২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ভাস্কর্য নিয়ে উত্তেজনা : কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ

- নয়া দিগন্ত

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে হেফাজতে ইসলামসহ সমমনা ইসলামী দলগুলোর আপত্তির মুখে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। যদিও ইসলামী দলগুলোর এ ধরনের তৎপরতা ভালোভাবে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। তাদের এই তৎপরতা বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আপাতত হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী সংগঠনগুলোর কর্মকা পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। সঙ্ঘাত এড়িয়ে নমনীয় আচরণের মাধ্যমে ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি সমাধান হলে কঠোরতা থেকে সরে আসবে সরকার। অন্যথায় কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তাভাবনাও রয়েছে সরকারের। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইসলামী দলগুলো বলছে, ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কোনো ভাস্কর্য নির্মাণ হতে পারে না। এটি কুরআন ও সুন্নাহ-বিরোধী। শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, সব প্রাণীর ভাস্কর্য বা মূর্তি তৈরির বিপক্ষে মত তাদের। আর আওয়ামী লীগ বলছে, ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ভাস্কর্য হচ্ছে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও উজ্জ্বল স্মৃতির প্রতীক। ভাস্কর্য নির্মাণে শোভা বর্ধন পায়। বঙ্গবন্ধু মহান স্বাধীনতার স্থপতি। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে। সৌদি আরব, পাকিস্তানসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। সেখানে কেউ বিরোধিতা করে না।

সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করতে গেলে সেখানকার আলেম-ওলামাদের বাধার মুখে পড়ে। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের তীব্র বিরোধিতা ভালোভাবে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি স্থানীয় ইস্যু হলেও এখন জাতীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে মামুনুল হক চট্টগ্রামে মাহফিল করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সরকারি দলের সহযোগী সংগঠনের বাধার সম্মুখীন হন। নড়াইলের মাহফিলে তিনি যেতে পারেননি। ঢাকা-৫ ও ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় রয়েছেন। ওই এলাকার নেতাকর্মীরা প্রায়ই মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। গতকালও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে আওয়ামী ওলামা লীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বিবৃতি দিয়ে ইতোমধ্যে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়ে রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা-৫ আসনের এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু গতকাল শনিবার নয়া দিগন্তকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। কিছু দিন আগে সেই মহান নেতার স্মৃতির সম্মানার্থে আমরা একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করার উদ্যাগ নিয়েছিলাম। ওই স্থানটি আমার আসনের দক্ষিণের শেষ সীমানায় পড়েছে। তখন সেখানকার কয়েকজন আলেম-ওলামা বাধা দিলে আমরা সরে আসি। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে। কোনো ধরনের সঙ্ঘাতে আমরা যেন না যাই। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।

মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারী আলেম-ওলামাদের সাথে আমরা কয়েকবার বসেছি। তাদের চেষ্টা করছি কথা শোনাবার; কিন্তু তারা এখনো বিরোধিতা করছে। এখনো কোনো সমাধান হয়নি ।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ভাস্কর্য হচ্ছে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও উজ্জ্বল স্মৃতির প্রতীক। কিন্তু ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে সারা দেশে কিছু আলেম-ওলামা মাঠ উত্তপ্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে। কোনো শক্তি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশে অনেক ভাস্কর্য আছে। সেখানে ভাস্কর্য নিয়ে কেউ কথা বলে না। এমনকি মক্কা নগরীর মানুষই ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলে না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠিত হবেই। কোনো শক্তির ক্ষমতা নেই এটা ঠেকানোর।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের স্থপতির ভাস্কর্য টেনে হেঁচড়ে নামাবে বলে কোনো কোনো ধর্মীয় নেতা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন, তাদের এমন রুচি এবং ভাষা ব্যবহার দেখে তাদের ধর্মচর্চা ও ইসলামী রুচিবোধ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকারের সরলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না, জনগণের শান্তি বিনষ্টের যেকোনো অপচেষ্টা জনগণই রুখে দাঁড়াবে। দেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংবিধান এবং রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বক্তব্য বরদাশত করা হবে না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। সেখানে কেউ বিরোধিতা করে না। কিন্তু এখানে কিছু আলেম-ওলামা বিরোধিতা করছে। তার কারণ হলো তারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মহান স্বাধীনতার স্থপতি। এটা নিয়ে কোনো আপস চলে না। তিনি সবার ঊর্ধ্বে। অতএব বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করতে না দেয়ার অর্থ হলো তাদের ভিন্ন মতলব রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে এস এম কামাল বলেন, আমরা কোনো সঙ্ঘাতে যেতে চাই না। এটা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement