২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
জনগণের মাঝে ইলিউশন তৈরি করেছে সরকার

নিজেদের কালিমা আড়াল করতে কুতর্কের জন্ম দিচ্ছে আ’লীগ : রিজভী

-

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার দেশকে হরিলুটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে। আওয়ামী লীগ যাই বলুক, তাদের মুখে উন্নয়ন আর বুকে দুর্নীতি।

তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে দুর্নীতি এখন আওয়ামী লীগকে জনমনে ঘৃণার পাত্রে পরিণত করেছে। তাই কথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে এখন যখন জনগণের সামনে আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কালিমায় লিপ্ত চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এখন সেই চেহারা আড়াল করার জন্য তারা নানারকম কুতর্কের জন্ম দিচ্ছে।

আজ রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, রাতের ভোটে ক্ষমতা দখলকারী অবৈধ সরকার জনগণের মধ্যে ইলিউশন তৈরি করার জন্য কথিত ক্যাসিনো, জুয়া এবং মাদক বিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিল। তারপর ৬-৭ জনকে ধরার পর থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার কারণে সেই লোক দেখানো অভিযান স্থানু হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের মাঝারী নেতাদের ঘরে ঘরে অবৈধ টাকার সিন্দুক। ভল্ট, টাকশাল, কাড়িকাড়ি টাকা, সোনা-দানার খনি আবিষ্কার হওয়ার পর বড় নেতারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। চারদিক থেকে যখন রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে অভিযানের দাবী জোরালো হচ্ছে তখনই থামিয়ে দেয়া হয়েছে অভিযান। রাঘব বোয়াল ও দুর্নীতির রথি মহারথীদের সুতোর টানে এগুতে পারছে না অভিযান।

সরকারের নেতারা বলছেন- সুশাসনের আমেজ দিতেই নাকি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান। হাস্যকর এই চমক আর আমেজ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো চুনোপুটিদের অফিস বাড়িতে সিন্দুকে শত শত কোটি টাকার স্টক। সহজেই অনুধাবন করা যাচ্ছে- রাঘব বোয়ালদের কাছে রয়েছে রাষ্ট্রের লুট হওয়া লক্ষ কোটি টাকা। গতকাল খুলনায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে গত ১০ বছরে দেশের ৯ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।’

রিজভী আরো বলেন, সরকার দেশকে হরিলুটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে। টেলিভিশনের খবরে বলা হচ্ছে- ক্যাসিনোর চেয়েও বড় দুর্নীতি হয় পরিবহন সেক্টরে। কেবল রাজধানীতেই প্রতিদিন ১০/১২ কোটি টাকার চাঁদা ওঠে। অথচ সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাসীন নেতা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই দুর্নীতি, মাদক, জুয়া ও কালোটাকার মালিকদের বিরুদ্ধে কম্বিং অপারেশন চালাতে চাইলে বিনাভোটের অবৈধ দুর্নীতিবাজ সরকার যদি মাথার ওপর বসে থাকে তাহলে সেটি জনগণের কাছে নাটক ছাড়া অন্যকিছু মনে হবে না। আওয়ামী লীগ নিজেদের রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদেরকে এখন নানারকম মিথ্যাচার এবং ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, অভিযানের নামে কয়েকটা চুনোপুটি ধরার পর জনগণের সামনে দুর্নীতিবাজ সরকারের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়ে পড়ায় নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রীরা এখন স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছেন।

রিজভীর অভিযোগ, দেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজানা ছিল না। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদেরকে সরকারের দলীয় বাহিনী হিসেবে পরিণত করায় এতদিন তারা ক্যাসিনোতে অভিযান চালাতে সাহস করেনি।

তিনি আরো বলেন, দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিক মাত্রই বিশ্বাস করেন, রাষ্ট্র ও সমাজে দুর্নীতি, অনাচার, অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা পুলিশের স্বাভাবিক কাজের অংশ। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষা করতে হয় না। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষা করা মানে প্রধানমন্ত্রীকেও দুর্নীতির অংশীদার বানিয়ে ফেলা।

রিজভী বলেন, এই দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে যখন জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, তখন জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এটাকে নিয়ে অহেতুক রাজনৈতিক বিতর্ক উস্কে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, নিশিরাতের সরকারের কাছে জনগণ কুতর্ক শুনতে চায় না, দুর্নীতিবাজরা কে কোন দলের সেটি শুনতে চায় না। জনগণ চায়, বিএনপিও চায়, দুর্নীতিবাজ সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। কিন্তু দেখা গেছে, রূপপুরের দুর্নীতি কিংবা ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি যেখানেই দুয়েকটা চুনোপুটি ধরা হচ্ছে, সেখানে দুর্নীতির বিচারের পরিবর্তে এটিকে রাজনৈতিক রং দিয়ে আওয়ামী লীগ একটা বিকৃত আনন্দ লাভ করে।

তবে জনগণের সামনে ভেঙে পড়েছে আওয়ামী লীগের মিথ্যার মিথ। সরকার যদি মনে করে, দুর্নীতির জন্য অন্য দল থেকে আওয়ামী লিগে যাওয়া লোকজন দায়ী তাহলে সরকারের উচিত এক সপ্তাহের মধ্যে সেসব দুর্নীতিবাজদেরকে তাদের দল থেকে জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে বের করা। সত্যি সত্যি দুর্নীতিবাজ ধরতে চাইলে, চুনোপুটি নয়, দুর্নীতির সম্রাটদের ধরুন, তাদের রক্ষক রাজা-রানী, বাদশাহদের ধরুন।

তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের পোশাকটি দলীয় পোশাক নয়। এটার সম্মান রক্ষা করুন। আওয়ামী লীগের কাছে বিশ্বস্ত হওয়ার দরকার নেই। রাষ্ট্র ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকুন। জনগণের ভালোবাসা অর্জন করুন। এক পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আমিন যেভাবে পোশাকের মর্যাদা রক্ষা করেছেন তার কাছ থেকেও আপনাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

রিজভী বলেন, অভিযান শুরুর পর থেকে ক্ষমতাসীনদের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ার কারণে গলাবাজি শুরু করেছে। তাদের নিজস্ব কিছু ভূঁইফোড় অনলাইন মিডিয়া ব্যবহার করে বিএনপির নামে, দেশনায়ক তারেক রহমানসহ নেতৃবৃন্দের নামে আজগুবে আষাঢ়ে গল্প প্রচার করছে। এটা সর্বজনবিদিত যে, ৭/৮ বছর আগে ক্যাসিনো কালচার আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতারা বাংলাদেশে আমদানি করেছে।

রিজভী আরো বলেন, মামলা-হামলা, হুলিয়া, গ্রেফতার, গুম, খুন করে বিএনপিকে তো ঘরে-বাইরে নির্যাতনের ধারা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলায় ২৬ লাখ আসামি করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৫৯৯ দিন হলো মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রেখেছেন। জামিন বাধা দেয়া হচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা আসামি হয়ে জমিজমা, বসতভিটা বিক্রি করে থানা পুলিশ সামলাচ্ছেন, জামিন নিচ্ছেন। অনেকে কপর্দকশূন্য হয়ে রিকশা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাজমুল হক নান্নু, আবুল খায়ের ভুইয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement