২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মন্ত্রী এমপিসহ জনপ্রতিনিধিদের কর্মকাণ্ডের ওপর কতটা নজরদারি আছে

- ছবি - সংগৃহীত

বাংলাদেশে মন্ত্রী-এমপিসহ জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর রাখা বা পর্যবেক্ষণের আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা নেই। একটা ধারণা রয়েছে যে, অনানুষ্ঠানিকভাবে এক ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি থাকে। তবে তাদের সরকারি কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার কিছু আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে।

অনানুষ্ঠানিক নজরদারি কখনো সরকারের ইচ্ছায় হয়, কখনো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের অংশ হিসাবে হয়ে থাকে।

অশালীন মন্তব্যের অডিও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী, এমপিসহ জনপ্রতিনিধি যারা সরকারের কেন্দ্রে থাকেন, তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর সবক্ষেত্রে নিয়মিত নজরদারি রাখা উচিত কিনা- এই প্রশ্ন অনেকে তুলছেন।

কী ধরনের নজরদারি রয়েছে?

মন্ত্রী, এমপিদের কর্মকাণ্ডকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে তাদের সরকারি কাজ বা দায়িত্বের জায়গা এবং আরেকটি ব্যক্তিগত।

তাদের দায়িত্ব পালন বা সরকারি কাজের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং তারা কী করতে পারবেন বা পারবেন না- সেটা বলা রয়েছে।

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং এমপিদের শপথ গ্রহণর সময় নৈতিকতাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব এবং আচরণের প্রশ্নে অঙ্গীকার করতে হয়।

এই শপথকেই তাদের কর্মকাণ্ডের গাইডলাইন হিসাবে বিবেচনা করা হয় বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

সাবেক একজন সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেছেন, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী যখন মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে থাকেন, তখন প্রশাসনিক দিক থেকে তাকে মন্ত্রিসভা এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করতে হয়।

এছাড়াও সংসদীয় পদ্ধতিতে সংসদের কাছেও জবাবদিহি করতে বাধ্য মন্ত্রী এবং এমপিরা।

এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংসদীয় কমিটিগুলোকে মূল প্ল্যাটফর্ম হিসাবে দেখা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ড. নূসরাত জাহান চৌধুরী বলেছেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে সংসদীয় কমিটি রয়েছে, এই কমিটিগুলো মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রীর সরকারি কর্মকাণ্ড নজরদারি করবে বা তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করবে- এই ব্যবস্থা রয়েছে।

মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার পদ্ধতির বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতারও কিছু প্রশাসনিক ব্যবস্থাও রয়েছে।

তাদের কর্মকাণ্ডের নজরদারি বা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের।

কিন্তু এসব আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকলেও তা কতটা কার্যকর হয়- বিভিন্ন সময় এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে নজরদারি কতটা

মন্ত্রী এমপিসহ জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব মনিটর করার বিধান বা আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকলেও সর্বোপরি জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করার বিষয়ও রয়েছে।

সরকারি দায়িত্বের বাইরে মন্ত্রী এমপি বা জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি করা প্রয়োজন কিনা- সেই প্রশ্ন এখন উঠেছে।

জনপ্রতিনিধি এবং এমনকি কোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারির ব্যাপারে কোনো আইন নেই। সেজন্য আনুষ্ঠানিক নজরদারিরও কোনো ব্যবস্থা নেই।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান মনে করেন, ‘জনপ্রতিনিধি হলেও তার ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড নজরদারি করা হলে, তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, এ ধরনের আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা করা হলে, তা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের সাংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে।

তবে, একজন জনপ্রতিনিধি ব্যক্তিগত আচরণ বা কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে কতদূর যেতে পারবেন, সেই সীমা তার নিজেরই নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ড. নূসরাত জাহান চৌধুরী বলেছেন, ‘কেউ যখন জনপ্রতিনিধি হিসাবে শপথ নেন, তখন তার ব্যক্তিগত আচরণ বা কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে একটা দায়িত্ববোধ চলে আসে।’

