২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মেগান-হ্যারির সাক্ষাৎকার, আমি তখন আর বেঁচে থাকতে চাইনি

মেগান-হ্যারির সাক্ষাৎকার, আমি তখন আর বেঁচে থাকতে চাইনি - ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের টিভি ব্যক্তিত্ব অপরা উইনফ্রির সাথে একান্ত এক সাক্ষাৎকারে মেগান বলেছেন, ব্রিটিশ রাজ পরিবারে তার জীবন এতো বেশি কঠিন হয়ে পড়েছিল যে, এক সময় আর বেঁচে থাকতে চাননি। তিনি যখন সাহায্য চেয়েছেন তখন কোনো সাহায্য পাননি।

তিনি বলেন, সবচেয়ে খারাপ সময়টি ছিল যখন রাজপরিবারের এক সদস্য হ্যারিকে তাদের ছেলের গায়ের রং নিয়ে জিজ্ঞাসা করে বলেছিল যে, সে কতটা কালো হতে পারে?

প্রিন্স হ্যারিও বলেছেন, তিনি যখন সরে আসতে চেয়েছিলেন তখন তার বাবা প্রিন্স চার্লসও তার ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

সিবিএস এর দুই ঘণ্টার এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যে সোমবার আইটিভিতে সম্প্রচারিত হবার কথা রয়েছে। সেখানে এই দম্পতি বিভিন্ন বিষয় যেমন বর্ণবাদ, মানসিক স্বাস্থ্য, গণমাধ্যমের সাথে তাদের সম্পর্ক এবং রাজপরিবারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

তারা জানান, আসছে গ্রীষ্মে তারা আবার মা-বাবা হতে যাচ্ছেন এবং এই সন্তানটি একটি মেয়ে।

২০২০ সালের মার্চে রাজ পরিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের পর এই দম্পতি ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত মাসেই তারা ঘোষণা দেন যে, রাজপরিবারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য হিসেবে তারা আর ফিরবেন না।

আমাকে সুরক্ষা দেয়া হয়নি
মেগান বলেন, একটা সময় তিনি একাকী বোধ করতেন। যখন তাকে বলা হয়েছিল যে, তিনি কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না। এমন এক সময় ছিল যখন তিনি মাসের পর মাস বাড়ি থেকে বের হননি।

তিনি বলেন, এক সময় ভাবতে শুরু করি যে, এর চেয়ে বেশি একা হওয়া সম্ভব নয়।

মার্কিন টিভি ব্যক্তিত্ব অপরা উইনফ্রি তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি নিজের ক্ষতি করার বা আত্মহত্যার চিন্তা করেছিলেন কিনা? উত্তরে মেগান স্বীকার করে বলেন, এটা খুব বেশি স্পষ্ট এবং ভয়ংকর ছিল। সেসময় বুঝতে পারছিলাম না যে, কার কাছে যাবো।

মেগান বলেন, গর্ভবতী থাকা অবস্থায় হ্যারির সাথে রয়াল অ্যালবার্ট হলে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সময়কার এক ছবির কারণে আতঙ্কবোধ করছিলাম। ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে সকালে হ্যারির সাথে এ নিয়ে আলাপ হয়েছিল আমার।

উইনফ্রি জিজ্ঞেস করেন, আপনি আর বেঁচে থাকতে চান না? উত্তরে মেগান নিশ্চিত করেন যে, সে বেঁচে থাকতে চান।

তিনি বলেন, ওই রাতে তিনি ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন কারণ তিনি অনুভব করছিলেন যে, তিনি আর একাকী বোধ করতে চান না। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, অ্যালবার্ট হলে অনুষ্ঠানের সময় হ্যারি তার হাত শক্ত করে ধরে ছিলেন।

অপরা মেগানের কাছে জানতে চান, রাজ পরিবার কেন তার ছেলে আর্চিকে প্রিন্স ঘোষণা করেনি।

১৯১৭ সালের একটি আইনের কারণে ডিউক এবং ডাচেস অব সাসেক্সের সন্তানরা স্বাভাবিকভাবেই প্রিন্স কিংবা প্রিন্সেস হবেন না, যদি না রানি কোনো পদক্ষেপ নেন।

মেগান বলেন, ‘আমার গর্ভবতী থাকার মাসগুলোতে আলোচনা চলছিল যে তাকে সুরক্ষা দেয়া হবে না, তাকে হয়তো কোনো পদবি দেয়া হবে না, জন্মের পর তার ত্বক কতটা কালো হবে তা নিয়েও উদ্বেগ এবং আলোচনা চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘এসব কথা হ্যারিকে বলা হয়েছিল এবং তার কাছ থেকেই তিনি এসব বিষয় জেনেছেন।’

