২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জেকেজি‘র চিকিৎসক ও রিজেন্টের সাহেদরা কোথায় : রিজভী

রুহুল কবির রিজভী
রুহুল কবির রিজভী - ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে জেকেজির চিকিৎসক ও রিজেন্টের সাহেদরা দেশকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলে ও মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললেও এখনো তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সরকারের দুর্নীতি, অনিময় নিয়ে সমালোচনা করলেই, কথা বললেই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখলেই মুহূর্তের মধ্যেই তাকে খুঁজে বের করা হয়, মামলা, গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু জেকেজি ও রিজেন্ট ভয়াবহ ঘটনা ঘটালেও এখনো তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তাদের খুঁজে পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। করোনার পরীক্ষা ও চিকিৎসার অনিয়মের সাথে জড়িত জেকেজির চিকিৎসক ও রিজেন্টের সাহেদরা? রোববার দুপুরে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকার মানুষকে ভয় পাইয়ে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার শুরু থেকেই জনগণকে বশে রাখার জন্য বল প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেছে। করোনা অভিঘাতেও সেটি অব্যাহত আছে। অনতিক্রম্য দেওয়াল রচনা করছে নানা কালা-কানুনের মধ্যে। মানুষকে ভয় পাইয়ে দিয়ে তারা করোনার মধ্যেও দুর্নীতির ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সেটা নিয়ে যেনো কেউ বলতে না পারে সেজন্য মত প্রকাশকে রুদ্ধ করেছে। আজকে গণমাধ্যমে যদি সত্য কথা বলা হয়, তাহলে সে গণমাধ্যমের ওপর বিভিন্ন সংস্থা থেকে চাপ দেয়া হয়। হুমকি ধামকি দেয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে চায় তাদেরকে হতে হয় গুমের শিকার, তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে মিথ্যা মামলা, হতে হয় গ্রেফতার। এসব করে মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে যে, আর কেউ করোনা চিকিৎসার অনিয়ম নিয়ে কথা বলো না। কত রিজেন্ট, জিকেজি যে এখনো আছে খবরদার এগুলো নিয়ে কথা বলতে পারবে না, সরকারের অনাচার নিয়ে কথা বলতে পারবে না। কথা বললেই পলি, টিটু হায়দারের মতো অবস্থা হবে।

দেশে দেশে জাতির জন্য লজ্জাজনক ঘটনা ঘটছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে আমাদের বিদেশ থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কারণ বিমানবন্দরে যার পজিটিভ তাকে বলা হচ্ছে নেগেটিভ আর যার নেগেটিভ তাকে বলা হচ্ছে পজিটিভ। নেগেটিভ হিসেবে যারা যাচ্ছে তারা বিদেশী বিমানবন্দরে গিয়ে ধরা পড়ে যাচ্ছে। এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। তারপরও এই সরকারের টনক নড়েনি। কথা বলতে যাবেন উল্টো তারাই ধমক লাগিয়ে দেবে, অভিযোগ করবে। বলবে আমরাই চোর ধরছি আবার আমাদেরকে চোর বলা হচ্ছে। ডানে, বামে, সামনে, পেছনে যতটুকু ধরা পড়ছে সবই তো উনাদের লোক। জেকেজি ও রিজেন্টের বাইরে যে আরো কত ঘটনা আছে? যেগুলো এখনো সামনে আসেনি সেখানে তাহলে কি অবস্থা বিরাজ করছে?

দেশে জবাবদিহিমূলক সরকার থাকলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হতো মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাতে দেশে টালমাটাল অবস্থা। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জবাবদিহিমূলক একটা সরকার প্রয়োজন। জবাবদিহিমূলক সরকার থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতে।

তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে ভয়াবহ প্রকোপ হয়েছে, দিনে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। কিন্তু এটাকে মোকাবেলা করার জন্য তাদের সরকারের যে প্রচেষ্টা দেখেছি, মানুষকে সেবাদানের জন্য যে কাজগুলো দেখেছি অসাধারণ। আর আমাদের যে সরকারের দায়িত্ব ছিল তা তো দেখিনি উল্টো দেখেছি খড়ের পালা, খাটের নিচ থেকে, গর্তের ভিতর থেকে সরকারি ত্রাণ উদ্ধার হয়েছে তাদেরই জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে। সরকারের ত্রাণ আজকে যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে তাদের পকেটেই চলে গেছে।

রিজভী বলেন, অনাচার যদি এক জায়গায় অবাধ করে দেয়া হয়, নির্বিঘ্নে চলে তাহলে সমাজের প্রতিটা সেক্টরেই, রাষ্ট্রের প্রতিটা সেক্টরেই অবাধে চলে। যার কিছুটা হলেও আমরা স্বাস্থ্যখাতে দেখেছি। বাটপার ও স্বজনপ্রীতিতে ভরে গেছে এই খাত। জীবন হাতে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যাচ্ছে কিন্তু করোনার বেড পায়নি। এটা তো স্পেন, ইতালি, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় হয়নি। সেসব দেশে টেলিফোন করে জানছে যে কারো জ্বর হয়েছে কিনা। বার বার তাদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সরকার সে দৃষ্টান্ত দেখাতে পেরেছে। দেখাতে না পেরে আজকে বিএনপি, বিরোধীমতকে দমন করা হচ্ছে।

করোনাকালে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকার ও কোনো বিত্তশালীর সহযোগিতা ছাড়াই জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে যে কাজগুলো করছে এটাইকে বলা হয় দুর্যোগকালে মানবতার পক্ষের কাজ। আমি নিজেই তাদের আমন্ত্রণে যে কয়টি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি তার প্রত্যেকটিই দেখেছি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা। বিএনপি-সমর্থিত চিকিৎসকরা তারাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে যেভাবে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে স্প্রে করেছে সেটি সত্যিই মানবতার পক্ষে কাজের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, দেশ যখন একটা বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে তখন সচেতন মানুষ, সমাজের অগ্রগামী মানুষ (শিক্ষক-চিকিৎসক) তারা নিজেরাই যে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্য সময় তারা সাধারণ এই কাজটি করেন না। কিন্তু দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিকালে তারা এগিয়ে এসেছে। এজন্য দেশের মানুষ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ। অংশ নেন চিকিৎসক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলীরা।


আরো সংবাদ



premium cement