২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শেষ পর্যন্ত আপসহীনই রয়ে গেলেন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া, ইনসেটে তুহিন মালিক - সংগৃহীত

বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যুটা এতদিন সরকারের গলায় কাঁটার মতো বিদ্ধ হয়েছিল। না পেরেছে গিলতে। না পেরেছে ফেলতে। খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই ছিল গণঅভ্যুত্থানের আশঙ্কা। উপমহাদেশে এইরকম জননেতারা যখনই কারামুক্ত হয়েছেন, আর তখনই প্রচণ্ড গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। এটা ছিল প্রথম বিষয়।

দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল দুই নেত্রীর ইগো সমস্যা। শেখ হাসিনার কথা ছিল, ‘তোমরা পারলে তোমাদের নেত্রীকে রাস্তায় আন্দোলন করে মুক্ত করো।’ অন্যদিকে বিএনপির আন্দোলন করে তাদের নেত্রীকে মুক্ত করার কোনো শক্তি সামর্থ ছিল না, এটাই সত্য। তাই শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন, কোনোভাবেই জামিন নয়। নাকে খত দিয়ে প্যারোলে মুক্তি নিলে তবেই মুক্তি সম্ভব। কিন্তু বিএনপির রাজনীতির সবচেয়ে বড় শক্তিই হচ্ছে খালেদা জিয়ার আপসহীন ইমেজ। তাই খালেদা জিয়ার দল, নেতারা, এমপিরা, এমনকি উনার পরিবারকে পর্যন্ত প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে রাজি করাতে পারলেও, স্বয়ং খালেদা জিয়াকে সরকার কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারেনি। আর শেষ পর্যন্ত আপসহীনই রয়ে গেলেন বেগম খালেদা জিয়া।

করোনা মহামারীতে সবকিছু এখন লক-ডাউন। সমাবেশ শুধু নিষিদ্ধ নয়। বরং জীবন বাঁচাতে মানুষ নিজেই ঘরের বাইরে বেরুবে না। সাথে সারাদেশে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। এই সময় গণঅভ্যুত্থান তো দূরের কথা, সবাই ইয়া নফসি। সরকারের গলার কাঁটা ফেলার এরচেয়ে মোক্ষম সুযোগ বোধহয় এই শতাব্দীতে আর নাও আসতে পারে। তাই (১) নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। (২) শেখ হাসিনার ইচ্ছায় মুক্তি দেয়া হচ্ছে। (৩) ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় মুক্তি দেয়া হচ্ছে। (৪) মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। (৫) বয়স বিবেচনায় মুক্তি দেয়া হচ্ছে।
তার মানে, এতদিন কি খালেদা জিয়ার বিবেচনার মতো বয়স ছিল না? এতদিন কি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা ছিল না? এতদিন সরকার বলেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি আদালতের বিষয়। তাহলে আজ কিভাবে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া সম্ভব হচ্ছে?

আসলে বলতে লজ্জা হলেও এটাই সত্য যে, এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হয়ে গেলো - আইন তার নিজস্ব গতিতে চললেও, স্টেয়ারিংটা কিন্তু সরকারের হাতেই। যাক, সরকার অবশেষে ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটাও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মেধার পরিচয়। তবুও আমরা দেশবাসীর জন্য এটা আনন্দের, স্বস্তির। খালেদা জিয়াকে যখন জেলে নেয়া হচ্ছিল, তখনো তিনি বলছিলেন- কেউ যেন হাঙ্গামা বা আন্দোলন না করে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের ‘গান্ধিবাদী রাজনীতিকে’ খোদ বিএনপির লোকেরাই গালমন্দ করেছে। কিন্তু দিনশেষে খালেদা জিয়ার সেই অহিংস আহবান এবং মির্জা ফখরুলদের গান্ধিবাদী রাজনীতিরই জয় হয়েছে। আমরা দেশের জনগণও বিরোধী দলের জ্বালাও পোড়াও রাজনীতির বিপক্ষে। অন্যদিকে গুম-খুন, মামলা-হামলা-জেল-জুলুমের স্বৈরাচারী শাসনেরও বিরুদ্ধে। আজকে এই চরমতম মহামারীর সময় আমাদের হিংসার রাজনীতির অবসানে সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।

করোনা মহামারী আক্রান্ত বিশ্বের দেশগুলো দাগী আসামি ছাড়া অসংখ্য কয়েদিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হচ্ছে ভাইরাস সংক্রামনের ভয়ে। আর আমাদের হাজার হাজার নিরপরাধ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন কারাগারে অমানবিক জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। এদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। সমস্ত মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা ‘নির্বাহী আদেশে’ প্রত্যাহার করা হোক। তবেই, খালেদা জিয়ার মুক্তি স্বার্থক হবে।


আরো সংবাদ



premium cement