অপরা জিজ্ঞেস করেন, সন্তান যদি বেশি বাদামি বর্ণের হয় এবং তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে কিনা? এ নিয়ে কোনো উদ্বেগ তাদের ছিল কিনা? উত্তরে মেগান বলেন, ‘এটা যদি আপনার অনুমান হয়ে থাকে, তাহলে সেটি বেশ নিরাপদ অনুমানই মনে হচ্ছে।’

এ ধরণের মন্তব্য কে করেছিলেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা জানাননি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় এটা তাদের জন্য খুব ক্ষতিকর হবে।’

হ্যারিও সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে অসম্মতি জানিয়ে বলেন, ‘ওই আলোচনা আমি কখনোই কাউকে বলবো না। সে সময়ে এটা বেমানান ছিল এবং আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। গণমাধ্যমের কাছ থেকে মেগান যে ধরণের বর্ণবাদের শিকার হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে কোনো স্বজনই মেগানের পক্ষে কথা বলতে এগিয়ে আসেননি। ওই তিন বছরে আমার পরিবারের কেউই কোনো কথা বলেনি। এটা কষ্টকর ছিল।

সাক্ষাৎকারের সময় রাজপরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে, তারা ডিউক এবং ডাচেসকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

মেগান ওই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘২০১৮ সালের মে মাসে বিয়ের পর সেটি আরো খারাপ হতে থাকে। আমি বুঝতে পারি যে শুধু আমাকেই সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে না তা নয় বরং পরিবারের অন্য সদস্যদের সুরক্ষা দিতে তারা মিথ্যা বলতেও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আমি আর আমার স্বামীকে সুরক্ষা দিতে তারা সত্যিটা বলতেও ইচ্ছুক ছিল না।’

তিনি একটি গুজবের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ফ্লাওয়ার গার্লসদের পোশাক কেমন হবে সে বিষয়টি নিয়ে মতামত দেয়ার সময় ডাচেস অব কেমব্রিজকে কাঁদিয়েছিলেন তিনি। এই গল্পটি ট্যাবলয়েড পত্রিকায় মুখরোচক গল্প হয়ে উঠেছি।’

মেগান বলেন, আসলে ঘটনাটি পুরো উল্টো ছিল। ওই ঘটনার জন্য পরে ক্যাথরিন ক্ষমা চেয়েছিলেন। সাথে কিছু ফুল আর ছোট চিরকুট পাঠিয়েছিলেন সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে অপরা আর স্ত্রীর সাথে যোগ দেয়ার পর হ্যারি পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে তার সম্পর্কের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘তার দাদী, রানির সাথে তার সম্পর্ক খুবই ভাল। তারা দুজন প্রায়ই কথা বলেন। তবে তার বাবা প্রিন্স অব ওয়েলসের সাথে তার সম্পর্ক তেমন ভালো নেই।’

হ্যারি বলেন, ‘তিনি তার বাবার বিষয়ে আসলেই হতাশ বোধ করেন। তিনি তার বাবাকে সবসময়ই ভালবাসবেন কিন্তু তিনি অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছেন।’

প্রিন্স উইলিয়াম সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আসলেই ভিন্ন। তার পরিবার তাকে আর্থিকভাবেও সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে।

হ্যারি তার ভাই আর বাবাকে রাজপরিবারের ব্যবস্থার ফাঁদে আটকে পড়া বলে উল্লেখ করেছেন। তারা সেখান থেকে বেরুতে পারবে না বলে জানান তিনি। প্রিন্স উইলিয়ামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা দুজন ভিন্ন পথে রয়েছেন।

বিবিসির রাজপরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা জনি ডায়মন্ড বলছেন, ‘এটা এখনো স্পষ্ট নয় যে, এর প্রতিক্রিয়ায় প্যালেস কী বলবে। কিছু কিছু অভিযোগ এতো বেশি ব্যক্তিগত যে, ধারণা করা হচ্ছে সেগুলো নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে না। তবে এই দম্পতি যে এখনো স্নেহধন্য সেটি রানি বারবারই স্পষ্ট করেছেন।

সাক্ষাৎকারটি এমন সময়ে প্রচার হলো যখন হ্যারি’র দাদা, ডিউক অফ এডিনবরা, হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার শেষে এখন হাসপাতালে সেরে উঠছেন। যদিও সাক্ষাৎকারটি আগেই ধারণ করা হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement