২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার : লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে আ’লীগ

লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে আ’লীগ - সংগৃহীত

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সম্প্রতি পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি ছিল আওয়ামী লীগে। শুরুতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকলেও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নেয়ায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য কিছুটা ছাড় দিয়ে নমনীয় নীতি গ্রহণ করে ক্ষমতাসীনেরা। তবে নির্বাচন শেষে দলীয় ফোরামে বিদ্রোহী প্রার্থীদের শোকজ ও শাস্তির দাবি জোরালো হয়ে উঠলেও এখন লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করছে দলটির হাইকমান্ড। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার করলে তৃণমূলে দল লাভবান হবে নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এ বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। 

জানা গেছে, গত ২৯ মার্চ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের ইন্ধন জোগানো এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান। এরপর ৫ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের পক্ষে যারা কাজ করেছেন তাদের শোকজ পাঠানো হবে- এমনটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো শোকজ পাঠানো হয়নি কিংবা তাদের বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানান, নেতাকর্মীরা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে এটা কখনোই কাম্য নয়। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে যত বড় নেতা হোক না কেন তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। গত উপজেলা নির্বাচনে অনেকেই দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে শতাধিকের ওপরে জয়লাভ করেছে। কিন্তু গত উপজেলা নির্বাচনটা ছিল এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এখন নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে হলে নিজ দলের প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করা ছাড়া বিকল্প ছিল না। তিনি আরো জানান, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো একেবারেই দুর্বল। হাতেগোনা কয়েকটি উপজেলায় জাতীয় পার্টিসহ অন্যরা প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করত তাহলে উপজেলা নির্বাচন একেবারেই আমেজ হারাতো। যতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়েছে তার ধারে কাছেও থাকত না। এই বিষয়টি যদি হিসাব করা হয় তাহলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের আপাতত দৃষ্টিতে ছাড় দেয়া যেতে পারে। আর দল থেকে নেতাকর্মীদের একেবারে বহিষ্কার করাতো কোনো সমাধান নয়। বিশেষ করে বিএনপি জোট নির্বাচনে এলে দলীয় প্রার্থীদের জেতানোর জন্য বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে অতীতের মতো কঠোর অবস্থানে থাকা যেত। 

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, নির্বাচন উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের নেতাকর্মীর যে ভূমিকা ছিল তাতে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আপাতত ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে কিছু এলাকায় বেশ কিছু সহিংসতা ঘটেছে। ওই সব এলাকার নেতাকর্মীদের তরফ থেকে যদি জোরালো কোনো অভিযোগ আসে তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারেও হাইকমান্ডের চিন্তা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেকেই দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এখনো কাউকে শোকজ করা হয়নি। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন এবং তাদের সাথে জড়িত নেতাকর্মীদের তালিকা করাও শেষ হয়নি। শেষ হলেই নেত্রী বিষয়টি দেখবেন। 

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চে ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবার কিছু উপজেলা বাকি রেখে পাঁচ ধাপে বেশির ভাগ উপেজলা নির্বাচন শেষ করা হয়। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement