২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বহাল রেখে বাজেটে মৃত্যুকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে : আ স ম রব

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব - ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, মহামারী করোনার এই দুর্যোগময় প্রেক্ষাপটে জাতীয় বাজেট উত্থাপিত হলেও মানুষের জীবন সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়নি। করোনা জনস্বাস্থ্যের যে ঝুঁকি তৈরি করেছে সে বিবেচনায় ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কোনো পরিকল্পনা না করে প্রমাণিত অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমলাতন্ত্রের কাছেই থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এটা জনজীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার প্রণোদনারই নামান্তর।

শনিবার দুপুরে বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে তিনি এসব কথা জানান।

আ স ম রব বলেন, করোনার অভিঘাত বা ছোবল মানুষের জীবন ও অর্থনীতিতে কী ধরনের আঘাত হেনেছে বা অদূর ভবিষ্যতে কী ধরনের আঘাত হানবে তার কোনো কিছুই বাজেট পরিকল্পনায় পরিলক্ষিত হয়নি। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই, নেই কোনো অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, বিশাল বাজেটের বিশাল বরাদ্দ দেখে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাস বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে, করোনা যেন এখন অতীতের বিষয়। বাজেটে সম্পদ আহরণ এবং সম্পদ ব্যয়ের যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে তাতে মনে হয় করোনায় বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। বাজেটে জীবন ও জীবিকা সুরক্ষার চেয়ে সরকারের আত্মম্ভরিতার প্রতিফলন ঘটেছে বেশি। বলাবাহুল্য, এবারের এই বিশাল বাজেট ঘোষণার মাধ্যমে উন্নয়ন চমকের আড়ালে সরকার তার বৈধতার সঙ্কট কাটানোর নিছক প্রয়াস নিচ্ছে মাত্র।

তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে সৃষ্ট মানবিক ঝুঁকির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য যে ধরনের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন ছিল তার কিছুই বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি।

জে এস ডি সভাপতি বলেন, জীবন ও জীবিকার সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে পদক্ষেপ নিতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অসংখ্য মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার আজ পর্যন্ত কোনো জাতীয় সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন করতে পারেনি। আর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনই তো তাদের বিবেচনায় অবান্তর। এসব আত্মঘাতী পদক্ষেপের জন্য জাতিকে উচ্চ মূল্যের খেসারত দিতে হচ্ছে এবং হবে।

তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আজ লণ্ডভণ্ড। দুর্নীতি অদক্ষতা সমন্বয়হীনতায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পচন ধরেছে। গত চার মাসে মানুষের অসহায় মৃত্যু এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘোরার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও এই ভঙ্গুর দুর্নীতিগ্রস্ত অদক্ষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোনো রকম সংস্কার না করে শুধুমাত্র থোক বরাদ্দ দিয়ে সতের কোটি মানুষের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করার ঘোষণা তামাশারই নামান্তর। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫/৩৭ শতাংশ দরিদ্র সীমার নিচে চলে এসেছে, এদের কর্মসংস্থানের কোনো নির্দেশনা বাজেটে নেই।

তিনি আরো বলেন, বিপদজ্জনক বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার পরও আয় বৈষম্য কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। গুটিকয়েক মানুষ অতি ধনী আর বিশাল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করবে এটা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না।

রব বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারে দুর্নীতি অপচয় বন্ধ না হলে বেকারত্ব, দারিদ্র ও বৈষম্য বাড়বে। তাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে। রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় উপনিবেশিক কাঠামোর সংস্কার প্রশ্নেও কোনো গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, কোভিড ১৯ মহামারিতে সামাজিক সুরক্ষা, করোনায় আক্রান্তদের শনাক্তকরণ, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী স্থানীয় সরকারের অভাবে বিরাট সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এসব বিষয়ে সরকার উদাসীন।


আরো সংবাদ



premium cement