২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, র‌্যাব মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। - ছবি : বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নাইন-ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে সন্ত্রাস দমনে তখনকার বিএনপি সরকার র‌্যাব সৃষ্টি করেছিল। তবে, তারা র‌্যাবকে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসার পর থেকে র‌্যাব জঙ্গি, সন্ত্রাস দমন, হত্যার তদন্তসহ মানবিক কাজই করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, তারা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে।

বুধবার (৩০ মার্চ) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে সেখানকার বাংলাদেশী দূতাবাস কেন জানতে পারলো না, জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু মানুষ রয়েছে। এদের কাজটি হচ্ছে বাংলাদেশে যখন একটি অস্বাভাবিক সরকার থাকে অথবা অবৈধ দখলকারী কেউ যদি থাকে তখন তারা খুব ভালো থাকে। তাদের খুব গুরুত্ব থাকে। যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান থাকে তারা ভালো থাকে না। এজন্য তারা সবসময় গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে লেগেই থাকে। যতই ভালো কাজ করুক তারা পেছনে লেগেই থাকে। কারণ, তারা ভালো দেখতে চায় না।’

সংসদ সদস্যরা চাইলে পরবর্তী সময়ে নামগুলো দিতে পারবেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা সবসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। নানান ধরনের অভিযোগ, চিঠি এই র‌্যাব সম্পর্কেও তাদের অভিযোগ। এই অপপ্রচার তারাই করেছে। ওখানকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটরের কাছে তথ্য পাঠানো, চিঠি দেয়া নানাভাবে তারা এই অপপ্রচার করে। সেখানকার আমাদের অ্যাম্বাসি সবসময় সক্রিয় ছিল। যখন এই ব্যাপার নিয়ে তারা আলোচনা করেছে তখন অ্যাম্বাসির কাউকে ঢুকতে দেয়নি। এটা আরো দুই বছর-তিন বছর আগের কথা। এর প্রক্রিয়া বহু দিন থেকেই চলছে। আমরা বারবার তাদের জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ একমাত্র দেশ এখানে র‌্যাবের কোনো সদস্য যখন অন্যায় করেছে, সাথে সাথে তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। আপনারা জানেন, আমাদের একজন মন্ত্রীর জামাই একটি অপরাধ করেছিল। মন্ত্রীর জামাই হিসেবে কিন্তু আমরা তাকে ক্ষমা করিনি। তাকে ঠিকই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। শাস্তি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ কোনো সময় অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। সে যেই হোক। আইনশৃঙ্খলা সংস্থার যে কেউ কোনো অপরাধ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। কাজেই এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু লোক আছে তারা একটু বুদ্ধিজীবী, ইন্টেলেকচুয়াল, অমুক-তমুক নানা ধরনের সংগঠন তারা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারলে তারা পয়সা জোগার করতে পারে। তাছাড়া তারা পয়সা জোগার করতে পারে না। আমরা দেখেছি ব্যাপারটা সেখানেই। এখান থেকে তাদের একটা প্রতিনিধি গেলো। সেখানে একটি সম্মেলন হলো। সেখানে আমাদের অ্যাম্বাসি বা কাউকে তারা থাকতে দেয়নি। উপস্থিত হতে দেয়নি। সেখানে আপত্তিটা আমাদের দেশের লোক করেছে। আজকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে যে বদনাম এজন্য অন্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের দেশের লোক বদনামটা করে। এই র‌্যাবের বিরুদ্ধে বদনাম তো আমার দেশের মানুষ করে যাচ্ছে। এজন্য বলার কিছু নেই। আর সেই জন্য এই স্যাংশনটা এসেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দুপুর ১২টায় তারা সরে গেলো। আন্দোলন করে জনগণের সাড়া পেলো না কেন? আমি যদি সত্যি ভোট ছিনতাই করে নিতাম তাহলে তো ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের সময়ে যেভাবে জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আন্দোলন করেছিল, দেড় মাসের মধ্যে সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিল, সেভাবে আমাদের হটাতো! মানুষ তো সেভাবে সাড়া দেয়নি। কারণ, মানুষ তো ভোট দিতে পেরেছে। ভোটের যতটুকু উন্নতি সেটা তো আওয়ামী লীগ করেছে। এই যে ধারাবাহিক গণতন্ত্র চলছে তা আমাদের দেশের কিছু কিছু লোক চায় না। তারা সবসময় একটা অস্বাভাবিক অবস্থা চায়। কারণ, অস্বাভাবিক অবস্থা থাকলে তাদের একটু গুরুত্ব বাড়ে। এই ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যাতে আসে এজন্য তারা কোনোকিছুতেই ভালো দেখে না।’

তিনি বলেন, ‘আজকে সারা বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস, তারপরে যুদ্ধ। যে কারণে সব দেশেই জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। কোন দেশে না বেড়েছে? আমেরিকায় ৮০ ভাগ দাম বেড়েছে। এক ডলারের তেল চার ডলার দিয়ে কিনতে হচ্ছে। উন্নত দেশে কত শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে গেছে, মানুষ না খেয়ে মারা গেছে! কিন্তু আমরা তো দারিদ্র্যসীমার নিচে যাইনি। আমাদের কেউ তো না খেয়ে মারা যায়নি। মানুষ তো অভাবের তাড়নায় কষ্ট পায়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা গোষ্ঠী আছে তাদের খাবার দিলেও ঘুরিয়ে খায়। যতই করুন তাদের কিছু ভালো লাগবে না। তারা বাংলাদেশের দারিদ্র্য না দেখালে এনজিওর টাকা পায় না। বন্যা না দেখালে তাদের কনসালটেন্সি আসে না। নিজেদের ক্রিম কীভাবে পাবে এটা তাদের কাছে বড় কথা। বাংলাদেশ এত এগিয়ে যাবে, এত কিছু করবে, তারা তা ভাবতেই পারে না।’

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement