১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুঃশাসন ও অব্যাহত দুর্নীতি লুটপাটের কারণে দেশ আজ মহাসঙ্কটে : হারুন

দুঃশাসন ও অব্যাহত দুর্নীতি লুটপাটের কারণে দেশ আজ মহাসঙ্কটে : হারুন - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেছেন, বাংলাদেশ তার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। ক্ষমতাসীন সরকারের দুঃশাসন ও অব্যাহত দুর্নীতি লুটপাটের কারণে এই মহাসঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রে সৎ মানুষের শাসন কায়েম ছাড়া এই সঙ্কট দূর হবে না।

বুধবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সাধারণ অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী, লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, কবির আহমদ, মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, মনসুর রহমান প্রমুখ।

অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, সরকার সারাদেশে বাজারগুলোতে সিণ্ডিকেট তৈরি করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের জিম্মি করেছে। আজ মানুষ হাট-বাজারে যেতে পারছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি চলছে। চাল-ডাল-তেলের দাম নিম্ম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এরমধ্যে জ্বালানি তেল ও ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধি মানুষদের আরো বিপাকে ফেলেছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। কিন্তু সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে অযৌক্তিক ও বেহুদা কথাবার্তা বলে সিন্ডিকেট ও কালোবাজারীদের আশকারা দিচ্ছে। সরকারের আশকারা পেয়ে তারা অবৈধ সম্পদ ও কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব নয়। যদি তারা শ্রমিকবান্ধব সরকার হতো তাহলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করত। কিন্তু সরকারের এই উদ্যোগ গ্রহণ করার মতো মানসিকতা নেই। তারা চায় তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের কালো টাকা ও সম্পদে ভরপুর করে তুলতে। যেন তারা আগামী নির্বাচনে এই টাকা ব্যবহার করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারে। কিন্তু তারা জানে না দেশের জনগণ তাদের প্রতি এতটাই অসন্তুষ্ট যে সুষ্ঠু ভোট হলে ক্ষমতাসীন দলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, চলমান অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশের মানুষ যখন ফুলে ফেঁপে উঠেছে তখন সরকার তাদের পুরনো রূপে ফিরে গেছে। তারা অস্ত্রের মুখে মানুষের প্রতিবাদের ভাষা স্তব্ধ করে দিতে চায়। তাই আবার সারাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের খুন-গুম, গ্রেফতার শুরু করেছে।

এ সময় তিনি কারাগারে আটক বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলামসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবনা :

১. আজকের এই কার্যকরী পরিষদের অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আজ শ্রমজীবী মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আজকের এই অধিবেশন মানুষের দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য সকল সিন্ডিকেট ভেঙে সকল দ্রব্যমূল্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে জোর দাবি জানাচ্ছে।

২. এই অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, সরকার ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ছয় টাকা বৃদ্ধি করে কৃষকদের বিপাকে ফেলে দিয়েছে। এই দাম বৃদ্ধির ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে। এই থেকে উত্তরণের জন্য অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহারের জন্য আজকের অধিবেশন দাবি জানাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের শ্রমশক্তির ৬৫ ভাগ কৃষি খাতে নিয়োজিত। কিন্তু দেশে এখনো কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে না উঠার কারণে কৃষক পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। ফলে কৃষক কাজের আগ্রহ হারাচ্ছে এবং তাদের আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এই অধিবেশন সরকারি ও বেসরকারিভাবে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।

৩. আজকের অধিবেশন আরো গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে, সরকারের অহেতুকভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি দেশকে মহাসঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষক হতে শুরু করে সমাজের নিম্ম আয়ের মানুষের জীবন আবারো ধাক্কা খেয়েছে। এতে যানবাহনের ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের ইশারায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষদের জিম্মি করে জ্বালানি তেল চারগুণ দামে বিক্রি করছে। আজকের এই অধিবেশন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার করে মূল্য কমিয়ে জন-জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছে। আজকের এই অধিবেশন জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে ভুর্তকি বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছে।

৪. এই অধিবেশন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছে এবং রাজনৈতিকভাবে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছে।

৫. শ্রমিক বাঁচলেই শিল্প বাঁচবে, শিল্প বাঁচলে দেশ বাঁচবে এবং দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় হবে। টেকসই উৎপাদন খাতকে মজবুত করতে হলে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাই এই অধিবেশন সরকারের প্রতি শ্রমিকদের জীবন যাত্রার মান ঠিক রাখার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছে।

৬. আজকের এই অধিবেশন মনে করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও অধিকাংশ গার্মেন্টস মালিক শ্রমিকদের সর্বনিম্ম মজুরি না দিয়ে বিভিন্নভাবে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এমনকি দাবি আদায়ের আন্দোলনকে দমনের নামে হয়রানি ও গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত করছে। এই অধিবেশন গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমানে গৃহিত কালাকানুন টার্মিনেশন এ্যাক্ট বাতিল করে পূর্বের আইন বহাল করার জোর দাবি জানাচ্ছে এবং সর্বনিম্ম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট নির্ধারণ করে মজুরি কমিশন ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছে। সকল বন্ধ গার্মেন্টস খুলে দিয়ে শ্রমিকদের চাকুরিতে বহাল রাখার জোর দাবি জানাচ্ছে।

৭. আজকের এই অধিবেশন বন্ধকৃত ২৬টি জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের যাবতীয় বকেয়া পাওনাদি অবিলম্বে পরিশোধ করার জোর দাবি জানাচ্ছে এবং বিএমআরই পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন করে উক্ত ২৬টি জুট মিলসহ সরকারি ও বেসরকারি বন্ধকৃত সকল কল-কারখানা অবিলম্বে চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছে।

৮. এই অধিবেশন আইএলও কনভেনশন মোতাবেক অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে সরকার ও শ্রম অধিদফতরকে জটিলতা সৃষ্টি না করে সহজ শর্তে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।

৯. এই অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে না পারলে পরিবহন শ্রমিকদের দুর্দশা শেষ হবে না। তাই অধিবেশন পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান, চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছে এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে দুর্ঘটনাকবলিত পরিবহন শ্রমিকদের জন্য কমপক্ষে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।

১০. আজকের এই অধিবেশন মনে করে যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন অগ্রগতি মানে দেশের উন্নতি। তাই বাংলাদেশ রেলওয়েকে দ্রুত আধুনিকায়নের পাশাপাশি ঢাকা-লাকসাম-ঢাকা কর্ড লাইন, দোহাজারী-কক্সবাজার ও বগুড়া, জামতইলসহ সারাদেশে রেলওয়ে সম্প্রসারণ করার জোর দাবি জানাচ্ছে।

১১. আজকের এই অধিবেশন মনে করে যে, শ্রমজীবী মানুষের প্রকৃত সমস্যার সমাধান কুরআন সুন্নাহর আইন প্রতিষ্ঠা ছাড়া সম্ভব নয়। তাই ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রমজীবী মানুষসহ সকল স্তরের শ্রমিক জনতাকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পতাকাতলে শামিল হওয়ার উদাত্ত্ব আহ্বান জানাচ্ছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement