২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতে কি করোনার সেকেন্ড ওয়েব আঘাত হেনেছে

ভারতে কি করোনার সেকেন্ড ওয়েব আঘাত হেনেছে - ছবি : সংগৃহীত

ভারতে করোনাভাইরাস মহামারীর ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা দ্বিতীয় ধাক্কা আঘাত হানতে চলেছে, এই আশঙ্কার মধ্যে সরকার টিকাকরণের গতি বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। মহারাষ্ট্র, কেরালা-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা আচমকাই হু হু করে বাড়ছে - এবং এখন নতুন করে লকডাউন জারি করা কিংবা ট্রেন-প্লেনের সফরে কড়া বিধিনিষেধ আরোপের কথাও ভাবতে হচ্ছে।

ভারতে নতুন করে কোভিড পজিটিভ কেস বাড়ার ঘটনাকে বিশেষজ্ঞরা সবাই অবশ্য এখনই ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বলতে রাজি নন। তবে মানুষের ঢিলেঢালা মনোভাব এবং ভাইরাসের মিউটেটেড কিছু প্রজাতিই হয়তো এর জন্য দায়ী বলে তারা অনেকে মনে করছেন।

বস্তুত শীতের মাঝামাঝি, জানুয়ারি মাসের দিকে গোটা ভারতে যেভাবে কোভিড কেসের সংখ্যা হু হু করে কমছিল, সেই প্রবণতা প্রায় হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় দিনদশেক হল।

এখন আবার রোজ প্রায় হাজার পনেরো নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন - এবং এই সব রোগীর প্রায় পঁচাশি শতাংশই মহারাষ্ট্রসহ ভারতের মাত্র পাঁচটি রাজ্যে। নামী ভাইরোলজিস্ট শাহিদ জামিল অবশ্য মনে করছেন, ‘এটা আসলেই সেকেন্ড ওয়েভ না কি তত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় সেটা বলার সময় হয়তো এখনো আসেনি।’ তবে গোটা ভারতের পরিসংখ্যানের দিকে একসাথে না-তাকিয়ে তিনি রাজ্য বা অঞ্চলভিত্তিক সংখ্যাগুলোর দিকে তাকানোরই পরামর্শ দিচ্ছেন।

নতুন কেস সবচেয়ে বেশি যে রাজ্যে, সেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এর মধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাজ্যে আবার সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করা হবে কি না এ সপ্তাহের মধ্যেই সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মুম্বাইয়ের রাস্তায় সাধারণ মানুষও স্বীকার করছেন, লকডাউন হলে দুর্ভোগ হবে ঠিকই - কিন্তু এর জন্য সরকারকে দায়ী করে লাভ নেই। ‘মানুষই ভিড়ের জায়গায় মাস্ক পড়ছে না, সামাজিক দূরত্ব মানছে না - কিংবা মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনেও আবার সেই দমবন্ধ করা ভিড় হচ্ছে আগের মতোই’, তারা সবাই প্রায় বলছেন এক সুরেই।

এই পটভূমিতেই সরকার দেশে চলমান টিকাকরণের গতি বাড়িয়ে আগামী কয়েক সপ্তাহের ভেতর দৈনিক অন্তত ৫০ লক্ষ ডোজ ভ্যাক্সিন দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। তবে জাতীয় কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য সুনীলা গর্গ মনে করছেন, কয়েক মাস আগের স্ট্র্যাটেজিতে ফিরে যাওয়াই এখন একমাত্র পথ। ড: গর্গ বলছেন, ‘সাধারণ মানুষের ব্যবহার সবার আগে পাল্টাতে হবে। আক্রান্ত এলাকাগুলোয় যে ক্লাস্টার কনটেইনমেন্ট স্ট্র্যাটেজি নেয়া হয়েছিল, সেখানে আবার ফিরে যেতে হবে।’

‘এটা তো ঠিকই যে গোটা দেশে টেস্টিংয়ের সংখ্যা, কনট্যাক্ট ট্রেসিং খুব কমে গিয়েছিল, সেটা আবার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যত বেশি সম্ভব টিকাকরণ চালিয়ে যেতে হবে।’

কিন্তু এই যে হঠাৎ করে আবার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তার পেছনে কারণটা কী হতে পারে? অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের সাবেক অধিকর্তা ড: শম্পা মিত্র বলছিলেন, ‘একটা কারণ হতে পারে আত্মতুষ্টি। অনেকদিন ধরে নানা সাবধানতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর মানুষের মধ্যে হয়তো একটা শিথিলতা চলে এসেছে।’ ‘অন্য কারণটা হতে পারে মিউট্যান্ট ভেরিয়্যান্ট। হয়তো কোভিড-১৯ নিজেকে মিউটেট করে নতুন চেহারায় আঘাত হানছে।’

‘কিন্তু সেটা নির্দিষ্টভাবে বলার আগে নতুন রোগীদের প্রোফাইল, বয়স, কোমর্বিডিটি আছে কি না, তারা পরিযায়ী শ্রমিক কি না, বিদেশ থেকে এসেছেন কি না এসব দেখতে হবে, ভাইরাসের চরিত্র বুঝতে হবে।’

এগুলো নির্দিষ্টভাবে জানার আগে তিনিও বর্তমান প্রবণতাকে সেকেন্ড ওয়েভ বলতে রাজি নন। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্ষীয়ান চিকিৎসক কে কে আগরওয়াল আবার বিষয়টাকে একটু অন্যভাবে দেখছেন। তিনি বলছেন, ‘মানুষ আর যে কোনও নতুন ভাইরাসের মধ্যে একটা বুদ্ধির লড়াই চলে। মানুষ শরীর থেকে ভাইরাসকে তাড়াতে চায়, আর ভাইরাস চায় জেঁকে বসতে।’

‘এখানেও কোভিড বলছে মানুষের শরীরে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি বা সি থাকতে পারলে আমি কেন পারব না?’ সেই লড়াইয়ের ওঠাপড়ায় ভারতে আপাতত কোভিডের জেতার রাউন্ড চলছে বলেই ড: আগরওয়ালের অভিমত। আর মুখে ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ কথাটা উচ্চারণ না-করলেও সরকারের যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে সেই দ্বিতীয় ধাক্কা ঠেকানোর চেষ্টাতেই।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement