২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

জালেম শাসকের বিরুদ্ধে আশুরা এক ঐতিহাসিক বিপ্লবের দিন : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

জালেম শাসকের বিরুদ্ধে আশুরা এক ঐতিহাসিক বিপ্লবের দিন : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার ও জালেম শাসকের বিরুদ্ধে আশুরা এক ঐতিহাসিক বিপ্লবের দিন। আশুরা আমাদেরকে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আপোষহীন প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। ১০ই মহররম শুধু মুসলমানদের জন্যই নয় বরংপূর্ববর্তী সকল উম্মতের কাছে ও একটি মর্যাদা পূর্ণদিন, যা ঐতিহাসিক অনেক ঘটনার স্বাক্ষ্য বহন করে।

এই দিনেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবী সৃষ্টিসহ ১০জন নবী ও রাসূলকে বিভিন্ন নিয়ামত দানও বিপদ-মুসিবত থেকে রক্ষা করে ছিলেন। ৬১হিজরীর এইদিনে অত্যাচারী শাসক ইয়াজিদের অন্যায়, অত্যাচার ও ইসলামের মুলনীতি লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রাসূল (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা) স্ব-পরিবারে কারবালার ময়দানে শাহাদাত বরণ করেন। মূলত কারবালার লড়াই ছিল জালিম শাসকের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই। ইমামহুসাইন(রা.) স্ব-পরিবারে শাহাদতের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে গেছেন পার্থিব স্বার্থের কাছে কোনো মুমিন মাথানত করতে পারেনা। ফলে আশুরা প্রতিটি মুসলমানকে ত্যাগের মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কঠিন ময়দানে টিকে থাকার শিক্ষা দেয়। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে সকল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলালউদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, আর ও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন, মহা নগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য ও মতিঝিল থানা আমীর সিরাজুল ইসলাম, রমনা থানা সেক্রেটারি আবদুস সাত্তার সুমন, পল্টন থানা সেক্রেটারি শাহিন আহমদ খান প্রমুখ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ইসলামী আন্দোলনের উপর জুলুম-নির্যাতন ইতিহাসের ধারাবাহিকতারই অংশ। যুগে যুগে যারাই মানুষের কাছে ইসলামের সুমহান দাওয়াত দিয়েছেন তাদের উপরই নেমে এসেছে অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন। বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও তা থেকে মোটেই আলাদা নয়। এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন জালিম সরকার তাদেরকে করারুদ্ধ করেজুলুম-নির্যাতনচালাচ্ছে। এসরকারের আমলে জেল জুলুম নির্যাতন থেকে ফাঁসির মঞ্চে যেতে হয়েছে ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদেরও। অসংখ্য মানুষকে খুন ও গুম করা হয়েছে। নির্মম নির্যাতনে হাত, পাওচোখ হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ইতিহাস এই জালেম সরকারকে কখনো ক্ষমা করবেনা। তিনি সুরা মায়েদার৫৪নং এবং সুরা ইব্রাহিমের ৪৬নং উদ্ধৃত করে বলেন, মুমিনের কখনো হতাশ বা হতোদ্দম হওয়ার সুযোগ নেই বরং সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা, জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করেই মহান আল্লাহর সন্তষ্টিও দ্বীনকে বিজয়ী করার আন্দোলনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। তাহলেই ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইসলামের ইতিহাসে মর্যাদাপূর্ণ আশুরা বিভিন্ন ঘটনা পুঞ্জে সমৃদ্ধহলেও সর্বশেষে সংঘটিত কারবালা প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)এর শাহাদতই এদিবসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মূলত আশুরার এই দিনটিই ইতিহাসে অধিকস্মরণীয়। ইমাম হোসাইন (রা) নিশ্চিত মৃত্যু জেনে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেছেন তবু ও ইয়াজিদের শাসনক্ষমতার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেননি। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এমন আত্মোৎ স্বর্গের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে নজীর বিহীন। অপরদিকে ক্ষমতার দম্ভদেখিয়ে ইয়াজিদ ইমাম হোসাইন (রা) এর ক্ষুদ্র ঈমানদার বাহিনীকে শহীদ করে তার ক্ষমতা সাময়িকভাবে রক্ষা করলেও ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আজো যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনগণের সমর্থন না নিয়ে ক্ষমতা দখল করে অন্যায় নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের জন্য এঘটনা অবশ্যই শিক্ষণীয়। আশুরার শিক্ষা বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা দেয়। রাতের আঁধারে মানুষের ভোট ডাকাতি করে এসরকার গণতন্ত্রের দাফন সম্পন্ন করেছে। একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নেক্কার জনক ভাবে হরণ করেছে। বিরোধী মতকে দমন করতে তারা মামলা-হামলা, গুম-খুন অব্যাহত রেখেছে। এই অগণতান্ত্রিক এক দলীয় শক্তিকে মোকাবেলায় ইমাম হোসেন (রা) এর আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জীবীত হতেহবে। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ১০ মহরম বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি তাৎপর্যময় দিন। ইসলামের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী পবিত্র আশুরা। মুহাম্মদ (সা:) যে জীবন ব্যবস্থা পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন এবং যা সামাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, সেই দ্বীন ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্যই ইমাম হোসাইন (রা) কারবালার প্রান্তরে শাহাদৎ বরণ করেন। তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও অন্যায় ও অসত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। ইতিহাসের থেকে শিক্ষা না নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারি এজিদের অনুসরণে অন্যায়ভাবে ক্ষমতা আকড়ে ধরতে জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাওলানা আব্দুস সোবহানকে যথোপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান না করে মানবিকতার লঙ্ঘন করেছে। আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী, এটিএম আজহার সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও বিরোধী রাজনীতিক নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় করান্তরীন করে রেখেছে।


আরো সংবাদ



premium cement