১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহের বাণীতে বিএনপি

‘সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লংঘন করছে’

‘সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লংঘন করছে’ - ছবি : সংগৃহীত

বিএনপি বলেছে, বাংলাদেশ সরকার বরাবরই গুমের ঘটনাগুলো সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে অস্বীকার করে আসছে। অথচ জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (এইচআরসি) সদস্যপদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার সুরক্ষার অঙ্গীকারনামা জমা দিয়েছিল। ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)’র সময় জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহের গৃহীত সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকার এইচআরসিকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতিও পুনরায় নিশ্চিত করেছে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং সমালোচনা সত্ত্বেও, সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে মঙ্গলবার বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, প্রতিবছরের মতো এবছরও মে মাসের শেষ সপ্তাহে পালিত হচ্ছে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৫৬৩ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮০ জনের লাশ পাওয়া গেছে, ৩১৪ জনকে জীবিত ফেরত পাওয়া গেছে অথবা গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত ১৬৯ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। যদিও আমাদের হিসেবে-প্রকৃত সংখ্যা আরো তিন থেকে চার গুণ বেশি। কারণ এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে কেবল গুম হয়ে যাওয়া পরিবার কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্ট এর ভিত্তিতে, আর অনেক আতঙ্কিত পরিবারই রিপোর্ট করার সাহস পায়নি।

বাণীতে বলা হয়, মর্মান্তিক বিষয় হচ্ছে, চলমান কোভিড-১৯ এর এই চরম দুঃসময়েও গুম করার কার্যক্রম থেমে নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে গুম করা একটি মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ। স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো সমাজের মধ্যে ত্রাস ছড়িয়ে দিতে এই ভয়াবহ অপরাধটি করে থাকে। বাংলাদেশেও গুমের ঘটনাগুলোর সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকবৃন্দ। এছাড়াও গুমের শিকার হয়েছে দেশের ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ মানুষও। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহে এই গুম হওয়া মানুষদের অসহায় পরিবারের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯৯ সালে জাতিসঙ্ঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটিতে বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মতো একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০-৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত একই কমিটি কর্তৃক বাংলাদেশের প্রতিবেদন পর্যালোচনা চলাকালে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা এই গুমের ঘটনাগুলি অস্বীকার করে। ওই কমিটির সমাপ্তি পর্যবেক্ষণে সাদা পোশাকে গ্রেফতার এবং গুম করা বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএনপির মতে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলি তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তারা নিয়মিতভাবে রাষ্ট্র দ্বারা বিভিন্ন হুমকি এবং হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছে। অনেক মামলায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখে পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে এবং ফৌজদারি অপরাধে মিথ্যা অভিযোগের পরে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। জবাবদিহিতার অভাবে কোনো বিচারিক প্রতিকার না পেয়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ও স্বজনরা ক্ষোভ এবং হতাশায় রাজপথে নেমেছে।

আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে অনুরোধ করছি, তারা যেন বাংলাদেশ সরকারকে গুমের ঘটনা বন্ধ করতে এবং গুমের শিকার সকলের ভাগ্য ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের পরিবারকে তথ্য দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। কোভিড-১৯ এর সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের অসহায় পরিবারকে সহায়তা করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। সর্বশেষে অবিলম্বে সকল নাগরিককে গুম হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়া সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন (আইসিপিপিইডি) স্বাক্ষর এবং ২০১৯ সালে গুমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সংক্রান্ত জাতিসংঘের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement