২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশে করোনা টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

দেশে করোনা টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী - ছবি : সংগৃহীত

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি দেশে উৎপাদনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা চলছে।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত লিখিত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম মনিরা সুলতানা।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকার করোনা মহামারী থেকে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশব্যাপী ও অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন কার্যকরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতা দেয়াসহ জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ করোনা মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের জন্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান, আর্থিক প্রণোদনা প্রদান, যথাসময়ে টেস্টিং কিট আমদানি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ল্যাব স্থাপনসহ করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করায় ভাইরাসের বিস্তার রোধে দক্ষিণ এশিয়াসহ অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের যেসব দেশ টিকাদান কার্যক্রম প্রথমদিকে শুরু করতে সক্ষম হয়, বাংলাদেশ তার অন্যতম। যথাসময়ে করোনার টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে সরকার শুরু থেকেই উদ্যোগ নিয়েছে। টিকা সংগ্রহে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ হলো- সরকার কর্তৃক ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট হতে সংগৃহীত এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত মোট এক কোটি দুই লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দ্বারা করোনা টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৮ মে পর্যন্ত দেশের চল্লিশোর্ধ্ব ও সম্মুখসারির বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে মোট ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ৩১২ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভারত হতে টিকা সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভারতে করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটায় এপ্রিলে ভারত সরকার টিকা রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়। ইতোমধ্যে চীনের সিনোফার্ম থেকে টিকা ক্রয়ের বিষয়টি মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়েছে। জুন, জুলাই ও আগস্ট; প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা চীন থেকে পাওয়া যাবে। চীন সরকারের কাছ থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পাঁচ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে। এসব ভ্যাকসিন প্রদানের কাজ ২৫ মে শুরু হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও), কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি হতে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জরুরিভিত্তিতে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি বরাবর পত্র পাঠিয়েছে। ফাইজারের টিকার এক লাখ ৬২০ ডোজ আজ (২ জুন) দেশে পৌঁছাবে বলে নিশ্চিত করেছে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি কর্তৃপক্ষ। সরকার রাশিয়া হতে টিকা আমদানির জন্যও ইতোমধ্যে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। মহামারী মোকাবেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশ ও ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে নিবিড় যোগাযোগ চলছে।

শোক প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন মরহুম সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ সহজ ছিল না। তিনি এ বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। আদম্য শক্তি ও সাহস নিয়ে তিনি কাজ করেছেন।

বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। চলতি সংসদের সদস্য আবদুল মতিন খসরু ও আসলামুল হকের মৃত্যুতে এই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এই আলোচনায় অংশ নেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সরকারি দলের সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ, মুজিবুল হক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, এ কে এম রহমত উল্লাহ ও সাদেক খান, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কাজী ফিরোজ রশীদ, বিএনপির মো: হারুনুর রশীদ প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু। আমি মন্ত্রী থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বানিয়েছি। তিনি করোনা আক্রান্ত হলেন। আমি সব সময় তার খবর রাখতাম। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।

তিনি আরো বলেন, আসলামুল হক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। দলের জন্য অনেক ভূমিকা রেখেছেন। গত অধিবেশনেও তিনি সংসদে ছিলেন। কিন্তু এখন নেই- এটাই সত্য। আমি তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। একই সাথে তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

ফিলিস্তিনদের ওপর হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যে হত্যা-নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা খুবই বর্বর। শিশু ও নারীরাও রক্ষা পায়নি। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অনেকেই বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু এ বিষয়ে নীরব থাকেন। আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের সাথে আছি। তাদের ওপর সব নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, করোনা আমাদের অনেককেই কেড়ে নিয়েছে। এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এই ঢেউ মোকাবিলা করতে হবে। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement