করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৩০, আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:১৬
ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালের সেবিকা রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো দেশের করোনাভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে যোগদান করে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বিকেল চারটার কিছু পর কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স মিজ কস্তাকে টিকা প্রদানের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় রুনু কস্তার সাথে কুশল বিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা রুনুকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ভয় পাচ্ছ না তো’।
জবাবে রুনু বলেন, ‘জ্বি না’।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আরো চারজনকে টিকা প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানাসহ আরো একজন ডাক্তার, একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন।
সংশয়বাদীদের যে জবাব দিলেন শেখ হাসিনা
বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে নানা জন নানারকম সংশয়ের কথা জানিয়েছে ভারত থেকে আসা এই করোনাভাইরাস টিকাকে ঘিরে।
এমনকি বিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকেও দাবি জানানো হয়েছিল, সংশয় দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ প্রথম টিকা নেয়া।
এসব সংশয়ের প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ একটি জরিপ চালায় যেখানে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৩২% মোটে মানুষ টিকা কার্যক্রম শুরুর সাথে টিকা নিতে আগ্রহী। ৫২% আগ্রহী, কিন্তু এখনই নয়, তারা দেখে-শুনে পরে নিতে চান।
কিন্তু বুধবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কোভিশিল্ড নামের যে টিকাটি বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে, ‘এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে নিরাপদ ভ্যাকসিন অন্য সব ভ্যাকসিনের তুলনায়’।
আর শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য হলো কিছু কিছু লোক থাকে যারা সবকিছুতেই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।’
‘হয়তো মানুষ তাদের কাছে কোন সাহায্য পায় না, কিন্তু কোনো কাজ করতে গেলে সেখানে বিরূপ সমালোচনা, মানুষের মধ্যে সন্দেহ ঢোকানো, মানুষকে ভয়ভীতি দেয়া, এ ধরনের কিছু কাজের কারো কারো অভ্যাস আছে।’
‘আমি চাই, তারাও সাহস করে আসবেন। আমরা তাদেরকেও ভ্যাকসিন দেব, যাতে তারাও সুরক্ষিত থাকেন। তাদের কিছু হলে আমাদের সমালোচনা করবে কে?’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা।
আগামী কয়েকদিন যা ঘটবে :
আজ কর্মসূচির উদ্বোধনী দিনে কুর্মিটোলা হাসপাতালে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার আরো মোট ২৭ জন মানুষকে টিকা প্রদান করা হবে বলে কথা রয়েছে।
এদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক এবং আরো কয়েকটি পেশার মানুষ রয়েছেন। তবে কাল থেকে প্রথম পর্যায়ের বাদবাকি যাদের টিকা দেয়া হবে তাদের সবাইই করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের সাথে সম্পর্কযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী।
যে টিকাটি তাদের দেয়া হচ্ছে, সেটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড নামের টিকা।
এরই মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড মজুত করা হয়েছে বাংলাদেশে।
এর মধ্যে কুড়ি লাখ ডোজ এসেছে গত ২১ জানুয়ারি ভারতের শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে।
আর বাকি ৫০ লাখ ডোজ এসেছে সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে ক্রয়চুক্তির অংশ হিসেবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে কয়েকদিন ধরে ঢাকার চারটি হাসপাতালে শ’ পাঁচেক মানুষকে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা প্রদান করা হবে, এদের সবাই স্বাস্থ্যকর্মী।
বাকি তিনটি হাসপাতাল হচ্ছে - উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
এই মানুষগুলোকে এরপর থেকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
আর পুরোপুরি টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। শুরুতেই পাবেন সম্মুখ সারিতে থাকা বিভিন্ন পেশার মানুষেরা।
পাশাপাশি ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের ব্যক্তিরাও টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন।
সুরক্ষা অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে নিবন্ধন :
তবে এজন্য সুরক্ষা নামের একটি (https://www.surokkha.gov.bd/) একটি ওয়েবসাইটে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
পরবর্তীতে মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা নেয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে।
এই নিবন্ধন কর্মসূচির উদ্বোধনও হচ্ছে বুধবারই।
সূত্র : বিবিসি