২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নির্বাচনে হেরে বিএনপির আচরণ নাচতে না জানলে উঠান বাঁকার মতো : তথ্যমন্ত্রী

-

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায়, আর যখনই নির্বাচনে হেরে যায় তখন তাদের অভিযোগ ‘নাচতে না জানলে উঠান বাঁকার’ মতো হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বুধবার বিএনপি সংবাদ সম্মেলনে তাদের অভিযোগও সেরকম ছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

তথ্যমন্ত্রী বিএনপিকে এধরনের আজগুবি অভিযোগ উপস্থাপন না করে বাস্তবতাকে মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনাদের নেতাকর্মীরা কেন আপনাদের কাছ থেকে সরে গেছেন এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন ভোটের দিন মাঠে ছিল না সেই বিশ্লেষণ করুন। তাহলে আপনাদের দল উপকৃত হবে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবার পর দেখলাম দুই মেয়র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তারা কিছু আজগুবি অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন।

তারা বলেছেন ইভিএম মেশিনে নাকি রাত পর্যন্ত ভোট দেয়া হয়। ইভিএম মেশিনে যদি এমন সুযোগ থাকতো তাহলে ভোট গ্রহণের হার ২৫ শতাংশ থাকতো না, ৬০ শতাংশের উপরে যেত। ইভিএম মেশিন নিজেই সব দলের জন্য পোলিং এজেন্টের কাজ করেন। কারো যদি আঙ্গুলের ছাপ না মিলে কোনোভাবেই ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। এমনকি সিইসিকেও আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে অনেক বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দ্বিগুণ ভোট পেয়ে যখন জয়ী হয়েছে তখন তো বিএনপিকে নানা ধরণের অভিযোগ উপস্থাপন করতে হবে। সেটাই তারা করেছে।

ঢাকা দক্ষিণের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করতে চারটা পর্যন্ত সময় কেন লাগলো, বিএনপির এমন অভিযোগের ব্যাপারে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা তো বিএনপির মতো গোঁজামিল দিয়ে নির্বাচন শেষ হবার দু’ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করিনি। সঠিক ফলাফল ঘোষণার জন্যেই নির্বাচন কমিশন সময় নিয়েছে। বিএনপির এসব অভিযোগ করে জনগণের কাছে নিজেদের হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করছে। দেশের ইতিহাসে ঢাকা দুই সিটির নির্বাচন অন্যতম একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে।

বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যখন প্রথম টেলিভিশন আসে তখন অনেকে বলেছে টেলিভিশন দেখলে ঈমান চলে যাবে। আবার যখন দেশে প্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয় তখনও গ্রামে-গঞ্জে অনেকে প্রচারণা করেছে এটি ব্যবহার করা যাবে না। এখন কিন্তু পবিত্র হজের অনুষ্ঠান এবং বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতও টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হয়। বিএনপির অবস্থাও হয়েছে সেরকম। ইভিএম মেশিনেও ভোট দেয়া যাবে না বলে বিএনপি প্রচারণা চালাচ্ছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিল তখন বাংলাদেশে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়। তখন বেগম জিয়া বলেছিলেন এই সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে বাংলাদেশ যুক্ত হলে দেশের সব গোপন তথ্য চলে যাবে। আর সেই সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে আমরা পরে সংযুক্ত হয়েছি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে। সুতরাং বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায়। বুধবারে তাদের সংবাদ সম্মেলনও সেই ভয়ের বহিঃপ্রকাশ।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি প্রথম থেকে বলে আসছে ঢাকা সিটির নির্বাচন হচ্ছে তাদের আন্দোলনের অংশ। তাদের আন্দোলন সম্পর্কে মানুষ জানে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন বানচাল করার জন্য পাঁচ শ’ ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ভোটার ও নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারসহ অনেককে হত্যা করেছে। সুতরাং তারা যখন ঘোষণা দেয় এই নির্বাচন আন্দোলনের অংশ তখন মানুষ সেই হাঙ্গামার আশঙ্কা করে। সেই কারণেই অনেকে ভোট কেন্দ্রে যায়নি। বিএনপি প্রথম থেকে ইভিএমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা না চালালে এই উপস্থিতি আরো ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেশি হতো।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে কোনো কেন্দ্র দখল, বড় কোনো হাঙ্গামা হয়নি, সিল মারার কোনো ঘটনা ঘটেনি। অতীতে দেখেছি আমাদের দেশে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অনেক হাঙ্গামা, কেন্দ্র দখল ও মানুষ মারা যায়। ঢাকা সিটি করপোরেশনে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ফলে এধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধুমাত্র দেশের বিচারে নয়, উপমহাদেশীয় মানদণ্ডেও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল অত্যন্ত ভালো একটি নির্বাচন।

কলকাতার সিটি নির্বাচনের তুলনা দিয়ে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে কলকাতা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল। সেখানে মেয়র পদে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রার্থী ছিল রূপা গাঙ্গুলি। এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা তার স্টেজ ভেঙ্গে দিয়েছে। রূপা গাঙ্গুলিকে স্টেজ ছেড়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ধাওয়া করে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

এধরণের ঘটনা ঢাকা সিটি নির্বাচনে হয়নি। কলকাতা সিটি নির্বাচনের সময় ৭-৮ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। ৫৫ লাখ ভোটারের ঢাকা শহরে এত শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠান করার জন্যে নির্বাচন কমিশন ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকার রাখে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের সরকার আওয়ামী লীগের সরকার, সরকারের আওয়ামী লীগ নয়। আমাদের মূল ঠিকানা দল। আমরাদের নির্বাচিত এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবার মূল ঠিকানা হচ্ছে দল। সুতরাং দায়িত্ব পালন করার সময় দলকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলের প্রতীকে হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হবার পর দলীয় কর্মীরা অনেকের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। অনেকে আবার নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। এটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। নিজস্ব বলয় তৈরি করলে দেখা যাবে সংকটের সময় সেই বলয়ের লোকজন থাকবে না। কারণ মৌচাকে যখন মধু থাকে তখন অনেক লোক ঘুরঘুর করে। যখন মধু থাকে না তখন কাউকে আর পাওয়া যায় না।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ’৭৫ এর পরে আমরা অনেক বছর ক্ষমতায় ছিলাম না। বুকে পাথর বেঁধে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। দল কিন্তু অনেক শক্তিশালী ছিল। দলের শক্তি বর্তমানের চেয়ে যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন কোনো অংশে কম ছিল না। আজকে পরপর তিন বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের অনেকের মধ্যে আলস্য এসেছে। এই আলস্য ঝেড়ে ফেলতে হবে। দলে অনেক অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। এদের চিহ্নিত করে তারা যদি দলীয় পদে থাকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে। ২০১৪ সালের পর যারা পিঠ বাঁচানোর জন্যে অথবা ক্ষমতার সাথে থাকার জন্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তাদেরকে দলীয় পদে দেয়া যাবে না।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারসহ বিগত নির্বাচনগুলোতে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে তাদের সভাপতি-সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা যাবে না। দলীয় শৃঙ্খলা ছাড়া দলকে আমরা কোনোভাবেই শক্তিশালী করতে পারব না।

প্রতিনিধিসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিন্নাতুন নেছা তালুকদার, প্রফেসর মনছুর রহমান এমপি, সাবেক এমপি আকতার জাহান, কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, আয়েন উদ্দিন এমপি, অ্যাডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা এমপি, এনামুল হক এমপি প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।


আরো সংবাদ



premium cement