আলেমদের বিবৃতি : যেকোনো উদ্দেশ্যে ভাস্কর্য তৈরি ইসলামে নিষিদ্ধ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:৩৭
দেশে ভাস্কর্য নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে দেশটির বেশ কিছু ইসলামী চিন্তাবিদ ভাস্কর্য নিয়ে তাদের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
যাত্রাবাড়ি মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসানের আয়োজনে শনিবার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশবরেণ্য শীর্ষ আলেমগণ অংশ নিয়েছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
যাত্রাবাড়ি মাদরাসায় বৈঠকের পর আলেমদের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মানবমূর্তি ও ভাস্কর্য যেকোনো উদ্দেশ্যে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।’
তারা বলেছেন, ‘এমনকি কোনো মহৎ ব্যক্তি ও নেতাকে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়তসম্মত নয়।’
বিবৃতিতে দেয়া তাদের প্রস্তাবে আলেমরা বলেছেন, কোনো ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত।
ঢাকার দোলাইরপাড় চত্বরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ইসলামপন্থী বেশ কয়েকটি দল সেই পরিকল্পনার বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছে।
শুক্রবার কয়েকটি ইসলামপন্থী সংগঠনের ডাকা ভাস্কর্যবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বের হবার পর পুলিশ সেটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গত মাসে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী এক সম্মেলনে ভাস্কর্যবিরোধী কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
হেফাজতের শীর্ষ ওই নেতার মন্তব্যের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ভাস্কর্য তৈরির পক্ষে তাদের শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেন এবং এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়ার ইঙ্গিতও দেন।
আন্দোলনকারী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক শুক্রবার বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা ভাস্কর্য তৈরির বিপক্ষে কথা বলেই যাবেন।
‘শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলন করবো। যেটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের ঈমানী দাবিটা জানিয়েই যাব, কথা বলেই যাব। সেটা সরকার রাখবে কি রাখবে না সেটা সরকারের বিষয়,’ বলেন তিনি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ভাস্কর্য তৈরির পক্ষে কঠোর বক্তব্য দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে একটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অনভিপ্রেত ও উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দিচ্ছে’। এবং তিনি আরো বলেন, তারা ‘ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রিয় মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা করছেন’।
আলেমরা শনিবার তাদের বৈঠকে আরো যেসব বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে তারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নবীজীর প্রতি অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারি ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এছাড়াও তাদের আন্দোলনে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের নিঃশর্ত মুক্তিদান, তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধ ও দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিল নিয়ে ‘শব্দ-দূষণের অজুহাতে লাউড স্পিকার ব্যবহারের ব্যাপারে নির্দেশনা জারি’কে তারা ‘অনভিপ্রেত’ বলে উল্লেখ করেছেন।
সূত্র : বিবিসি