুরু হলো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতীক পেয়ে এ নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার ঘোষণার মাধ্যমে নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের প্রত্যাশায় প্রচারণা শুরু করেছেন। নির্বাচন কমিশন বলছেন, আচরণবিধি মানা না হলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রথমে মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন। পরে তিনি সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন।

বেলা সাড়ে ১০টায় প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নেতাকর্মীদের নিয়ে কারামাতিয়া মসজিদে শোকারানা নামাজ পরেন। পরে পল্লীনিবাসে প্রয়্ত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মাজার জেয়ারত করতে যান। সেখানে সূরা ফাতেহা পাঠের পর মোনাজাতে অংশ নেন প্রার্থী মোস্তফাসহ সমর্থক এবং নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যালে শ্রদ্ধা জানান।

পরে দু’প্রার্থীই সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার উপস্থাপন করেন। জাতীয় পার্টির খামার মোড়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ও ইশতেহার উপস্থাপন করেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি এবং সদ্য বিদায়ী মেয়র মোস্তাফিজার রহামান মোস্তফা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আহ্বায়ক আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন ও জাহিদুল ইসলামসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

মোস্তফা বলেন, আমি মনে করি, জাতীয় পার্টি ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যেই আমি গণমানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। আমার ওপর মানুষের উচ্ছ্বাস এবং আমাকে নিয়ে মানুষের উৎসাহ দেখছি। সে কারণে আমি মনে করি, আগামী ২৭ তারিখে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে আমার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ ভাগ ইনশাআল্লাহ।

এ সময় তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান, মহাসচিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বিরোধী দলীয় নেতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোটটি হবে একটি সেনসেটিভ ভোট। সারা দেশে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে এর দিকে। কারণ, এই প্রথম এই সিটিতে ভোট হচ্ছে ইভিএমে। ইভিএম নিয়ে মানুষের অনাগ্রহ আছে। মানুষকে আগ্রহী করতে প্রচারণার কথা বলছে নির্বাচন কমিশন। আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করি, কোনো ধরণের ব্যত্যয় হবে না এখানে।

অন্যদিকে তিনি শ্যামাসুন্দরী খালকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রথম এজেন্ডা হিসেবে রেখে ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে বলেন, শ্যামাসুন্দরী খাল প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, এটা রংপুরের মানুষের একটা বড় দাবি। জনমতের দাবির ভিত্তিতে এটা আমি প্রথম এজেন্ডা হিসেবে আমার ইশতেহারে রেখেছি। এভাবে ধারাবাহিকভাবে ৩১টি এজেন্ডা আমি দিয়েছি। সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য যে যে দাবি উপস্থাপন হওয়া দরকার, আমি সেসব সন্নিবেশন করে ইশতেহারে এজেন্ডা হিসেবে দিয়েছি। আমি আশা করি, আমার ইশতেহার যখন জনগণের কাছে যাবে, তখন জনগণের মতামতের সাথে আমার ইশতেহারের মিল থাকবে।

অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার ঘোষণা করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন মহানগর সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, দিলশাদ ইসলাম মুকুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশাদ রশিদ, উপ-দফতর সম্পাদক আবু সাদাত শাওনসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

এ সময় ডালিয়া বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রংপুরবাসীকে ভালোবাসেন। রংপুরবাসী কখনই রংপুর সদর আসনে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করেনি। তারপরেও তিনি রংপুরের মানুষের কথা, তার শ্বশুরবাড়ির কথা, রংপুর জেলা শহরের কথা ভেবে তিনি রংপুরকে বিভাগ দিয়েছেন। সিটি কর্পোরেশন করেছেন। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। রংপুর মেট্রোপলিন পুলিশ দিয়েছেন। ছয়টি থানা দিয়েছেন। হাইটেক পার্ক দিয়েছেন। সেখানে ২০ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এক লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে সুবিধা পাবে। তিনি এতো দিয়েছেন রংপুরে। সে হিসেবেই ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচনে মানুষ আর ভুল করবে না। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে এবং রংপুরের উন্নয়ন তরান্বিত করবে।

এ সময় ২৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে ডালিয়া বলেন, শ্যামা সুন্দরী খাল ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। এটাকে আমি রক্ষা করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে সেটি করব। শ্যামা সুন্দরী খালের দু’পাশে মাটি ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। সেগুলোকে ওয়ানওয়ে রাস্তা তৈরি করব। যেন রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করতে পারে। যে স্কুল-কলেজগুলো আছে, তা পর্যাপ্ত নয়। আরো সরকারি স্কুল-কলেজ করার চেষ্টা করব। কয়েকটি হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করব। রংপুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরী প্রশিক্ষককেন্দ্র প্রয়োজন। সেসব আমি করার চেষ্টা করব। ক্ষুদ্র কুটির শিল্প এবং গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার ব্যাপারে চেষ্টা করব।


জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ ছাড়াও স্বতন্ত্র হিসেবে কোতয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লতিফুর রহমান, মেহেদী হাসান বনি এবং জাসদের শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান, খেলাফত মজলিসের খোরশেদ আলম মেয়র পদে লড়বেন। আর সংরক্ষিত কাউন্সিলরে ৬৭ এবং সাধারণ কাউন্সিলরে ১৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২৭ ডিসেম্বর হবে ভোট।

এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় কোতয়ালী থানার সহ-সভাপতি লতিফুর রহমান মিলনকে বহিষ্কার করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরমও তোলেন নি এবং প্রচারণায় আওয়ামী লীগের ব্যানারও ব্যবহার করেননি।

এদিকে প্রতীক বরাদ্দের পাশাপাশি প্রচারণায় আচরণবিধি মেনে চলার তাগিদ নির্বাচন কমিশনের। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, আমরা প্রার্থীদের বলেছি, নির্বাচনী আচরণবিধি এবং আইনবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে। আমরা তাদের বলেছি, ২টার এক মিনিট আগে এবং রাত ৮টার এক মিনিট পরে প্রচারণা করতে পারবেন না। নির্ধারিত সংখ্যার বেশি ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না। প্রতিটি ক্যাম্পে অনুমতিপত্র রাখতে হবে। যদি অনুমতিপত্র না পাওয়া যায়, তাহলে ক্যাম্প ভেঙে দেয়া হবে এবং প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে সুনির্দিষ্টভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে। কেউ কোনোভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্র আরো জানিয়েছে, এবার ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর ১৯৩টি কেন্দ্র থাকলেও ৩৬টি বেড়ে কেন্দ্র সংখ্যা হয়েছে ২২৯টি। এছাড়াও এবার স্থায়ী ভোটকক্ষ করা হয়েছে এক হাজার ৩৪৯টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ আছে ১৯৩টি। গত ২০১৭ সালের নির্বাচনের ভোটার সংখ্যার তুলনায় এবার ভোটার বেড়েছে ৩২ হাজার ৫৭৫ জন। গত বছর তিন লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ জন ভোটার থাকলেও এবার ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে চার লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জনে। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং মহিলা দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন।


নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় বারের মতো এই নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোট। দ্বিতীয় নির্বাচন ২০১৭ সালের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে প্রায় এক লাখ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। আর ২০১২ সালে রংপুর সিটির প্রথম মেয়র হয়েছিলেন মরহুম সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু।


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে

সকল