২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানুষের জীবন বাঁচানো ও ঝুঁকি মোকাবিলার বাজেট চায় বিএনপি

মানুষের জীবন বাঁচানো ও ঝুঁকি মোকাবিলার বাজেট চায় বিএনপি - ছবি- সংগৃহীত

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাততে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো ও ঝুঁকি মোকাবিলার বাজেট চায় বিএনপি। ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার পাঁচ দিন আগে শুক্রবার বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে ২৪ দফা বাজেট ভাবনা তুলে ধরেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এবারের বাজেট হওয়া উচিত জীবন বাঁচানোর বাজেট, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি মোকামিলার বাজেট। এবারের বাজেট হবে করোনাভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ ও অভিঘাত থেকে উত্তরণের বাজেট।’ তিনি বলেন, বর্তমানে বিরাজমান জটিল, সঙ্কটজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো জীবন ও জীবিকার সমন্বয়ে সাধন করে কার্য্করী পদক্ষেপ গ্রহণ। বিএনপি এবারের বাজেটকে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট অর্থবছরের হিসাবের চেয়ে আগামী দিনের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট পথ-নির্দেশের যাত্রাবিন্দু হিসেবে দেখতে চায়। এ লক্ষ্যে বিএনপি আগামী বাজেটকে ভবিষ্যতের অর্থনীতির কৌশল হিসেবে ‘সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ অর্থনীতি’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার হিসেবে দেখতে চায়।

এ সময় তিনি ২৪ দফা প্রস্তাবনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাতে জিডিপির ৫ ভাগ বরাদ্দের দাবি জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্যখাতকে বাজেটের সর্বাধিক তালিকায় রাখতে হবে। চলমান বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধ ও করোনা চিকিৎসা দু’টিই সমানতালে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ারোধ, বৃত্তি প্রদান, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, কোভিডকালে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষায়াতনে আর্থিক সহায়তা প্রদান, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উচ্চশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। একইসাথে কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতের বহুমুখীকরণ, উৎপাদন, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষিখাতে জিডিপির ৫ ভাগ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ২৮ পৃষ্ঠার বাজেট ভাবনায় কর্মহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য জিডিপির ৬-৭ ভাগ, ‘দিন আনে দিন খান’ শ্রেণীর মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাসের প্রণোদনা প্রদান, নিরপেক্ষভাবে দুঃস্থ উপকারভোগীর তালিকা করে ‘দারিদ্র্য জনগোষ্ঠিকে সুরক্ষা সহায়তা প্যাকেজের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির বাজেট প্রস্তাবনায় রয়েছে কৃষি কমিশন গঠন, রফতানি বহুমুখীকরণে বিকল্প বাজারের অনুসন্ধান, টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় মহামারীর মতো সঙ্কট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ, জাতীয় স্বাস্থ্য কার্ড চালু, প্রত্যেক জেলায় ডেডিকেটেড সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, করোনাকালে জেলা হাসপাতালগুলোতে করোনা বেড, আইডিইউর সংখ্যা বৃদ্ধি, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে বিদেশী অনুদান বাড়ানো।

ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বাজেট প্রস্তাবনায় শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি ‘অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। মেগা প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতির সব কাহিনী আপনারা সবাই জানেন। দেখা গেছে যে সরকার সাধারণ মানুষের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চেয়ে মেগা প্রকল্প গ্রহণেই বেশি আগ্রহী। পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর ও মাথারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে কিভাবে অর্থ বরাদ্দের নামে ‘মহাদুর্নীতি করার অভিযোগও করেন বিএনপি মহাসচিব।

কালো টাকা সাদা করার সরকারি নীতির কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আসছে বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যত দিন অপ্রদর্শিত আয় থাকবে, তত দিন এই সুযোগ থাকবে। হরিলুট করে সঞ্চিত কালো টাকা জায়েজ করার দরজা অবারিত করে দিলেন অর্থমন্ত্রী, যা অনৈতিক ও ন্যায়নীতি মেনে আইন পালনকারী নাগরিকদের প্রতি অবিচার বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, কোভিডকালীন এতো কালো টাকা কারা আয় করেছে, জাতি জানতে চায়। যদিও এরই মধ্যে সরকার দলীয় ও তাদের মদদপুষ্ট অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে পড়েছে। অপ্রর্দশিত আয়ের একটি বিরাট অংশ মানিলন্ডারিং হয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে। বছরে লাখ কোটি টাকার অধিক পাচার হয়। প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ। যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা দিয়ে চারটি পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্ভব হতো।

ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনা ও হরিলুটে ‘ঋণ খেলাপীর চিত্রও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ঋণ খেলাপীদের কবল থেকে দেশকে ও অর্থনীতকে মুক্ত করতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলা হলেও তাদের আবার বিপুল ঋণ রাইট অব করে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ঋণ খেলাপী ও ব্যাংক মালিকদের অনৈতিক সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রিয়াজ উদ্দিন নসু, আবদুস সালাম আজাদ, এ বি এম আবদুস সাত্তার, শায়রুল করিব খান প্রমুখ।

এ ছাড়াও ইন্টারনেটে যুক্ত ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, হারুন আল রশিদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সুকোমল বড়ুয়া, শাহজাদা মিয়া, তাহসিনা রুশদীর লুনা, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, ফজলুল হক মিলন, মোস্তাক আহমেদ, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ড প্রমুখ।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement