২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৬০ থেকে ৬৫টি ওয়ার্ডের কর্মীসভা শেষ : রবিন

তানভীর আহমেদ রবিন - ছবি : সংগ্রহ

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৬০ থেকে ৬৫টি ওয়ার্ডের কর্মীসভা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন।

সম্প্রতি নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।

তানভীর আহমেদ রবিনের দেয়া সাক্ষাতকারটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো :

নয়া দিগন্ত : দীর্ঘদিন পর মহানগরের কমিটি হয়েছে, এই কমিটি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

রবিন : এটাকে আমরা আশার আলো হিসেবে দেখছি। আপনারা জানেন ২০১৮ সালে সোহেল ভাইকে সভাপতি ও বাসার ভাইকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেয়া হলো। আপনি যদি এর আগের সময়গুলো বিবেচনা করেন, তাহলে দেখবেন একেকটি কমিটির দীর্ঘ মেয়াদে ছিল। সেটার ফলে দেখা গেছে যে বিভিন্ন থানায় ১৫ বছর ২০ বছর একটি কমিটি ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। যে কমিটি ছিল সেটা রি-শাফল করা হয়নি। এখন আমাদের সংগঠন চলমান হচ্ছে, গতিশীল হচ্ছে। সেইভাবে আমি মনে করি খুব ভালো একটা উদ্যোগ। যদি এইভাবে কমিটিগুলোর চলমান থাকে। প্রতি দুই বছর পরপর তো আমাদের নতুন একটি কমিটি আসার কথা। দুই বছরে না হোক আড়াই বছরে-তিন বছরের মাথায় যদি কমিটি রি-শাফল হয়, তাহলে নতুন নেতৃত্ব আসবে। আমাদের যে গ্যাপটা আছে সেটা দূর হতে বেশি সময় লাগবে না।

তিনি বলেন, আমরা কর্মীসভা করছি। মহানগর দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ড, ইতিমধ্যে ৬০ থেকে ৬৫টি ওয়ার্ডের কর্মীসভা হয়ে গেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তাবিত, আমাদের যে আটটি সাংগঠনিক টিম, তাদেরকে প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। আটটি টিমের কাজ মোটামুটি এগিয়ে গেছে।

নয়া দিগন্ত : দীর্ঘ সময় বিএনপি ক্ষমতায় নেই। ২০১৪ সাল ও ১৮ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন করেছে। কিন্তু ঢাকায় আন্দোলন কার্যকর করতে পারেনি। এর কারণ কি?

রবিন : এখানে অনেক বিষয় আপনাদেরকে বিবেচনা হবে। আন্দোলনকে একেবারে হয়নি এটা সঠিক না। অন্যান্য জেলা শহরের তুলনায় দেখতে হবে ঢাকাতে কত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে, গুম-খুন তো কোনো কিছুই বাকি রাখেনি তারা। নেতাকর্মীদের পরিবারের মধ্যে তারা একটা ভীতি তৈরি করেছিল। আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছিল সরকার। দলের সাথে যারা জড়িত তাকে না পেয়ে তার বাবাকে-মাকে-বোনকে ধরে নিয়ে গেছে। দুলাভাইকে ধরে নিয়ে গেছে। দেখা গেছে দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের ধরে নিয়ে গেছে। ‌ভীতির বিষয়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অনেককে গুম করেছে, এর তো কোনো হিসাব হয় নাই। ভীতি সৃষ্টি হয়েছে এটা সত্য, তবে আমাদের এখানে আন্দোলন হয়েছে। আমরা পুলিশের বন্দুকের গুলির বিপরীতে নিরস্ত্রভাবে আমরা সফল হতে পারেনি।

নয়া দিগন্ত : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কেন্দ্র করে ঢাকাতে বিএনপি নানা কর্মসূচি পালন করছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে কি আপনি মনে করেন বেগম জিয়ার বিদেশে নেয়ার দাবি পূরণ হবে?

তানভীর : আওয়ামী লীগের ওপরের নেতা থেকে শুরু করে নিচের নেতা পর্যন্ত সবাই সারাদিন বলে বিএনপি'র কিছু নেই। আমরা প্রায় ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে। তবুও নেতাকর্মী দল ভেঙে যায়নি। কোনো নেতাকর্মী ছুটে অন্য দলে যায়নি। বরং অন্যরা আমাদের দলে যোগ দিচ্ছে। ম্যাডামকে যখন অবৈধভাবে সাজা দেয়া হলো, ম্যাডামের নির্দেশনা ছিল, আন্দোলন করতে গিয়ে যেন দেশের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এটা ম্যাডামের থেকে নির্দেশনা দেয়া ছিল। অনেকে বলে, আমরা ম্যাডামের জন্য কিছুই করতে পারিনি। কথাটি ঠিক নয়। আমরা ম্যাডামের আদেশ পালন করেছি। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আমাদের করতে বলেছিল। আমরা সেটাই করেছি।

