০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা

নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা - সংগৃহীত

পৃথিবীতে এখন মাত্র দু’টি নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো বেঁচে আছে। দু’টিই নারী গণ্ডার। এই প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে কাজ করছেন একদল গবেষক। কিন্তু পুরুষ গণ্ডার ছাড়া কিভাবে সেটি সম্ভব হচ্ছে?

বেঁচে থাকা শেষ দুই নারী নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো নাইয়িন ও ফাতু। তারা মরে গেলে তাদের জাত একেবারে হারিয়ে যাবে।

নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোদের বাঁচাতে কাজ করা আন্তর্জাতিক এক দলের সদস্য প্রজনন জীববিজ্ঞানী সুজানা হলৎস। এই কাজের জন্য তাদের সাউদার্ন হোয়াইট রাইনোর সহায়তা নিতে হয়েছে।

সুজানা হলৎস বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো সফলভাবে গণ্ডারের (সাউদার্ন হোয়াইট রাইনো) মধ্যে ভ্রূণ স্থানান্তর করতে পেরেছি এবং এটি আমাদের জন্য একটি নতুন ও বড় পদক্ষেপ।’

মধ্য আফ্রিকার কিছু অংশ নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোরা এক সময় ঘুরে বেড়াত। কিন্তু তাদের ওপর শিকার ও গৃহযুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এবং বন থেকে তারা হারিয়ে গেছে। ফলে পরিবেশগত ফাঁক তৈরি হয়েছে।

হলৎস বলেন, ‘সেন্ট্রাল আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো, বা বলা যায়, প্রাকৃতিক আবাস থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা লম্বা ঘাস এমনভাবে খায় যে ছোট আকারের ঘাস থেকে যায়, যেটা অন্য পশুরা খেতে পারে। কারণ এমন কিছু পশু আছে যারা লম্বা ঘাস পছন্দ করে না। এমন ছোট ঘাসের এলাকা বা জোন তৈরি করে নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো অগ্নি-নিরোধেও সহায়তা করে। ইকোসিস্টেম খুব জটিল বিষয়। আমার মনে হয়, কোনো প্রাণী বা প্রজাতি হারিয়ে গেলে বোঝা যায় সবকিছু কেমন একটা আরেকটার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল।’

চেক প্রজাতন্ত্রের এক চিড়িয়াখানায় চারটি গণ্ডার ছিল। এই দুই গণ্ডার দম্পতি থেকে বাচ্চা পেতে তাদের ২০০৯ সালে কেনিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, তারা যেন তাদের পরিচিত পরিবেশে পরিচিত ঘাস খেতে পারে।

কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। কারণ কোনো সন্তান জন্ম নেয়নি। আর দুই পুরুষ গণ্ডারই মারা গিয়েছিল।

ফলে এই প্রজাতি টিকিয়ে রাখার শেষ সুযোগ হচ্ছে, এই দুই নারী গণ্ডার।

কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নের কিছুটা উত্তর বার্লিনের এই লাইবনিৎস ইন্সটিটিউট ফর জু অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ রিসার্চে লুকিয়ে আছে।

হলৎস বলেন, ‘সেখানে আমরা নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোর বীর্যের নমুনা ও নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোর ভ্রূণ সংরক্ষণ করে রেখেছি। আমরা সেগুলো ভাগ করে ইতালি ও জার্মানিতে রেখেছি যেন কোনো দুর্যোগ হলে যেন অন্তত একটি ব্যাংক নিরাপদ থাকে।’

নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোর ৩০টি ভ্রূণ সেখানে রাখা আছে। কয়েকটি পুরুষ গণ্ডার মারা যাওয়ার আগে বীর্য সংগ্রহ করে রেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা।

কয়েক সপ্তাহ পরপর বিজ্ঞানীরা নারী গণ্ডার থেকে ডিম কোষ সংগ্রহ করে থাকেন। এরপর সেগুলো ইতালিতে ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ডিম আর শুক্রাণু মিলিত হয়।

এ থেকে পাওয়া ভ্রূণ ভবিষ্যতের জন্য হিমায়িত করে রাখা হয়।

আসন্ন গ্রীষ্মে নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোর শরীরে ভ্রূণ স্থানান্তর করার কথা। সব ঠিক থাকলে প্রায় ১৬ মাস পর দুই নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোর পাশে একটি শিশু গণ্ডার দেখা যাওয়ার কথা। কারণ বেড়ে ওঠার জন্য শিশু গণ্ডারকে অন্য গণ্ডারদের সাথে থাকা প্রয়োজন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement