দুর্নীতিবিরোধী অভিযান হঠাৎই থেমে গেছে?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:২৬
অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য এবং টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আলোচিত অভিযান কি হঠাৎ করেই থমকে গেছে? বিশ্লেষকদের অনেকেই এ প্রশ্ন তুলছেন এখন।
তারা বলছেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানটি ক্লাবপাড়ায় অবৈধ ক্যাসিনো ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল - কিন্তু এখন সেটাও আর দৃশ্যমান নয়।
তারা মনে করেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে সরকারের রাজনৈতিক চিন্তা কি, তাও পরিস্কার করা হচ্ছে না।
তবে সরকার বলছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের কারণে এতে কিছুটা ধীর গতি আসতে পারে, কিন্তু অভিযান থমকে যায়নি।
সম্প্রতি চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ দু'জন নেতাকে সরিয়ে দেয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠতে থাকায় এর বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়।
সেই প্রেক্ষাপটে শুরু করা হয় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান । অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য পরিচালনা এবং টেন্ডারবাজির অভিযোগে যুবলীগ এবং কৃষকলীগের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযান কি আদৌ চলছে এখন?
এ সময় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেকের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ ওঠে। তবে অভিযানটি ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে ক্লাবগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
আর এখন অভিযান আদৌ চলছে কিনা, সেই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবায়দা নাসরীন বলছিলেন, সরকার আসলে কতদূর যাবে, সেটা পরিস্কার করা হচ্ছে না। ফলে রাজনৈতিকভাবে একটা সাময়িক কৌশল হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে বলে তিনি মনে করেন।
"সরকারের যে লক্ষ্য, সেটির মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী বা বড় ধরণের সংস্কারের পক্ষে অবস্থানের বিষয়টি খোলাসা হচ্ছে না। কারণ যখনই ছোট ছোট বা টুকরো টুকরো বিসয়ে পদক্ষেপ হচ্ছে, যেমন ছাত্রলীগের দু'জন নেতাকে সরিয়ে দেয়া হলো,বা যুবলীগের মধ্যে ব্যবস্থা — সেগুলো সরকারের স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ বলে আমার মনে হয়েছে। কিন্তু এর দীর্ঘ মেয়াদী কোনো প্রভাব আছে বলে মনে হচ্ছে না।"
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেছিলেন।
তিনি এমন মন্তব্যও করেছিলেন যে, ওয়ান-ইলেভেনের প্রয়োজন হবে না। কারণ তাঁর সরকারই দুর্নীতি দমন করবে এবং এই অভিযানে কাউকে ছাড় দেবে না।
আলোচনার বিষয় এখন আবরার ফাহাদ হত্যা
কিন্তু বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনা এখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। এই ঘটনার পর আলোচনা থেকে হারিয়ে গেছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ।
তা ছাড়া অভিযানের কোনো কিছু এখন দৃশ্যমানও নয়। সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন
ফলে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়েও বিশ্লেষকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, তাদের দল এবং সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নিয়েই এগুচ্ছে।
"ক্লাবগুলো ক্যাসিনো-বাণিজ্যের মতো অনৈতিক কাজ হতো, সেগুলো ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে। এখন গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযান থামলো কোথায়?"
তিনি আরও বলেছেন, শুধু ক্যাসিনো বা ক্লাবে এই অভিযান সীমাবদ্ধ নয়। দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং মাদকের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ এবং র্যাবের কর্মকর্তারাও একই ধরণের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকও এখন জোরালো ভূমিকা রাখছে না- এমন বক্তব্যও অনেকে তুলেছেন।
কিন্তু দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, অনুসন্ধানের আগে তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। তারা এখন অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
"তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের পক্ষে মামলা করা সম্ভব নয়। কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলেই আমাদের আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান করতে হয়। অনেকে বলছে যে, এত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলছে, দুদক চুপ কেন? সব অপরাধ তো দুদকের আওতায় আসে না। ক্যাসিনো দুদকের তফসিলভূক্ত নয়।"
মাহমুদ আরো বলেন, "পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্নসূত্রে আমরা পেয়েছি, ৪৩ জন অবৈধ আয় করেছে। সেগুলো আমরা অনুসন্ধান করছি। তাদের কেউ ক্যাসিনোর সাথে জড়িত থাকতে পারে।"
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা