২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জীবনানন্দ দাশের ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ

জীবনানন্দ দাশের ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ - ছবি : সংগৃহীত

বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি জীবনানন্দ দাশের ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।

লিডস ভিত্তিক যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত প্রচারকারী সৌধ (সোসাইটি অব পোয়েট্রি অ্যান্ড ইন্ডিয়ান মিউজিক) দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আগত অতিথি আলোচক ও শিল্পীদের নিয়ে দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক জীবনানন্দ উৎসবের আয়োজন করছে।

এ উৎসবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সমন্বয়ে এ আয়োজনটি সৌধের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

এ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হবেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. সাদেকুল আরেফিন।

বুধবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খ্যাতিমান কবি, প্রাবন্ধিক এবং ভারতের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কেএনইউ) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জহর সেন মজুমদার, জীবনানন্দের ভাতিজা এবং লেখক অমিতানন্দ দাশ, লেখক এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শামীম রেজা এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনানন্দ দাশ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিন অংশ নেবেন।

উৎসবের প্রথম দিনে লেখক ও কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক স্বাতী গুহ, বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমালোচক, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কবি ও লিডস ট্রিনিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ওজি হার্ডউইক, বিশিষ্ট তাত্ত্বিক, কবি এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, যুক্তরাষ্ট্রে গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক, সমালোচক ও সহযোগী অধ্যাপক আজফার হুসেন এবং কথাসাহিত্যিক এবং যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল নৃবিজ্ঞানী ড. শাহাদুজ জামান এতে অংশ নেবেন।

আন্তর্জাতিক এ উৎসবের প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক অংশে জীবনানন্দের কবিতার ভিজ্যুয়াল ব্যাখ্যা দেবেন ভারতীয় ধ্রুপদী কণ্ঠশিল্পী কোয়েল ভট্টাচার্য, সরোদ বাদক সুভাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সেমি-শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী অমিথ দে, কলম্বীয় কথকের নাচের নৃত্যশিল্পী জেসিকা কোরিয়া, ভারতীয় কথকের নয়নিকা ঘোষ চৌধুরী, সংগীতশিল্পী এরিক শ্যাল্যান্ডার, পপি শাহনাজ এবং মানশ চৌধুরীর এবং ফটোগ্রাফার পাবলো খালেদ এবং নিশাত আফজার এতে অংশ নেবেন।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, উৎসবের দ্বিতীয় দিনেও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং আলোচনার আয়োজন থাকবে। রূপসী বাংলার কবি খ্যাত জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

জীবনানন্দের গল্প-উপন্যাসে অভিব্যক্ত হয়েছে দাম্পত্যজীবনের সঙ্কট, নরনারীর মনস্তত্ত্ব ও যৌনসম্পর্কের জটিলতা এবং সমকালের আর্থসামাজিক কাঠামোর বিপর্যয়। তার প্রায় গল্প-উপন্যাস আত্মজৈবনিকতার প্রকাশ। তিনি ছিলেন বাংলা কাব্যান্দোলনে রবীন্দ্রবিরোধী তিরিশের কবিতা নামে খ্যাত কাব্যধারার অন্যতম কবি। পাশ্চাত্যের মডার্নিজম ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গীয় সমাজের বিদগ্ধ মধ্যবিত্তের মনন ও চৈতন্যের সমন্বয় ঘটে ওই কাব্যান্দোলনে।

জীবদ্দশায় একজন কবি হিসেবে জীবনানন্দ দাশ খুব বেশি স্বীকৃতি এবং জনপ্রিয়তা পাননি। তবে, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার হিসেবে জীবনানন্দের স্বতন্ত্র প্রতিভা ও নিভৃত সাধনার উন্মোচন ঘটে মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত অসংখ্য পান্ডুলিপিতে।

বরিশালের এক ব্রাহ্ম পরিবারে জন্ম নেয়া জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বি এম কলেজ থেকে আইএ এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ ও পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন।

জীবনানন্দের কাব্যচর্চার শুরু অল্পবয়স থেকেই। তার কবিতায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ তার কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়। তবে, প্রকৃতির পাশাপাশি জীবনানন্দের শিল্পজগতে মূর্ত হয়েছে বিপন্ন মানবতার ছবি এবং আধুনিক নগরজীবনের অবক্ষয়, হতাশা, নিঃসঙ্গতা ও সংশয়বোধ।

তার বেশ কয়েকটি কবিতা বাঙালি জাতিসত্তার প্রতি বিশেষত তার প্রয়াণের পরে এবং ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এক বিদ্রোহী অনুভূতিকে জাগ্রত করেছিল ।

বনলতা সেনের জন্য বিখ্যাত এ কবির অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ঝরাপালক, ধূসর পান্ডুলিপি, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা ও বেলা অবেলা কালবেলা।

কবি হিসেবে পরিচিত হলেও জীবনানন্দ দাশ বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন। ২১টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্পের একটি সংকলন রয়েছে তার। কবিতার কথা নামে তার একটি মননশীল ও নন্দনভাবনামূলক প্রবন্ধগ্রন্থ আছে। কলকাতা থেকে তার গদ্যরচনা ও অপ্রকাশিত কবিতার সংকলনরূপে জীবনানন্দ সমগ্র নামে বারো খন্ড রচনাবলি প্রকাশিত হয়েছে।

৫৫ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর জীবনানন্দ দাশ কলকাতায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।


আরো সংবাদ



premium cement