২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেউ ঝুঁকি নেবে কেউ ঘুমাবে তা হয় না : ইশরাক

কেউ ঝুঁকি নেবে কেউ ঘুমাবে তা হয় না : ইশরাক - ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে ধানের শীষের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেছেন, ‘কেউ ঝুঁকি নেবে, কেউ ঘুমিয়ে থাকবে’ এই নীতি থেকে সরে আসতে হবে।

রোববার দুপুরে সদ্য সমাপ্ত দক্ষিণ সিটি নির্বাচন পরবর্তী দলের এক মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন সকাল বেলা ভোট দিয়ে আমি নিজেও কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়েছি। আমি আকাশ-পাতাল তফাত লক্ষ্য করেছি। কিছু কিছু এলাকায় আমি দেখেছি, সেখানকার কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজের জান-জীবন ঝুঁকি রেখে তারা সেখানে চেষ্টা করে নির্বাচনের বিজয়কে ছিনিয়ে আনার জন্যে। আবার কিছু কিছু জায়গায় আমি গিয়ে দেখেছি সেখানে কাউন্সিলর প্রার্থীও নাই, আমাদের স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী যারা চেষ্টা করেছিলো ঢাকার, কিন্তু তাদেরকে সংগঠিত করাই হয়নি। সেই বিষয়গুলো আমাদের উঠিয়ে আনতে হবে। কারণ কেউ ঝুঁকি নেবে, কেউ ঘুমিয়ে থাকবে-সেটা হতে পারে না। এভাবে আমাদের সাফল্য আসতে পারে না।

নয়া পল্টনে আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা সিটি দক্ষিণের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে কাউন্সিলরবৃন্দের রুদ্ধদ্বার এই মতবিনিময় সভা হয়। এখানে ঢাকা দক্ষিণের কাউন্সিলর প্রার্থীসহ স্থানীয় নেতারা অংশ নেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধান সমন্বয়কারী স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সহ সিনিয়র নেতারা গণমাধ্যমের জন্য ১০ মিনিট সময় বক্তব্য রাখেন।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, সদস্য হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সুরুজ মিয়া, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, নবী উল্লাহ নবী রফিক সিকদার প্রমুখ উপস্থিত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ইশরাক বলেন, আমাদের এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার। আমরা যদি সুসংগঠিত হয়ে সামনের দিনগুলোতে আন্দোলনকে বেগবান না করতে পারি তাহলে কিন্তু আমাদের প্রায়প্রিয় নেত্রীর আমরা মুক্তিও খুব শিগগিরই সম্ভব হবে না, দেশে গণতন্ত্রও ফেরত আসবে না।

তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে যে দূর্বলতাগুলো ছিলো সেগুলো নিয়ে আলোচনা জন্য এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। যাতে সামনের দিনগুলোতে আমরা আমাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে পারি। নির্বাচনের দিন কার কি ভূমিকা ছিলো সেটা আপনারা কারো নাম উল্লেখ না করে বলুন।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে নির্বাচন পরবর্তী বিশ্লেষণ করার জন্য আমরা এখানে বসেছি। আমরা যা বক্তব্য শুনেছি, নির্বাচনে ৭-৮ % এর বেশি মানুষ ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয় নাই। তারপরও দক্ষিণে ২৯% এবং উত্তরে ২৫% ভোট কাস্টিং দেখানো হয়েছে ইভিএমের কারচুপির মাধ্যমে। এই মেশিন যে গ্রহণযোগ্য নয়, ত্রুটিপূর্ণ-এটা প্রমাণিত হয়েছে এই নির্বাচনে। ১০% এর উপরে যে ভোট ঘোষণা করা হয়েছে সবটাই ইভিএমের মাধ্যমে কারসাজি করে করা হয়েছে। ইভিএম যে ক্রটিপূর্ণ এটাতে জালিয়াতি করা যায় সেটা এই নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রমাণ করেছেন।

তিনি বলেন, এই নির্বাচনে আমাদের সফলতা গণতন্ত্র যে দেশে নাই-সেটা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ভোটের প্রতি জনগনের অনিহা, এই সরকারের প্রতি অনাস্থা। দেশ এবং জাতি একটা অশনি সংকেত পাচ্ছে এবং আমরা একটা অন্ধকার গহরবের দিকে ধাবিত হচ্ছি।

আমাদের নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে একমাত্র কারণ হলো দেশনেত্রী গণতন্ত্রের পক্ষে বলেই, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার যাতে না হয় সেজন্য তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। আজকে কাউন্সিলর প্রার্থীরা এখানে শপথ গ্রহণ করেছেন ওয়ার্ড-থানাসহ সকল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করে, আরো শক্তিশালী করে আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করবে। আমরা আশা করি, ঢাকা মহানগরী সারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে আজকে প্রস্তুত।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অনেক কথা আছে আপনাদের। যেখানে আওয়ামী লীগ লাঠি-সোঠা, র‌্যাব-পুলিশ নিয়ে হানা দিয়েছে সেখানে আমাদের কমিশনার প্রার্থীরা টিকতে পারে নাই। সেখানে আমার একটাই প্রশ্ন থাকবে, আমাদের সংগঠনটা কী এতোই দুর্বল যে আমরা কিছুই করতে পারলাম না। আমি বলি, আমাদের কিছু একটা করা উচিত ছিলো। এমন একটা সংবাদ পেলাম না যে, ওখানে কিছু একটা হয়ে গেছে। হয় নাই।

সুতরাং আমাদের সংগঠনটাকে আমাদের জন্যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্যে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই সুন্দর ও সুসংগঠিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি আমার এলাকায় বেশ কয়েকটা জায়গা দেখেছি যে জিতেছে সেই প্রার্থীগুলোকে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত রেখে ৩-৪-৫ ঘন্টা পরে দুই-তিন-চার-এগারো ভোটে ফেল করিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ জনগণ ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগ সেটা জনগনের কাছে প্রকাশ করে নাই। জবরদস্তিভাবে আজকে যেমন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আছে, জবরদস্তিভাবে মেয়র আজকে সেখানে ক্ষমতায় টিকে গেছে। আমাদের মেয়র ইশরাক জনগণের মেয়র, আমাদের মনোনীত কমিশনার প্রার্থী যারা ছিলেন, সকলেই জনগণের কাউন্সিলর। সেই হিসেবে আপনারা কাজ করে যাবেন। আপনাদের মনে রাখতে হবে এই সমস্ত মেয়র, কাউন্সিলররা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তাদের সকলকেই একইভাবে আমাদের সমীহ করার প্রয়োজন নাই। বরং আমি মনে করি, আমাদেরই মেয়র ও কাউন্সিলররা ঢাকা শহরের যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবে ইনশাল্লাহ জনগণ তাদেরকে সালাম দেবে।


আরো সংবাদ



premium cement