‘সেটি অনুধাবন করে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তার সব ধরনের কর্মকাণ্ডই পরিচালনা করতে হবে।’

অনানুষ্ঠানিক গোয়েন্দা নজরদারি

জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক নজরদারির কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও এক ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি হয়- এই ধারণা অনেকের মাঝেই রয়েছে।

পুলিশের সাবেক একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেছেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য সংগ্রহের কোনো সীমারেখা নেই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোনো অসংগতির তথ্য পেলেই তা খতিয়ে দেখা বা নজরদারির আওতায় আনতে পারে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের নজরদারির কাজের ক্ষেত্রে দেশের অথবা সরকারের বা জনগণের স্বার্থবিরোধী তৎপরতার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়। এ ধরনের খবর পেলে তারা নজরদারি করে থাকে।’

তাদের এই নজরদারিতে পাওয়া তথ্য তারা নিজেদের সংস্থার উচ্চপর্যায়ে অবহিত করে। সেই তথ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তা সরকারের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত পাঠানো হয়।

মোখলেসুর রহমান জানিয়েছেন, এই নজরদারির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিরক্ত না করে গোপনে কাজটি করতে হয় এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের স্ব স্ব বিধান বা আইন অনুযায়ী এটা করে থাকে।

সাবেক সচিব এবং বিশ্লেষক যাদের সাথে কথা বলেছি, তারা বলেছেন, জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের ওপর আনুষ্ঠানিক নজরদারির ব্যবস্থা করা হলে ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্ন উঠবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর ঘাটতি
তবে বিভিন্ন সময় অনেক জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অশালীন মন্তব্যের ভিডিও-অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর কয়েকদিন ধরে সমালোচনার মুখে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

সেই অডিও ক্লিপ অর্থ্যাৎ একটি টেলিফোন আলাপ যা ভাইরাল হয়, তাতে একজন চিত্রনায়িকার সাথে মুরাদ হাসানের কণ্ঠে কথোপকথন শোনা যায়।

এই টেলিফোন আলাপটি ছিল দুই বছর আগের, যা এখন ফাঁস হয়েছে।

এতদিন পর তা কীভাবে ফাঁস হলো এবং এর আগে এ ধরনের একটি বিষয় কি কর্তৃপক্ষ জানতে পারেনি? এমন প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার অদূরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে জাহাঙ্গীর আলমকে। তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে জাহাঙ্গীর: আলমের বিতর্কিত মন্তব্যের অডিও ভাইরাল হওয়ার পর।

শেখ মুজিবের ম্যুরাল নির্মাণের বিরুদ্ধে মন্তব্যের অডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাজশাহীর কাটাখালীর মেয়রের পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলীকে।

এসব ঘটনা ভাইরাল হওয়ার বা আলোচনায় আসার আগে কেন ব্যবস্থা নেয়া যায় না- এমন প্রশ্নও অনেকে তুলছেন।

এখানে রাজনৈতিক দলের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

মন্ত্রী নিয়োগ করা এবং বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী সম্পর্কে কতটা তথ্য সংগ্রহ করে থাকে বা কতটা সতর্কতা অবলম্বন করে- এই প্রশ্নে ঘাটতি দেখছেন বিশ্লেষকরা।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেছেন, অতীতে জনপ্রতিনিধি হিসাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব মেকানিজম ছিল। এখন দলগুলোর সেই ব্যবস্থা নেই।

তবে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-বড় এই দুটি দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বললে তারা তাদের ঘাটতির অভিযোগ মানতে রাজি হননি।

সূত্র : বিবিসি

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement
গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক আহত অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর সাংবাদিকের বড় ভাই উদ্ধার মালয়েশিয়ায় ২ হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে ১০ নৌ-সদস্য নিহত প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে কাতারের আমির বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়লো ৭ কৃষক পরিবারের বসতঘরসহ গরু-ছাগল ফরিদপুরে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় রিকশাচালক নিহত

সকল