ভিন্নমতের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে : রিজভী
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৪৫
শুধুমাত্র ভিন্নমতের কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ড. মোর্শেদকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কেন আপনারা জানেন। তিনি জিয়াউর রহমানের বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন সেজন্য। এটাই হচ্ছে অপরাধ। অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ফেসবুকে লিখতেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো। আর চাকরিচ্যুত করা হলো ড. মোর্শেদকে। ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। তার আগেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারবিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এত দিন গুম, অদৃশ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যা করেও তারা শান্তি পাচ্ছে না। এখন না খেয়ে মারার পাঁয়তারা চলছে। কিন্তু কেন? তারা কি কোনো অন্যায় করেছেন? দুর্নীতি করেছেন? তাদেরকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন রয়েছে সেই আইনের কী তারা লঙ্ঘন করেছেন? নৈতিক স্খলন হলে চাকরিচ্যুত করা যায়। তারা সেটাও করেননি।
শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফিউচার অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কী? ছাত্রদের পড়ানো। শিক্ষকতা করা। ড. মোর্শেদ তাই করতেন। তিনি এসএসসি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত সবগুলোই ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া। ম্যাটট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েটে স্ট্যান্ড করেছেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। ওয়াহিদুজ্জামানও সবগুলোতে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত শিক্ষক। ড. মোর্শেদের অতুলনীয় মেধা। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের বৃহত্তম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি শিক্ষক। তাকে ভিন্নমতের কারণেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
রিজভী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, এখন সরকার চাচ্ছে যে তোমরা নিজেরা নিজেরাই মরে যাও। তোমাদের চাকরিও থাকবে না। যে ছেলেটি চারটি ফার্স্টক্লাস পাওয়া, বোর্ড স্ট্যান্ড করা। সে কী করবে এখন?
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তার একটি আলাদা স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতই মোসাহেব হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ভিসি সাহেব এতই পা-চাটা হয়েছে যে, তিনি ড. মোর্শেদকে চাকরিচ্যুত করার ব্যাপারে আইন- কানুনের তোয়াক্কা করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আইনে ড. মোর্শেদ ও ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করা যায় না।
রিজভী বলেন, এখানে আইনের দরকার পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিধি-নিষেধের দরকার পড়েনি। কোনো ন্যায়-ন্যায্যতার দরকার হয়নি। দরকার পড়েছে একজন ব্যক্তির নির্দেশ। সেই হুকুম তামিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। এখন ভিসি কোনো আইনের তোয়াক্কা না করেই চাকরিচ্যুত করছে যারা ভিন্ন মতাবলম্বী, বিএনপি করে বা অন্য কোনো মতে বিশ্বাসী।
রিজভী বলেন, আমার যদি চাকরি না থাকে, খাবো কী করে? সন্তানদের পড়ালেখা করাবো কী করে? সরকারকে বলবো, এই অমানবিকতার অবসান ঘটান। ভাবছেন আপনার অনেক ক্ষমতা ধরে নিয়ে গুম করবেন, জেলে ভরে দেবেন। কিন্তু কখন যে আপনার সিংহাসন চোরাবালির মধ্যে ডুবে যাবে আপনি সেটা টেরই পাবেন না। অবিলম্বে ড. মোর্শেদ ও ওয়াহিদুজ্জামাকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। এখন শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আঘাত হেনেছে। শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু স্বাধীন মতপ্রকাশের কারণে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যেটা চরম অন্যায় ও অমানবিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিন্নমতের শিক্ষকদের দমন করা হচ্ছে। আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাই।
ফিউচার অব বাংলাদেশ সভাপতি শওকত আজিজের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম প্রমুখ।