তিনি বলেন, ম্যাডাম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে হয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির করছি‌ যাতে আওয়ামী লীগ আমাদের ওপর দোষারোপ করতে না পারে। অতীতে আপনারা দেখেছেন পঙ্কজ আওয়ামী লীগের এমপি, উনারা নিজের বাসে আগুন দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারাই প্রকাশ করেছে। ‌ আমরা চাইনি আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আওয়ামী লীগ ভুল ব্যাখ্যা করুক। এ সুযোগটা এবার আওয়ামী লীগ পাইনি। আমরা সরকারকে চাপে রেখেছি। সারা বাংলাদেশের কর্মসূচি পালন হচ্ছে। ‌

রবিন বলেন, একদিকে ম্যাডাম অসুস্থ, আমাদের দলীয় কার্যক্রম ও দলকে সুসংগঠিত করা, দলকে গতিশীল করার কাজ কিন্তু থেমে নেই। আমাদের নেতা তারেক রহমান নিরলসভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন, আমাদের সাথে কথা বলছেন। উনি কিন্তু আমাদেরকে রেডি করছেন। আমরা কিন্তু রেডি আছি। ‌ আমাদেরকে নির্দেশনা দিলে সরকার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

নয়া দিগন্ত : দল থেকে যদি কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা আসে তাহলে মহানগর এটাকে কিভাবে বাস্তবায়ন করবে?

রবিন : আমরা দিনে রাতে মহানগর দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ড ও আটটি ইউনিটে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। শুধু ওয়ার্ড ভিত্তিক না ওয়ার্ডের মধ্যে ইউনিট কমিটি হয় সেগুলো আমরা হাত দিয়েছি। এটা তো আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে করছি। আমাদের মহাসচিব অথবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেকোনো সময় নির্দেশ দিলে তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করব। সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে পড়বে ঢাকাবাসী।

নয়া দিগন্ত : সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের শাখা কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হচ্ছে। পুনর্গঠন আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

রবিন : এটা একই বিষয়। আমাদেরকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমাদের নেতাকর্মীরা একেবারেই ক্ষতিগ্রস্ত। সব দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। নেতাকর্মীরা এলাকায় তো ছোটখাটো ব্যবসাবাণিজ্য করছে, এইগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা তো আমাদেরকে ছেড়ে যায়নি। বরং অত্যাচার নির্যাতনের কারণে নেতাকর্মীরা আরো শক্ত অবস্থান ধারণ করছে এবং এরমধ্যে পুনর্গঠনের কাজ চলছে সেখানে নতুন উদ্যমে এই কাজগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। এটা বিএনপির জন্য পজিটিভ সাইন। যারা দীর্ঘদিন কমিটিতে মূল্যায়ন হয়নি তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে এখন।

নয়া দিগন্ত : সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার পতনের আন্দোলনে আপনাদের কী করণীয় বলে বিবেচনা করছেন?

রবিন : দল সুসংগঠিত করা। যে অত্যাচার-নির্যাতন আমাদেরকে করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে এরকম আপনি খুঁজে পাবেন না। নির্যাতনের আর কী বাকি আছে? গুম-খুন তো সর্বোচ্চ নির্যাতন। এর উপর আর কী নির্যাতন হবে? মামলাকে এখন কেউ ভয় পায় না৷ মামলা আমাদের কাছে এখন নম্বর হয়ে গেছে যে একের পর দুই, দুইয়ের পর তিন। মামলা তারা দিতে পারে, তবে মামলা দিয়ে আমাদের দমাতে পারেনি। পরে আমাদের গুলি করে হত্যা করেছে, আমাদের গুম করেছে। সেখানে সর্বোচ্চ নির্যাতন করেছে। আর কী করবে? যে নির্যাতনটা ১৪ বছর ধরে আমাদের উপরে চালিয়েছে, এটা আমাদের সহ্য হয়ে গেছে। এটাকে আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে যে এখন গুম খুন করেও কিছু হচ্ছে না। আমাদের দল ভাঙতে পারেনি। আমাদের দমাতে পারে নাই। জেলা জেলায় সমাবেশ হচ্ছে, ঢাকায় সমাবেশ হচ্ছে, যেখানে যা হচ্ছে সেখানেই মানুষের ঢল নামছে। এটা তো অকল্পনীয়। তার মানে কী? সাধারণ মানুষ যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, এর মানে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে তারা না বলছে। লীগের প্রতি তারা ঘৃণা প্রদর্শন করছে। তারা বিএনপির পক্ষে এসে দাঁড়াচ্ছেন।

নয়া দিগন্ত : মহানগরে নেতাকর্মীদের প্রতি কী আহ্বান থাকবে।

রবিন : নেতাকর্মীদের প্রতি আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। এত নির্যাতনের পরও, দীর্ঘদিন দলের কোনো পদে না থেকেও, পদ না পাওয়ার পরও কিন্তু দল ছেড়ে যায়নি। তৃণমূলের কাছে আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। তাদের পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই। তারা তাদের সন্তানকে বলেনি যে এখান থেকে সরে এসো, ব্যবসা-বাণিজ্য করো বা বিদেশে চলে যাও। তারা এটা বলেনি। তাদের কাছে আমরা চিরঋণী। আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্যের ফল অনেক মিষ্টি। ধৈর্যের ফল আমরা দেখতে পারছি। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে শীর্ষ স্থানীয় নেতা আছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা কাজ করব। যখন যে নির্দেশনা আসবে, সেই নির্দেশনা ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত

সকল